আমরা আমাদের আর্টিকেলে দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় ‘পদার্থের ভৌত রাসায়নিক ধর্মসমূহ’ থেকে ‘পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন’ এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য ও চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইড ও শুষ্ক কলিচুনের মিশ্রণকে 1 : 3 ভর অনুপাতে উত্তপ্ত করে পরীক্ষাগারে অ্যামোনিয়া গ্যাস প্রস্তুত করা হয়।
পরীক্ষাগারে উৎপন্ন অ্যামোনিয়া গ্যাসকে পোড়াচুনের স্তম্ভের মধ্য দিয়ে চালনা করে জলীয় বাষ্প মুক্ত করে বায়ুর নিম্নাপসারণ দ্বারা গ্যাসজারে সংগ্রহ করা হয়।
অ্যামোনিয়া একটি বর্ণহীন, তীব্র ঝাঁজালো গন্ধযুক্ত গ্যাস, জলে অত্যন্ত দ্রাব্য। 0.88 আপেক্ষিক গুরুত্ববিশিষ্ট অ্যামোনিয়ার গাঢ় জলীয় দ্রবণকে লাইকার অ্যামোনিয়া বলে।
অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ ক্ষারধর্মী, অ্যামোনিয়ার বিজারণ ধর্ম আছে। Fe3+, Al3+ ইত্যাদি ধাতব আয়নকে NH3 জলীয় দ্রবণ থেকে হাইড্রক্সাইডরূপে অধঃক্ষিপ্ত করে। NH3 -এর সংস্পর্শে নেসলার বিকারক বাদামি বর্ণ ধারণ করে, CuSO4 দ্রবণে অতিরিক্ত NH3 যোগ করলে গাঢ় নীল বর্ণের দ্রবণ সৃষ্টি হয়।
হেবার পদ্ধতিতে, আয়রন চূর্ণ অনুঘটকের উপস্থিতিতে এবং K2O ও Al2O3 চূর্ণের মিশ্রণ উদ্দীপকরূপে ব্যবহার করে 450°C উষ্ণতা ও 200 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে N2 ও H2 (1 : 3 আয়তন অনুপাতে) গ্যাসের প্রত্যক্ষ সংযোগে অ্যামোনিয়া গ্যাস উৎপন্ন হয়।
প্রায় 175 বায়ুমণ্ডলীয় চাপ ও 170-190°C উষ্ণতায় বদ্ধপাত্রে তরল NH3 ও CO2 গ্যাসের বিক্রিয়া ঘটিয়ে ইউরিয়া [CO(NH2)2] -এর শিল্পোৎপাদন করা হয়।
পরীক্ষাগারে বিকারকরূপে গ্যাসীয় NH3 ও অ্যামোনিয়ার জলীয় দ্রবণ এবং রেফ্রিজারেটর, কোল্ড স্টোরেজ ও বরফ তৈরির কারখানায় হিমায়করূপে তরল NH3 ব্যবহৃত হয়। নাইট্রোজেনঘটিত জৈব সাররূপে, ইউরিয়া স্টিবামিন ও বারবিটিউরেট ওষুধ প্রস্তুতিতে এবং নাইট্রোসেলুলোজ, সেলোফেন প্রভৃতির শিল্পোৎপাদনে ইউরিয়া ব্যবহৃত হয়।
সাধারণ উষ্ণতায় ফেরাস সালফাইডের সঙ্গে লঘু H2SO4 -এর বিক্রিয়ায় পরীক্ষাগারে H2S গ্যাস প্রস্তুত করা হয়। বায়ু অপেক্ষা ভারী বলে গ্যাসটিকে বায়ুর ঊর্ধ্বাপসারণ দ্বারা গ্যাসজারে সংগ্রহ করা হয়। পরীক্ষাগারে প্রয়োজনমতো নিরবচ্ছিন্নভাবে H2S পাওয়ার জন্য কিপ্-যন্ত্র ব্যবহার করা হয়।
হাইড্রোজেন সালফাইড (H2S) একটি বর্ণহীন, পচা ডিমের মতো গন্ধযুক্ত বিষাক্ত গ্যাস। H2S -এর বিষক্রিয়া ওর রাসায়নিক ধর্মের সঙ্গে সম্পর্কিত।
H2S -এর জলীয় দ্রবণ মৃদু অম্লধর্মী। H2S -এর বিজারণ ধর্ম আছে, জলীয় দ্রবণে বিভিন্ন ধাতব আয়নকে সালফাইড যৌগরূপে অধঃক্ষিপ্ত করে। ক্ষারীয় সোডিয়াম নাইট্রোপুসাইডের দ্রবণ H2S -এর সংস্পর্শে বেগুনি বর্ণ ধারণ করে।
বিভিন্ন সালফাইড ও বাইসালফাইড যৌগ প্রস্তুতিতে, পরীক্ষাগারে বিজারক রূপে ও অজৈব লবণের গুণগত ও পরিমাণগত বিশ্লেষণে H2S ব্যবহৃত হয়।
সোডিয়াম নাইট্রাইট ও অ্যামোনিয়াম ক্লোরাইডের মিশ্রণের গাঢ় জলীয় দ্রবণকে সাবধানে উত্তপ্ত করে পরীক্ষাগারে নাইট্রোজেন গ্যাস প্রস্তুত করা হয়। উৎপন্ন নাইট্রোজেনকে জলের নিম্ন অপসারণ দ্বারা গ্যাসজারে সংগ্রহ করা হয়।
নাইট্রোজেন একটি বর্ণহীন, গন্ধহীন ও স্বাদহীন গ্যাস, জলে এর দ্রাব্যতা খুব কম। তরল নাইট্রোজেনের স্ফুটনাঙ্ক -195.8°C।
N2 সাধারণ উষ্ণতায় রাসায়নিকভাবে নিষ্ক্রিয়, কারণ দুটি N-পরমাণু পরস্পর সমযোজী ত্রি-বন্ধন দ্বারা যুক্ত থাকে যাকে সাধারণ রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তি দ্বারা বিভাজিত করা যায় না।
বিভিন্ন নাইট্রোজেন-ঘটিত রাসায়নিক সার, যেমন – অ্যামোনিয়াম সালফেট, অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, ইউরিয়া, নাইট্রোলিম ইত্যাদি তৈরিতে N2 ব্যবহৃত হয়। NH3 ও HNO3 -এর শিল্পোৎপাদনেও N2 ব্যবহৃত হয়।
কৃত্রিম বা প্রাকৃতিক উপায়ে বায়ুমণ্ডলের নাইট্রোজেনকে নাইট্রোজেন-ঘটিত যৌগে রূপান্তরিত করার প্রক্রিয়াকে নাইট্রোজেনের আবদ্ধীকরণ বলে।
HCl -এর শিল্প প্রস্তুতি – প্রায় সম-আয়তন H2 ও Cl2 গ্যাসের মিশ্রণ একটি সিলিকানির্মিত প্রকোষ্ঠে দহনের ফলে HCl গ্যাস উৎপন্ন হয়। শীতলীকৃত HCl গ্যাসকে জলে শোষিত করে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিডের সম্পৃক্ত দ্রবণ প্রস্তুত করা হয়।
HNO3 -এর শিল্প প্রস্তুতি – অস্ওয়াল্ড পদ্ধতিতে HNO3 উৎপাদনে প্রথমে বায়ুর O2 -এর উপস্থিতিতে 5-7 বায়ুমণ্ডলীয় চাপে ও 700°-800°C উষ্ণতায় অ্যামোনিয়ার অনুঘটকীয় জারণের ফলে NO উৎপন্ন হয়। উৎপন্ন NO -কে O2 দ্বারা NO2(g) -তে জারিত করা হয়। NO2 গ্যাসকে জলে শোষণ করিয়ে HNO3 প্রস্তুত করা হয়।
H2SO4 -এর শিল্প প্রস্তুতি – স্পর্শ পদ্ধতিতে H2SO4 প্রস্তুত করতে প্রথমে সালফার বা আয়রন পাইরাইটস্ (FeS2) -কে বায়ুতে দহন করে SO2 উৎপন্ন করা হয়। SO2, V2O3 বা প্ল্যাটিনাম চূর্ণ অনুঘটকের উপস্থিতিতে বায়ুর O2 দ্বারা জারিত হয়ে SO3 উৎপন্ন করে। প্রাপ্ত SO3 -কে 98% গাঢ় H2SO4 -এ শোষণ করিয়ে ওলিয়াম (H2S2O7) প্রস্তুত করা হয়, যার সঙ্গে প্রয়োজনমতো জল মিশিয়ে H2SO4 পাওয়া যায়।
Class 10 Physical Science – Notes for All Chapters
আমরা আমাদের আর্টিকেলে দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় ‘পদার্থের ভৌত রাসায়নিক ধর্মসমূহ’ থেকে ‘পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়ন’ এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই বিষয়সংক্ষেপ দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য বা চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই বিষয়সংক্ষেপ দশম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।