আমরা আমাদের আর্টিকেলে দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায়ের ‘পদার্থের ভৌত রাসায়নিক ধর্মসমূহ‘ থেকে ‘ধাতুবিদ্যা’ এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করব। এই অধ্যায়টি মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রায়শই এই অধ্যায় থেকে পরীক্ষায় প্রশ্ন আসে। আশা করছি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য সহায়ক এবং উপকারি হবে।

ব্যাবহারিক ক্ষেত্রে লোহা, কপার, জিংক, অ্যালুমিনিয়াম প্রভৃতি ধাতুর গুরুত্ব অপরিসীম। নর্দমার নল, রেলিং, কড়াই প্রভৃতি তৈরিতে কাস্ট আয়রন; রেলের বগি, ইঞ্জিন, চাকা, যুদ্ধ-বিমান, ছুরি, কাঁচি ও অস্ত্রোপচারের যন্ত্রপাতি প্রস্তুতিতে স্টিল; মোটর ডায়নামো, ট্রান্সফর্মার, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি প্রস্তুতিতে তামা; তড়িৎকোশ ও নির্জল ব্যাটারি প্রস্তুতিতে জিংক এবং বিমান ও মোটরগাড়ির কাঠামো, রান্নার বাসনপত্র, বৈদ্যুতিক তার ও কেবল প্রস্তুতিতে অ্যালুমিনিয়াম ব্যবহৃত হয়।
খনিজ – ভূ-গর্ভে বা ভূ-ত্বকে প্রাপ্ত অজৈব পদার্থসমূহ যাদের মধ্যে এক বা একাধিক ধাতু মুক্ত অবস্থায় বা যৌগরূপে বিভিন্ন অশুদ্ধির সঙ্গে মিশ্রিত অবস্থায় থাকে, তারা খনিজ নামে পরিচিত।
আকরিক – যেসব খনিজ থেকে সহজে ও লাভজনক উপায়ে ধাতু নিষ্কাশন করা সম্ভব, সেই খনিজগুলি হল ওই ধাতুর আকরিক।
সব আকরিককে খনিজ বলা যায়, কিন্তু সব খনিজই আকরিক নয়।
বিভিন্ন ধাতু ও তাদের প্রধান আকরিকগুলি নিম্নরূপ –
ধাতু | প্রধান আকরিক |
আয়রন | হিমাটাইট (Fe2O3) ও ম্যাগনেটাইট (Fe3O4) |
কপার | কপার পাইরাইট্স্ (Cu2S⋅Fe2S3 বা CuFeS2) ও কিউপ্রাইট (Cu2O) |
জিংক | জিংক ব্লেন্ড (ZnS) ও ক্যালামাইন (ZnCO3) |
অ্যালুমিনিয়াম | বক্সাইট (Al2O3⋅2H2O) ও ক্রায়োলাইট (AlF3⋅3NaF বা Na3AlF6) |
ধাতু-সংকর বা সংকর ধাতু – দুই বা ততোধিক ধাতুর সংযোগের ফলে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ধাতুর সঙ্গে অধাতব মৌলের সংযোগের ফলে, উপাদান মৌলগুলি থেকে পৃথক বৈশিষ্ট্যবাহী এবং মুখ্যত ধাতুর মতো আচরণকারী যে সমসত্ত্ব বা অসমসত্ত্ব মিশ্রণ উৎপন্ন হয়, তাকে ধাতু-সংকর বা সংকর ধাতু বলে।
ধাতুর কাঠিন্য বৃদ্ধি, নমনীয়তা, সম্প্রসারণশীলতা, ঘাত-সহনশীলতা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ ও জলবায়ুর হাত থেকে ধাতুকে রক্ষা করার জন্য সংকর ধাতু তৈরি করা হয়।
বিভিন্ন ধাতু ও তাদের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সংকর ধাতু নিম্নরূপ –
মূল-ধাতু | সংকর-ধাতু |
আয়রন | স্টেইনলেস স্টিল (Fe – 73%, Cr – 18%, Ni – 8%, সামান্য C), ম্যাঙ্গানিজ স্টিল (Fe – 85%, Mn – 14%, সামান্য C) |
অ্যালুমিনিয়াম | ডুরালুমিন (Al – 95%, Cu – 4%, Mn – 0.5% ও Mg – 0.5%), ম্যাগনেলিয়াম (Al – 90-95%, Mg – 5-10%) |
কপার ও জিংক | পেতল (Cu – 60-80%, Zn – 20-40%), ব্রোঞ্জ (Cu – 80%, Sn – 18%, Zn – 2%), জার্মান সিলভার (Cu – 25-30%, Zn – 25-30%, Ni – 40-50%), গান মেটাল (Cu – 87%, Sn – 10%, Zn – 2%, Pb – 1%) |
ধাতব অক্সাইড যৌগ থেকে অক্সিজেন অপসারণ করে ধাতু নিষ্কাশন একটি বিজারণ প্রক্রিয়া।
থার্মিট পদ্ধতি – উচ্চ উষ্ণতায় অ্যালুমিনিয়াম দ্বারা আয়রন, ক্রোমিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ইত্যাদি ধাতুর অক্সাইডকে বিজারিত করে সংশ্লিষ্ট ধাতুগুলির নিষ্কাশন পদ্ধতিকে গোল্ডস্মিডের থার্মিট পদ্ধতি বলে। 3 ভাগ Fe2O3 ও 1 ভাগ Al -চূর্ণের মিশ্রণকে থার্মিট মিশ্রণ বলা হয়।
ধাতুর সক্রিয়তা সারি – ধাতুগুলিকে তাদের ক্রমহ্রাসমান সক্রিয়তা অনুসারে পরপর উপর থেকে নীচে সাজিয়ে যে সারি পাওয়া যায়, তাকে ধাতুর সক্রিয়তা সারি বলে।
সক্রিয়তা সারিতে অপেক্ষাকৃত ওপরে থাকা কোনো ধাতু সারির নীচে অবস্থিত ধাতুর লবণের জলীয় দ্রবণ থেকে সংশ্লিষ্ট ধাতুটিকে অধঃক্ষিপ্ত করতে পারে। যেমন – Zn বা Fe, CuSO4 দ্রবণ থেকে Cu -কে অধঃক্ষিপ্ত করে।
সক্রিয়তা সারির মধ্যবর্তী স্থানে থাকা ধাতুগুলিকে (যেমন – Zn, Fe প্রভৃতি) কার্বন-বিজারণ পদ্ধতিতে নিষ্কাশিত করা হয়।
সক্রিয়তা সারিতে ওপরের দিকে থাকা ধাতুগুলির গলিত লবণের তড়িদ্বিশ্লেষণ দ্বারা ধাতুগুলির নিষ্কাশন করা হয়।
আয়রন-নির্মিত কোনো দ্রব্যকে আর্দ্র বাতাসে উন্মুক্ত রেখে দিলে সাধারণ উষ্ণতাতেই আয়রনের ওপর লালচে বাদামি বর্ণের সোদক ফেরিক অক্সাইডের (Fe2O3⋅xH2O) আস্তরণ পড়ে, যাকে মরচে বলে।
\(Cl^-,SO_4^{2-}\) ইত্যাদি আয়নের উপস্থিতিতে লোহায় দ্রুত মরচে পড়ে। সমুদ্রগামী জাহাজে এবং মাটি ও জলের নীচের পাইপলাইনের ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুতর সমস্যা।
মরচে প্রতিরোধের কয়েকটি প্রচলিত পদ্ধতি হল আয়রন নির্মিত বস্তুর ওপর রং বা বার্নিশের প্রলেপ দেওয়া, গ্যালভানাইজেশন, আয়রনের বস্তুর সাথে Mg -ব্লক যুক্ত করা ইত্যাদি। Mg -এর তড়িৎ-ধনাত্মকতা, Fe অপেক্ষা বেশি হওয়ায় এটি Fe -এর আগে জারিত হয়ে আয়রনে মরচে পড়া প্রতিরোধ করে।
Al -নির্মিত বস্তু আর্দ্র বায়ুর সংস্পর্শে এলে তার ওপর Al2O3 -এর সূক্ষ্ম অপরিবাহী স্তর গঠিত হয়, যা একে পুনরায় ক্ষয় পাওয়া থেকে রক্ষা করে।
দীর্ঘদিন খোলা হাওয়ায় রাখলে তামা বা তামার সংকর ধাতুনির্মিত বস্তুতে সবুজ বর্ণের আস্তরণ সৃষ্টি হয়।
অম্ল স্বাদযুক্ত খাদ্য বা ফল Al, Zn বা Cu -নির্মিত পাত্রে রাখা বা প্রসেসিং করা উচিত নয়, কারণ এর ফলে খাদ্যে বিষক্রিয়া দেখা দেয়।
Class 10 Physical Science – Notes for All Chapters
আমরা আমাদের আর্টিকেলে দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায়ের ‘পদার্থের ভৌত রাসায়নিক ধর্মসমূহ‘ থেকে ‘ধাতুবিদ্যা’ সম্পর্কিত বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই বিষয়টি মাধ্যমিক এবং চাকরির পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রায়শই এই ধরনের প্রশ্ন পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য উপকারী হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকে, টেলিগ্রামে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন; আমরা যথাসম্ভব দ্রুত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করব। এছাড়া, পোস্টটি আপনার প্রিয়জনদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাদের এটি সহায়ক হতে পারে। ধন্যবাদ।