আমরা আমাদের আর্টিকেলে দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় ‘পদার্থের ভৌত রাসায়নিক ধর্মসমূহ‘ থেকে ‘আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন’ এর বিষয় সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

রাসায়নিক বন্ধন – যোজ্যতা-কক্ষে ইলেকট্রন গ্রহণ অথবা যোজ্যতা-কক্ষ থেকে ইলেকট্রন বর্জন অথবা ইলেকট্রন-জোড় গঠনের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী পরমাণুগুলির সর্ববহিস্থ কক্ষে নিকটতম নিষ্ক্রিয় মৌলের ইলেকট্রন-বিন্যাস অর্জনের ফলে যে আকর্ষণ বলের সৃষ্টি হয় তাকে রাসায়নিক বন্ধন বলে।
অষ্টক সূত্র – রাসায়নিকভাবে সুস্থিত হওয়ার জন্য বিভিন্ন মৌল (H, Li ও Be ছাড়া) নিজ নিজ যোজ্যতা-কক্ষে ইলেকট্রনের গ্রহণ বা যোজ্যতা-কক্ষ থেকে ইলেকট্রনের বর্জন অথবা ইলেকট্রন-জোড় গঠনের মাধ্যমে নিকটতম নিষ্ক্রিয় মৌলের ইলেকট্রন-বিন্যাস তথা অষ্টক (শেষ কক্ষে 8টি ইলেকট্রনের উপস্থিতি) লাভের প্রবণতা দেখায় – একেই যোজ্যতার অষ্টক সূত্র বলে। যদিও সমস্ত যৌগের ক্ষেত্রে অষ্টক সূত্র প্রয়োগ করা যায় না।
দ্বৈত সূত্র – পর্যায়-সারণিতে হিলিয়ামের নিকটবর্তী মৌলগুলি (H, Li, Be) রাসায়নিকভাবে সুস্থিত হওয়ার জন্য তাদের পরমাণুর ইলেকট্রনীয় কক্ষে ইলেকট্রনের গ্রহণ বা কক্ষ থেকে ইলেকট্রনের বর্জন অথবা ইলেকট্রন-জোড় গঠনের মাধ্যমে He-পরমাণুর মতো ইলেকট্রন-বিন্যাস (একমাত্র কক্ষে 2টি ইলেকট্রন) লাভের প্রবণতা দেখায় – একে যোজ্যতার দ্বৈত সূত্র বলে।
তড়িযোজ্যতা – দুটি ভিন্ন মৌলের পরমাণু ইলেকট্রন ত্যাগ বা গ্রহণের মাধ্যমে বিপরীত তড়িৎধর্মী আয়নে পরিণত হওয়ার পর স্থির-তাড়িতিক আকর্ষণ বলের প্রভাবে পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে যৌগ গঠন করার ক্ষমতাকে তড়িৎযোজ্যতা বা আয়নীয় যোজ্যতা বলে। তড়িৎযোজ্যতার ফলে পরমাণু দুটির মধ্যে যে বন্ধনের সৃষ্টি হয়, তাকে তড়িৎযোজী বা আয়নীয় বন্ধন এবং আয়নীয় বন্ধন সমন্বিত যৌগকে আয়নীয় যৌগ বলে।
আয়নীয় যৌগের বৈশিষ্ট্য – আয়নীয় যৌগে স্বতন্ত্র অণুর অস্তিত্ব নেই। আয়নীয় যৌগগুলি কঠিন কেলাসাকার হয়, গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্কের মান উচ্চ হয়, কঠিন অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে না কিন্তু গলিত বা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে। যৌগগুলি ধ্রুবীয় দ্রাবকে দ্রবীভূত হয় এবং জলীয় দ্রবণে দ্রুতগতিতে বিক্রিয়া করে।
সমযোজ্যতা – রাসায়নিক বিক্রিয়ার সময় একই বা ভিন্ন মৌলের দুই বা ততোধিক পরমাণু এক বা একাধিক ইলেকট্রন-জোড় সমভাবে ব্যবহার করে নিকটতম নিষ্ক্রিয় মৌলের পরমাণুর মতো ইলেকট্রন-বিন্যাস লাভের প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে রাসায়নিকভাবে মিলিত হওয়ার যে ক্ষমতা অর্জন করে, তাকে সমযোজ্যতা বলে। সমযোজ্যতার ফলে দুটি পরমাণুর মধ্যে এক বা একাধিক ইলেকট্রন-জোড় সমভাবে ব্যবহৃত হয়ে যে রাসায়নিক বন্ধন গঠিত হয়, তাকে সমযোজী বন্ধন বলে। সমযোজ্যতার মাধ্যমে সৃষ্ট মৌল বা যৌগের অণুকে সমযোজী অণু বলে।
সমযোজী বন্ধনের প্রকারভেদ – সমযোজী বন্ধন তিন প্রকার। বন্ধন সৃষ্টিকারী পরমাণুদুটির মধ্যে 1টি, 2টি ও 3টি ইলেকট্রন-জোড় সমভাবে ব্যবহৃত হয়ে যথাক্রমে সমযোজী এক-বন্ধন, দ্বি-বন্ধন ও ত্রি-বন্ধনের সৃষ্টি হয়।
সমযোজী যৌগের বৈশিষ্ট্য – সমযোজী যৌগগুলি একক অণু-রূপে অবস্থান করে। এই যৌগগুলি কঠিন, তরল বা গ্যাসীয় অবস্থায় থাকতে পারে, এদের গলনাঙ্ক ও স্ফুটনাঙ্ক সাধারণত কম হয় এবং এরা তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে না। এই যৌগগুলি সাধারণত অধ্রুবীয় দ্রাবকে দ্রবীভূত হয় ও ধীরগতিতে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটায়।
আয়নীয় যৌগে বিচ্ছিন্ন অণুর অস্তিত্ব নেই বলে আণবিক ভরের পরিবর্তে সংকেত ভর ব্যবহার করা হয়। সমযোজী যৌগের ক্ষেত্রে আণবিক ভর ও সংকেত ভর অভিন্ন।
কঠিন সোডিয়াম ক্লোরাইড কেলাসে বহু Na+ ও Cl– আয়ন পরস্পর স্থিরতড়িৎ আকর্ষণে আবদ্ধ হয়ে পুঞ্জীভূত অবস্থায় থাকে। মূলত সুস্থিত ত্রিমাত্রিক কেলাস-জালক উৎপন্ন হওয়ার জন্য সোডিয়াম ক্লোরাইড বা অন্যান্য আয়নীয় যৌগের গঠন সম্ভবপর হয়।
ক্যালশিয়াম অক্সাইড, ম্যাগনেশিয়াম ক্লোরাইড, সোডিয়াম ফ্লুরাইড, লিথিয়াম হাইড্রাইড প্রভৃতি যৌগগুলি তড়িৎযোজ্যতার ফলে সৃষ্টি হয়। LiH গঠনকালে প্রতিটি আয়নের সর্ববহিস্থ কক্ষে 2টি ইলেকট্রন থাকে, অর্থাৎ এক্ষেত্রে অষ্টক সূত্র লঙ্ঘিত হয়।
লুইস-ডট ডায়াগ্রাম – ইলেকট্রনকে বিন্দু দিয়ে চিহ্নিত করে একটি সমযোজী বন্ধনের জন্য দুটি পরমাণুর মাঝে একজোড়া বিন্দু ব্যবহার করে সমযোজী যৌগের গঠনকে যেভাবে প্রকাশ করা হয়, তাকে লুইস-ডট ডায়াগ্রাম বলে। এই ডায়াগ্রামের ক্ষেত্রে কেবল যোজক ইলেকট্রন-গুলিকেই দেখানো হয়।
সমযোজ্যতার ফলে H2, N2, O2, Cl2 প্রভৃতি সমযোজী মৌলিক অণু এবং NH3, CO2, CH4, HF প্রভৃতি সমযোজী যৌগিক অণুর সৃষ্টি হয়। H2, F2, HF, HCl, H2O, NH3, CH4 প্রভৃতি অণুতে সমযোজী এক-বন্ধন; CO2, C2H4 প্রভৃতি অনুতে সমযোজী দ্বি-বন্ধন এবং N2, C2H2 প্রভৃতি অণুতে সমযোজী ত্রি-বন্ধন উপস্থিত।
O2 অণুর লুইস-ডট ডায়াগ্রাম, O2 অণুর গঠন-সম্পর্কিত পরীক্ষালব্ধ ফলাফলের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়, তাই একে বর্জন করা হয়। প্রকৃতপক্ষে O2 অণুর এমন কোনো লুইস-ডট ডায়াগ্রাম অঙ্কন করা সম্ভব নয় যা পরীক্ষালব্ধ ফলাফলের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।
Class 10 Physical Science – Notes for All Chapters
আমরা আমাদের আর্টিকেলে দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায় ‘পদার্থের ভৌত রাসায়নিক ধর্মসমূহ‘ থেকে ‘আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধন’ এর বিষয় সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য বা চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি দশম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।