আমরা আমাদের আর্টিকেলে দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায়ের ‘পদার্থের ভৌত রাসায়নিক ধর্মসমূহ‘ থেকে ‘তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া’ এর কিছু দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য ও চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

একটি ধারণা মানচিত্রের (concept map) সাহায্যে তড়িৎ-পরিবাহী পদার্থের শ্রেণিবিভাগ দেখাও।

তড়িদ্বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহের ফলে তড়িদ্বিশ্লেষ্যের রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে – ব্যাখ্যা করো।
গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থগুলি আয়নে বিয়োজিত হয়। এই অবস্থায় তড়িদ্বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করলে ক্যাটায়নগুলি ক্যাথোডে গিয়ে উপযুক্ত সংখ্যক ইলেকট্রন গ্রহণ করে এবং অ্যানায়নগুলি অ্যানোডে গিয়ে ইলেকট্রন ত্যাগ করে প্রশম পরমাণু বা মূলকে পরিণত হয়। এভাবে ক্যাথোডে ও অ্যানোডে নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থ উৎপন্ন হয় যাদের ধর্ম তড়িদ্বিশ্লেষ্যের ধর্ম থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। সুতরাং, তড়িদ্বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহের ফলে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে। যেমন – অ্যাসিডমিশ্রিত জলের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ পাঠালে ক্যাথোডে হাইড্রোজেন গ্যাস ও অ্যানোডে অক্সিজেন গ্যাস উৎপন্ন হয়, যাদের ধর্ম জলের ধর্ম থেকে সম্পূর্ণ পৃথক।
তড়িদ্বিশ্লেষণের সময় গলিত বা দ্রবীভূত তড়িদ্বিশ্লেষ্যের দ্রবণে অসংখ্য ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন থাকলেও দ্রবণটি তড়িৎ-প্রশম হয় কীভাবে?
তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থ গলিত অবস্থায় অথবা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নে বিয়োজিত হয়। দ্রবণে ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নের সংখ্যা সমান নাও হতে পারে। কিন্তু ক্যাটায়নগুলির মোট ধনাত্মক আধান, অ্যানায়নগুলির মোট ঋণাত্মক আধানের সমান হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, \(Na_2SO_4\) -এর বিয়োজনে 2টি \(Na^+\) আয়ন এবং 1টি \(SO_4^{2-}\) আয়ন উৎপন্ন হয়। কিন্তু, এক্ষেত্রে ক্যাটায়নের মোট ধনাত্মক আধান = 2 × (+1) = +2 এবং অ্যানায়নের মোট ঋণাত্মক আধান = 1 × (-2) = -2, অর্থাৎ আধানদ্বয়ের প্রকৃতি ভিন্ন হলেও মান সমান। এছাড়া তড়িদ্বিশ্লেষণের সময় ক্যাটায়নগুলি একক সময়ে ক্যাথোডে যতগুলি ইলেকট্রন গ্রহণ করে অ্যানায়নগুলি ঠিক ততগুলি ইলেকট্রন অ্যানোডে মুক্ত করে। ফলে সামগ্রিকভাবে তড়িদ্বিশ্লেষ্য দ্রবণটি তড়িৎ-প্রশম হয়।

তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করো।
তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি নিম্নরূপ –
- তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থ গলিত অবস্থায় বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় আয়নে বিয়োজিত হয়। ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নগুলি সমস্ত দ্রবণ জুড়ে স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে।
- গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থ তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে। তড়িৎ পরিবহণের ফলে তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থ রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে নতুন পদার্থ উৎপন্ন করে।
- গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের আয়নগুলির চলাচলের ফলেই তড়িৎ পরিবহণ সম্ভব হয়।
- তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের তড়িৎ পরিবাহিতা-তড়িদ্বিশ্লেষ্যের প্রকৃতি, দ্রবণে তড়িদ্বিশ্লেষ্যের গাঢ়ত্ব ও উষ্ণতার ওপর নির্ভর করে।
কোনো দ্রবণে একাধিক ক্যাটায়ন ও একাধিক অ্যানায়ন উপস্থিত থাকলে তড়িদ্বিশ্লেষণের সময় তাদের কোনটি আগে ক্যাথোডে ও কোনটি আগে অ্যানোডে মুক্ত হবে তা কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভর করে?
কোনো দ্রবণে একাধিক ক্যাটায়ন ও একাধিক অ্যানায়ন উপস্থিত থাকলে তড়িদ্বিশ্লেষণের সময় তাদের কোনটি আগে ক্যাথোডে ও কোনটি আগে অ্যানোডে মুক্ত হবে তা নিম্নলিখিত বিষয়গুলির ওপর নির্ভর করে –
তড়িৎ-রাসায়নিক শ্রেণিতে অবস্থান – যে ধাতুগুলি তড়িৎ-রাসায়নিক শ্রেণিতে যত নীচের দিকে আছে (অর্থাৎ কম তড়িৎ-ধনাত্মক) তাদের ক্যাটায়নগুলির ক্যাথোডে মুক্ত হওয়ার প্রবণতা তত বেশি। ক্যাথোডে মুক্ত হওয়ার প্রবণতা অনুযায়ী ধাতব আয়নগুলিকে নীচের ক্রম অনুযায়ী সাজানো যায় –
\( Ag^+>Cu^{2+}>H^+>Fe^{2+}>Zn^{2+}>Al^{3+}>Mg^{2+}>Na^+>Ca^{2+}>K^+ \\\)অ্যানোডে মুক্ত হওয়ার প্রবণতা অনুসারে অ্যানায়নগুলিকেও একটি পৃথক শ্রেণিতে সাজানো যায় –
\(OH^->I^->Br^->Cl^->NO_{3\;}^->\;SO_4^->F^-\\\)দ্রবণে বিভিন্ন আয়নের আপেক্ষিক গাঢ়ত্ব – তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের দ্রবণে একাধিক আয়নের মধ্যে কোনো বিশেষ আয়নের গাঢ়ত্ব খুব বেশি হলে, সক্রিয়তা শ্রেণিতে তার অবস্থানকে উপেক্ষা করেই ওই আয়নের তড়িদ্দ্বারে মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা বাড়ে।
তড়িদ্দ্বারের প্রকৃতি – তড়িদ্বিশ্লেষণে কোন্ পদার্থ তড়িদ্দ্বারে মুক্ত হবে, তা অনেকটা নির্ভর করে ব্যবহৃত তড়িদ্দ্বারের প্রকৃতির উপর।
তীব্র তড়িদ্বিশ্লেষ্য ও মৃদু তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের পার্থক্য উল্লেখ করো।
তীব্র ও মৃদু তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের পার্থক্যগুলি নিম্নরূপ –
বিষয় | তীব্র তড়িদ্বিশ্লেষ্য | মৃদু তড়িদ্বিশ্লেষ্য |
তড়িৎ-পরিবাহিতা | এই পদার্থগুলি তড়িতের সুপরিবাহী। | এই পদার্থগুলির তড়িৎ-পরিবাহিতা তুলনামূলকভাবে কম। |
দ্রবণে আয়নের সংখ্যা | গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় সম্পূর্ণরূপে বিয়োজিত হয়ে প্রচুর সংখ্যক আয়ন উৎপন্ন করে। | দ্রবণে আংশিকরূপে বিয়োজিত হয়ে অল্প সংখ্যক আয়ন উৎপন্ন করে। |
প্রকৃতি | এগুলি সাধারণত তড়িৎযোজী যৌগ। যেমন – NaCl, NaOH, ইত্যাদি। ব্যতিক্রম – HCl সমযোজী হলেও এর জলীয় দ্রবণ তীব্র তড়িদ্বিশ্লেষ্য। | এগুলি সাধারণত সমযোজী যৌগ। যেমন – অ্যামোনিয়া (NH3), অ্যাসিটিক অ্যাসিড (CH3COOH) প্রভৃতি। |
দ্রবণে উপাদান কণিকা | দ্রবণে উপাদান কণিকা হিসেবে আয়ন উপস্থিত থাকে। | দ্রবণে উপাদান কণিকা হিসেবে আয়ন ও অবিয়োজিত অণু উপস্থিত থাকে। |
তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের তড়িৎ-পরিবহণ ক্ষমতা কোন কোন বিষয়ের উপর নির্ভর করে?
তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের তড়িৎ-পরিবহণ ক্ষমতা নিম্নলিখিত বিষয়গুলির উপর নির্ভর করে –
- তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের প্রকৃতি – তীব্র তড়িদ্বিশ্লেষ্যের ক্ষেত্রে অণুগুলি সম্পূর্ণরূপে বিয়োজিত হয় বলে গলিত অবস্থায় বা দ্রবণে আয়নের সংখ্যা বেশি হয় ও তার ফলে তড়িৎ-পরিবহণ ক্ষমতাও বেশি হয়। মৃদু তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থ আংশিকভাবে বিয়োজিত হয়ে অল্প সংখ্যক আয়ন মুক্ত করে, তাই এক্ষেত্রে তড়িৎ-পরিবহণ ক্ষমতা তুলনায় কম হয়।
- তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের গাঢ়ত্ব – দ্রবণে তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের গাঢ়ত্ব যত বেশি হয় আয়ন সংখ্যাও তত বৃদ্ধি পায়, ফলে তড়িৎ-পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায়।
- উষ্ণতা – উষ্ণতা বৃদ্ধির ফলে আয়নগুলির গতিশক্তি বৃদ্ধি পায়, এর ফলে ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন দ্রুত ক্যাথোডে ও অ্যানোডে পৌঁছাতে পারে। ফলে তড়িৎ-পরিবহণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
তড়িদ্বিশ্লেষ্য ও তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থের পার্থক্য লেখো।
তড়িদ্বিশ্লেষ্য ও তড়িৎ-অবিশ্লেষ্যের পার্থক্যগুলি হল –
তড়িদ্বিশ্লেষ্য | তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য |
প্রধানত তড়িৎযোজী যৌগ এবং কিছু সমযোজী যৌগ (যেমন – HCl) জলীয় দ্রবণে তড়িদ্বিশ্লেষ্য-রূপে আচরণ করে। | তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থগুলি প্রধানত সমযোজী যৌগ। |
তড়িদ্বিশ্লেষ্যষ্যগুলি সাধারণত ধ্রুবীয় দ্রাবকে (যেমন – জল) দ্রাব্য। | সাধারণত ধ্রুবীয় দ্রাবকে অদ্রাব্য। ব্যতিক্রম – চিনি, গ্লুকোজ ইত্যাদি তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য হলেও জলে দ্রাব্য। |
গলিত অবস্থায় বা ধ্রুবীয় দ্রাবকে তড়িদ্বিশ্লেষ্যগুলি আয়ন উৎপন্ন করে। | গলিত অবস্থায় বা ধ্রুবীয় দ্রাবকে তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থগুলি আয়ন উৎপন্ন করে না। |
গলিত অবস্থায় বা দ্রবণে তড়িৎ পরিবহণে সক্ষম। | গলিত অবস্থায় বা দ্রবণে তড়িৎ পরিবহণে অক্ষম। |
গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎপ্রবাহের দ্বারা তড়িদ্বিশ্লেষ্যগুলি রাসায়নিকভাবে বিশ্লিষ্ট হয়। | তড়িৎ পরিবাহী নয়, তাই তড়িৎপ্রবাহের ফলে রাসায়নিকভাবে বিশ্লিষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা নেই। |
তড়িৎ-বিয়োজন ও তাপীয়-বিয়োজনের পার্থক্য লেখো।
তড়িৎ-বিয়োজন ও তাপীয়-বিয়োজনের পার্থক্যগুলি হল –
তড়িৎ-বিয়োজন | তাপীয়-বিয়োজন |
এক্ষেত্রে গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহের ফলে পদার্থগুলি ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নে বিশ্লিষ্ট হয়। যেমন – \(\underset{\left(Melted\;or\;dissolved\right)}{NaCl}\overset{electric\;current}\rightleftharpoons Na^++Cl^-\) | এক্ষেত্রে তাপের প্রভাবে পদার্থগুলি বিশ্লিষ্ট হয়ে রাসায়নিক পরিবর্তন সম্পন্ন হয়। যেমন – \(CaCO_3\overset\bigtriangleup\rightleftharpoons CaO+CO_2\) |
উৎপন্ন পদার্থগুলি সর্বদা আধানযুক্ত হয় যাদের আয়ন বলে। | উৎপন্ন পদার্থগুলি সর্বদা আধানবিহীন হয়। |
উৎপন্ন ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নগুলিকে কোনো অবস্থাতেই পৃথক করা যায় না। | উৎপন্ন পদার্থগুলিকে সহজেই পৃথক করা যায়। |
কেবলমাত্র তড়িৎযোজী পদার্থের তড়িৎ-বিয়োজন ঘটে। ব্যতিক্রম – HCl সমযোজী হলেও জলীয় দ্রবণে এর তড়িৎ-বিয়োজন ঘটে H+ ও Cl– আয়ন উৎপন্ন হয়। | তড়িৎযোজী বা সমযোজী উভয় প্রকার পদার্থেরই তাপীয়-বিয়োজন ঘটতে পারে। |
উদাহরণসহ তড়িদ্বিশ্লেষণের আয়নীয় ব্যাখ্যা দাও।
গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত তড়িদ্বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করলে তড়িদ্বিশ্লেষ্যের বিয়োজনে উৎপন্ন ক্যাটায়নগুলি ক্যাথোডের অভিমুখে এবং অ্যানায়নগুলি অ্যানোডের অভিমুখে গমন করে। ক্যাটায়নগুলি ক্যাথোডের সংস্পর্শে এসে উপযুক্ত সংখ্যক ইলেকট্রন গ্রহণ করে এবং অ্যানায়নগুলি অ্যানোডের সংস্পর্শে এসে উপযুক্ত সংখ্যক ইলেকট্রন বর্জন করে প্রশম পরমাণু বা মূলকে পরিণত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, গ্রাফাইট অ্যানোড ও আয়রন ক্যাথোড ব্যবহার করে গলিত NaCl -এর তড়িদ্বিশ্লেষণে অ্যানোডে ক্লোরিন গ্যাস ও ক্যাথোডে সোডিয়াম ধাতু উৎপন্ন হয়।
NaCl(গলিত) ⇌ Na+ + Cl–
ক্যাথোড বিক্রিয়া – Na+ + e → Na (ধাতু)
অ্যানোড বিক্রিয়া – Cl– → Cl + e, Cl + Cl → Cl2(গ্যাস)
ধাতব পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহের সাথে তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহের পার্থক্য লেখো।
ধাতব পরিবাহী ও তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের পার্থক্যগুলি হল –
ধাতব পরিবাহী | তড়িদ্বিশ্লেষ্য |
তড়িৎপ্রবাহের ফলে ধাতব পরিবাহীতে কেবলমাত্র ভৌত পরিবর্তন ঘটে। | তড়িদ্বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হলে রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে নতুন ধর্মবিশিষ্ট পদার্থ উৎপন্ন হয়। |
এই ধরনের পরিবাহীতে মুক্ত ইলেকট্রন তড়িৎ পরিবহণ করে। | তড়িদ্বিশ্লেষ্যের ক্ষেত্রে ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন তড়িৎ পরিবহণ করে। |
ধাতব পরিবাহীগুলি কঠিন বা তরল অবস্থায় (যেমন – পারদ) তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে। | তড়িদ্বিশ্লেষ্যগুলি বিগলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থাতেই কেবল তড়িৎ পরিবহণে সক্ষম। |
এই ধরনের পরিবাহীর মধ্য দিয়ে তড়িৎ প্রবাহিত হওয়ার সময় ধাতব পরমাণুর স্থানান্তর ঘটে না। | তড়িদ্বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎ পরিবহণের সময় আয়নগুলির স্থানান্তর ঘটে। |
উষ্ণতা বৃদ্ধিতে ধাতব পরিবাহীর রোধ বৃদ্ধি পায়, ফলে তড়িৎ পরিবাহিতা হ্রাস পায়। | উষ্ণতা বৃদ্ধিতে তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের রোধ হ্রাস পায়, ফলে তড়িৎ পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায়। |
ধাতব পরিবাহীর তড়িৎ পরিবাহিতার মান তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের তুলনায় বেশি হয়। | তড়িদ্বিশ্লেষ্যের তড়িৎ পরিবাহিতার মান ধাতব পরিবাহীর তুলনায় কম হয়। |
তড়িদ্বিশ্লেষণ প্রকৃতপক্ষে একটি জারণ-বিজারণ বিক্রিয়া – ব্যাখ্যা করো।
জারণ-বিজারণের ইলেকট্রনীয় মতবাদ অনুসারে কোনো পরমাণু বা আয়ন ইলেকট্রন বর্জন করলে পরমাণু বা আয়নটি জারিত হয়। আবার, কোনো পরমাণু বা আয়ন ইলেকট্রন গ্রহণ করলে সেটি বিজারিত হয়।
গলিত বা জলে দ্রবীভূত তড়িদ্বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করলে তড়িদ্বিশ্লেষ্যের বিয়োজনে উৎপন্ন ক্যাটায়নগুলি ক্যাথোডে গিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইলেকট্রন গ্রহণ করে নিস্তড়িৎ হয়। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে ক্যাটায়নের বিজারণ ঘটে। অপরদিকে, অ্যানায়নগুলি অ্যানোডে গিয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ইলেকট্রন বর্জন করে নিস্তড়িৎ হয়। অর্থাৎ, এক্ষেত্রে অ্যানায়নের জারণ ঘটে। সুতরাং বলা যায়, তড়িদ্বিশ্লেষণে সংঘটিত বিক্রিয়া হল জারণ-বিজারণ প্রক্রিয়া।
প্ল্যাটিনাম তড়িদ্দ্বারের সাহায্যে অ্যাসিডযুক্ত জলের তড়িদ্বিশ্লেষণ-সংক্রান্ত নীতি ও তড়িদ্দ্বারে সংঘটিত বিক্রিয়াগুলি বর্ণনা করো।
নীতি – বিশুদ্ধ জলের তড়িৎ-পরিবহণ ক্ষমতা খুবই কম, কারণ বিশুদ্ধ অবস্থায় অতি অল্পসংখ্যক জলের অণু বিয়োজিত হয়ে H+ ও OH– আয়ন উৎপন্ন করে। কিন্তু বিশুদ্ধ জলে সামান্য H2SO4 যোগ করলে জলের বেশিরভাগ অণুই আয়নিত হয়ে বহুসংখ্যক H+ ও OH– আয়ন উৎপন্ন করে এবং এই জল তড়িতের সুপরিবাহী হয়।
H2O ⇌ H+ + OH–
তড়িদ্বিশ্লেষ্য – সামান্য H2SO4 মিশ্রিত জল।
তড়িদ্দ্বার – প্ল্যাটিনাম-নির্মিত ক্যাথোড ও অ্যানোড।

ক্যাথোড বিক্রিয়া – অ্যাসিড-মিশ্রিত জলের মধ্য দিয়ে তড়িৎ চালনা করলে H+ আয়নগুলি ক্যাথোড দ্বারা আকৃষ্ট হয়ে ক্যাথোডে এসে ইলেকট্রন গ্রহণ করে প্রথমে H -পরমাণুতে পরিণত হয়। পরে দুটি H -পরমাণু যুক্ত হয়ে হাইড্রোজেন অণুতে (H2) পরিণত হয়। ফলে ক্যাথোডে হাইড্রোজেন গ্যাস মুক্ত হয়।
H+ + e → H, H + H → H2↑
অ্যানোড বিক্রিয়া – জলের বিয়োজনে উৎপন্ন OH– আয়নগুলি অ্যানোড দ্বারা আকৃষ্ট হয় এবং অ্যানোডে এসে ইলেকট্রন বর্জন করে প্রথমে OH -মূলকে পরিণত হয়। পরে এই OH -মূলকগুলি পরস্পরের সঙ্গে বিক্রিয়া করে H2O ও O2 অণু উৎপন্ন করে। উৎপন্ন O2 গ্যাস অ্যানোডে মুক্ত হয়।
OH– – e → OH, 4OH → 2H2O + O2↑
একই উষ্ণতা ও চাপে ক্যাথোডে উৎপন্ন H2 গ্যাসের আয়তন অ্যানোডে উৎপন্ন O2 গ্যাসের আয়তনের দ্বিগুণ হয়।
তড়িদ্বিশ্লেষণের ব্যাবহারিক প্রয়োগগুলি উল্লেখ করো।
তড়িদ্বিশ্লেষণের ব্যাবহারিক প্রয়োগগুলি হল –
- তড়িৎ-ধনাত্মক ধাতু, যেমন – Na, K, Ca, Mg, Al প্রভৃতি ধাতুর নিষ্কাশন প্রক্রিয়া তড়িদ্বিশ্লেষণের সাহায্যে সম্পন্ন করা হয়।
- কিছু কিছু ধাতু, যেমন – Cu, Ag, Al প্রভৃতির শোধন প্রক্রিয়ায় তড়িদ্বিশ্লেষণ পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।
- হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, ক্লোরিন, সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড প্রভৃতির শিল্পোৎপাদনে এই পদ্ধতি প্রয়োগ করা হয়।
- তড়িৎ-লেপন প্রক্রিয়াটি তড়িদ্বিশ্লেষণের সাহায্যে সম্পন্ন করা হয়।
- বিভিন্ন মৌলের রাসায়নিক তুল্যাঙ্ক তড়িদ্বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে নির্ণয় করা হয়।
কপার তড়িদ্দ্বার ব্যবহার করে কপার সালফেট (CuSO4) -এর জলীয় দ্রবণের তড়িদ্বিশ্লেষণ প্রক্রিয়া সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
তড়িদ্বিশ্লেষ্য – কপার সালফেট (CuSO4) -এর জলীয় দ্রবণ।
তড়িদ্দ্বার – কপার-নির্মিত ক্যাথোড ও অ্যানোড।
কপার সালফেট (\(CuSO_4\)) জলীয় দ্রবণে বিয়োজিত হয়ে \(Cu^{2+}\) ও \(SO_4^{2-}\) আয়ন উৎপন্ন করে। অনুরূপে, জলেরও সামান্য সংখ্যক অণু বিয়োজিত হয়ে \(H^+\) ও \(OH^-\) আয়ন উৎপন্ন করে।
\(CuSO_4\rightleftharpoons Cu^{2+}+SO_4^{2-}\)\( H_2O\rightleftharpoons H^++OH^- \\\)ক্যাথোড বিক্রিয়া – দ্রবণের মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করলে Cu2+ ও H+ আয়ন উভয়ই ক্যাথোড দ্বারা আকৃষ্ট হয়। কিন্তু H+ আয়নের থেকে Cu2+ আয়নের ইলেকট্রন গ্রহণের প্রবণতা বেশি হওয়ায় প্রতিটি Cu2+ আয়ন ক্যাথোড থেকে 2টি ইলেকট্রন গ্রহণ করে প্রশম Cu -পরমাণুতে পরিণত হয়ে ক্যাথোডে সঞ্চিত হয়। ফলে ক্যাথোডের ভর বৃদ্ধি পায়।
Cu2+ + 2e → Cu (বিজারণ)

অ্যানোড বিক্রিয়া – \(OH^-\) ও \(SO_4^{2-}\) উভয়েই অ্যানোড দ্বারা আকৃষ্ট হলেও এই দুটি আয়নের কোনোটিই আধান বর্জনের সুযোগ পায় না। তার আগেই অ্যানোড থেকে ধাতব কপার পরমাণু ইলেকট্রন বর্জন করে \(Cu^{2+}\) আয়নরূপে দ্রবণে চলে আসে। এর ফলে Cu -অ্যানোড ক্রমশ ক্ষয় পেতে থাকে।
Cu2+ + 2e → Cu (জারণ)
এক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট সময়ের অবকাশে ক্যাথোডে যে পরিমাণ কপার জমা হয়, অ্যানোড থেকে ঠিক সমপরিমাণ কপার, Cu2+ আয়নরূপে দ্রবণে আসে। ফলে তড়িদ্বিশ্লেষ্য দ্রবণে CuSO4 -এর গাঢ়ত্বের পরিবর্তন ঘটে না।
প্ল্যাটিনাম তড়িদ্দ্বারের সাহায্যে কপার সালফেটের জলীয় দ্রবণের তড়িদ্বিশ্লেষণ করো।
\(CuSO_4\) -এর জলীয় দ্রবণে ক্যাটায়নরূপে \(Cu^{2+}\) ও \(H^+\) এবং অ্যানায়নরূপে \(OH^-\) ও \(SO_4^{2-}\) আয়ন উপস্থিত থাকে। Pt তড়িদ্দ্বার ব্যবহার করে তড়িদ্বিশ্লেষ্য দ্রবণে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করা হলে \(Cu^{2+}\) আয়ন ক্যাথোডে গিয়ে ইলেকট্রন গ্রহণ করে ধাতব Cu উৎপন্ন করে Pt -তড়িদ্দ্বারে জমা হয়। অপরদিকে, \(SO_4^{2-}\) ও \(OH^-\) আয়ন অ্যানোডের দিকে আকৃষ্ট হয়। \(OH^-\) আয়নের ইলেকট্রন বর্জনের প্রবণতা \(SO_4^{2-}\) আয়নের তুলনায় বেশি। তাই \(OH^-\) আয়ন অ্যানোডে ইলেকট্রন বর্জন করে OH -মূলকে পরিণত হয়। OH -মূলকগুলি পরস্পর যুক্ত হয়ে \(H_2O\) ও \(O_2\) উৎপন্ন করে।
ক্যাথোড বিক্রিয়া – Cu2+ + 2e → Cu
অ্যানোড বিক্রিয়া – OH– → OH + e, 4OH → 2H2O + O2↑
তড়িদ্বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে অ্যালুমিনা থেকে কীভাবে অ্যালুমিনিয়াম ধাতু নিষ্কাশন করা হয় সংক্ষেপে বর্ণনা করো।
ব্যবহৃত তড়িদ্বিশ্লেষ্য – বিশুদ্ধ অ্যালুমিনাকে (Al2O3) গলিত ক্রায়োলাইট (Na3AlF6) ও ফ্লুওস্পার (CaF2) -এর সঙ্গে মিশিয়ে তড়িদ্বিশ্লেষ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
ভোল্টামিটার ও তড়িদ্দ্বার –
- আয়রনের তৈরি ট্যাংক তড়িদ্বিশ্লেষণের পাত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- এই পাত্রের ভেতরের দেওয়ালে পুরু গ্যাস-কার্বনের আস্তরণ থাকে যা ক্যাথোড হিসেবে কাজ করে।
- ট্যাংকের ওপরের দিক থেকে বেশ কয়েকটি গ্রাফাইটের দণ্ড তড়িদ্বিশ্লেষ্যের মধ্যে আংশিকভাবে নিমজ্জিত থাকে, যেগুলি অ্যানোড-রূপে ব্যবহৃত হয়।
পদ্ধতি –
- তড়িদ্বিশ্লেষণের ট্যাংকটিতে ভরের অনুপাত হিসেবে 60% ক্রায়োলাইট (Na3AlF6), 20% অ্যালুমিনা (Al2O3) ও 20% ফ্লুওস্পার (CaF2) -এর মিশ্রণ নেওয়া হয়।
- বিশুদ্ধ Al2O3 -এর গলনাঙ্ক প্রায় 2050°C। কিন্তু তড়িদ্বিশ্লেষ্য মিশ্রণটির গলনাঙ্ক হ্রাস পেয়ে 900°C হয়। ফ্লুওস্পার গলিত দ্রবণের তড়িৎ পরিবাহিতা বৃদ্ধি করে।
- 900°C উষ্ণতায় গলিত তড়িদ্বিশ্লেষ্যের ওপর কোক-চূর্ণ ছড়িয়ে তড়িৎপ্রবাহ চালনা করলে ক্যাথোডে অ্যালুমিনিয়াম ধাতু গলিত অবস্থায় জমা হয় এবং অ্যানোডে O2 উৎপন্ন হয়। গলিত Al তড়িদ্বিশ্লেষণ পাত্রের তলদেশে সঞ্চিত হয় এবং পাত্রের তলদেশের ছিদ্রপথে মাঝে মাঝে এটিকে বের করে নেওয়া হয়।
তড়িৎ-বিয়োজন – Al2O3 (গলিত) ⇌ 2Al3+ + 3O2-
ক্যাথোড বিক্রিয়া – Al3+ + 3e → Al
অ্যানোড বিক্রিয়া – 3O2- → 3O + 6e, 3O + 3O → 3O2↑

তড়িদ্বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে Al ধাতু নিষ্কাশনের সময় অ্যালুমিনার সাথে ক্রায়োলাইট ও ফ্লুওস্পার যোগ করা হয় কেন?
তড়িদ্বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে Al ধাতু নিষ্কাশনের সময় অ্যালুমিনার সাথে ক্রায়োলাইট ও ফ্লুওস্পার যোগ করার কারণগুলি নিম্নরূপ –
- অ্যালুমিনার (Al2O3) গলনাঙ্ক প্রায় 2000°C। এই উচ্চ উষ্ণতায় গলিত অ্যালুমিনার তড়িদ্বিশ্লেষণে উৎপন্ন Al -এর বেশিরভাগই বাষ্পীভূত হয়ে নষ্ট হয়। তাছাড়া এভাবে প্রচুর তড়িৎশক্তির খরচ হয়। অ্যালুমিনার সাথে ক্রায়োলাইট ও ফ্লুওস্পার যোগ করায় মিশ্রণটির গলনাঙ্ক হয় প্রায় 900°C। এই মিশ্রণটি কম উষ্ণতায় বিগলিত হয় বলে তড়িৎশক্তির খরচ কম হয়।
- ফ্লুওস্পার গলিত মিশ্রণের সান্দ্রতা (viscosity) কমিয়ে দেয়। ফলে দ্রবণের মধ্যে আয়ন চলাচল সহজে হয় অর্থাৎ দ্রবণের তড়িৎ পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায়।
তড়িদ্বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে কপার ধাতুর বিশোধন পদ্ধতি সংক্ষেপে বিবৃত করো।
তড়িদ্বিশ্লেষ্য – লঘু (5-10%) H2SO4 মিশ্রত কপার সালফেট (CuSO4) দ্রবণ।
তড়িদ্দ্বার –
- ক্যাথোড – বিশুদ্ধ Cu ধাতুর পাতলা পাত,
- অ্যানোড – অবিশুদ্ধ Cu ধাতুর মোটা পাত।
পদ্ধতি – লেডের আস্তরণযুক্ত তড়িদ্বিশ্লেষণ পাত্রে তড়িদ্বিশ্লেষ্যটি নিয়ে তড়িৎ চালনা করলে অ্যানোড (অবিশুদ্ধ Cu -পাত) থেকে Cu -পরমাণুগুলি ইলেকট্রন বর্জন করে Cu2+ আয়নরূপে দ্রবণে আসে। উৎপন্ন Cu2+ আয়নগুলি ক্যাথোড (বিশুদ্ধ Cu -পাত) -এ ইলেকট্রন বর্জন করে ধাতব পরমাণুতে পরিণত হয়ে বিশুদ্ধ ধাতুরুপে ক্যাথোডে সঞ্চিত হয়। তড়িদ্বিশ্লেষণের ফলে অ্যানোড ক্রমশ ক্ষয় পেতে থাকে, কিন্তু ক্যাথোড পুরু হয়। ক্যাথোডে সঞ্চিত Cu -ধাতু প্রায় 99.99% বিশুদ্ধ হয়।
তড়িৎ-বিয়োজন – \(CuSO_4\rightleftharpoons Cu^{2+}+SO_4^{2-}\)
অ্যানোড বিক্রিয়া – Cu → Cu2+ + 2e
ক্যাথোড বিক্রিয়া – Cu2+ + 2e → Cu

তড়িৎলেপনের সময় কোন্ কোন্ বিষয়ের ওপর নজর রাখা উচিত?
তড়িৎলেপনের সময় প্রদত্ত বিষয়গুলির ওপর নজর রাখা প্রয়োজন –
- তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের দ্রবণে ধাতব আয়নের পরিমাণ যেন বেশি থাকে।
- উক্ত দ্রবণের তড়িৎ-পরিবহণ ক্ষমতা বেশি হওয়া দরকার, যদি পরিবহণ ক্ষমতা কম হয় তবে উচ্চ পরিবহণ ক্ষমতাবিশিষ্ট ধাতব লবণ যোগ করতে হয়।
- ধাতব লবণের (তড়িদ্বিশ্লেষ্য) দ্রবণটি যেন স্থায়ী হয় ও বাতাসের সংস্পর্শে কোনো রাসায়নিক বিক্রিয়া না করে।
- দ্রবণে অ্যানোডের দ্রবীভূত হওয়ার হার এমন হওয়া উচিত, যাতে দ্রবণে ধাতব আয়নের গাঢ়ত্ব সর্বদা স্থির থাকে।
- দ্রবণের মধ্য দিয়ে সমপ্রবাহী তড়িৎ (DC) কম মাত্রায় বেশিক্ষণ ধরে চালনা করা উচিত। কম তড়িৎপ্রবাহ ব্যবহার করলে তড়িদ্বিশ্লেষ্য দ্রবণ উষ্ণ হয়ে ওঠে না এবং তড়িৎ-লেপন সমানভাবে পাতলা স্তরের প্রলেপ ফেলে। পরিবর্তী প্রবাহ ব্যবহার করলে তড়িৎলেপন ঘটবে না।
- যে ধাতুর ওপর প্রলেপ দেওয়া হবে তার পৃষ্ঠতল মসৃণ ও পরিষ্কার হওয়া দরকার।
কোনো ধাতব বস্তুর ওপর প্রদত্ত ধাতুগুলির প্রলেপ দিতে হলে অ্যানোড, ক্যাথোড ও তড়িদ্বিশ্লেষ্যরূপে কী কী ব্যবহার করবে – (i) তামা, (ii) রুপো, (iii) টিন, (iv) নিকেল, (v) ক্রোমিয়াম, (vi) সোনা।
তড়িৎলেপনে ব্যবহৃত ধাতু | ক্যাথোড | অ্যানোড (ধাতব পাত) | তড়িদ্বিশ্লেষ্য |
i. তামা | যে বস্তুতে প্রলেপ দিতে হবে | বিশুদ্ধ তামা | কপার সালফেট (CuSO4) |
ii. রুপো | যে বস্তুতে প্রলেপ দিতে হবে | বিশুদ্ধ রুপো | পটাশিয়াম আর্জেন্টোসায়ানাইড K[Ag(CN)2] |
iii. টিন | যে বস্তুতে প্রলেপ দিতে হবে | বিশুদ্ধ টিন | স্ট্যানাস ক্লোরাইড (SnCl2) |
iv. নিকেল | যে বস্তুতে প্রলেপ দিতে হবে | বিশুদ্ধ নিকেল | নিকেল সালফেট (NiSO4) |
v. ক্রোমিয়াম | যে বস্তুতে প্রলেপ দিতে হবে | বিশুদ্ধ ক্রোমিয়াম | ক্রোমিক সালফেট [Cr2(SO4)3], ও ক্রোমিক অ্যাসিড (H2CrO4) |
vi. সোনা | যে বস্তুতে প্রলেপ দিতে হবে | বিশুদ্ধ সোনা | পটাশিয়াম অরোসায়ানাইড, K[Au(CN)2] |
Class 10 Physical Science – Notes for All Chapters
আমরা আমাদের আর্টিকেলে দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায়ের ‘পদার্থের ভৌত রাসায়নিক ধর্মসমূহ‘ থেকে ‘তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া’ এর কিছু দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য বা চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি দশম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।