আমরা আমাদের আর্টিকেলে দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায়ের ‘পদার্থের ভৌত রাসায়নিক ধর্মসমূহ‘ থেকে ‘তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া’ এর কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য ও চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থ – যেসব যৌগিক পদার্থ গলিত অবস্থায় বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে এবং তড়িৎ পরিবহণের ফলে রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট নতুন পদার্থে পরিণত হয়, তাদের তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থ বলে।
উদাহরণ –
- অ্যাসিড – HCl, HNO3, H2SO4, CH3COOH প্রভৃতি;
- ক্ষার – NaOH, KOH, Са(ОН)2 প্রভৃতি;
- লবণ – NaCl, AlCl3, CuSO4 প্রভৃতির জলীয় দ্রবণ।
তড়িৎ বিয়োজন কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
বিগলিত কিংবা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থগুলি স্বতঃস্ফূর্তভাবে আংশিক বা সম্পূর্ণরূপে বিয়োজিত হয়ে ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন উৎপন্ন করে। এই ঘটনাকে তড়িৎ-বিয়োজন বা আয়নাইজেশন বলে।
উদাহরণ – সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) যৌগটি বিগলিত কিংবা জলে দ্রবীভূত অবস্থায় বিয়োজিত হয়ে Na+ ও Cl– আয়ন মুক্ত করে।
NaCl (গলিত বা দ্রবীভূত) ⇌ Na+ + Cl–
তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ – যে সমস্ত যৌগিক পদার্থ গলিত বা কোনো দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে না, তাদের তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ বলে। তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ গলিত বা দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় আয়ন উৎপন্ন করে না।
উদাহরণ – বিশুদ্ধ জল, বেঞ্জিন, অ্যালকোহল, চিনি, গ্লুকোজ, ইউরিয়া ইত্যাদি যৌগগুলি তড়িৎ-অবিশ্লেষ্য পদার্থ।
বিয়োজন মাত্রা বলতে কী বোঝ? বিয়োজন মাত্রার সঙ্গে তড়িদ্বিশ্লেষ্যের তড়িৎ-পরিবহণ ক্ষমতা কীভাবে সম্পর্কিত?
গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় কোনো তড়িদ্বিশ্লেষ্যের যে ভগ্নাংশ আয়নিত হয়, তাকে বিয়োজন মাত্রা বলা হয়। তীব্র তড়িদ্বিশ্লেষ্যের বিয়োজন মাত্রা বেশি এবং মৃদু তড়িদ্বিশ্লেষ্যের বিয়োজন মাত্রা কম হয়।
বিয়োজন মাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তড়িদ্বিশ্লেষ্যের তড়িৎ-পরিবহণ ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
ক্যাথোড ও অ্যানোডের মধ্যে পার্থক্যগুলি উল্লেখ করো।
ক্যাথোড ও অ্যানোডের পার্থক্যগুলি নিম্নরূপ –
ক্যাথোড | অ্যানোড |
এই তড়িদ্দ্বারটি ব্যাটারির ঋণাত্মক মেরুর সঙ্গে যুক্ত। | এই তড়িদ্দ্বারটি ব্যাটারির ধনাত্মক মেরুর সঙ্গে যুক্ত। |
ক্যাথোডে ক্যাটায়নের তড়িৎমুক্তি ঘটে। | অ্যানোডে অ্যানায়নের তড়িৎমুক্তি ঘটে। |
ইলেকট্রন গ্রহণের মাধ্যমে ক্যাথোডে ক্যাটায়নের বিজারণ ঘটে। | ইলেকট্রন বর্জনের মাধ্যমে অ্যানোডে অ্যানায়নের জারণ ঘটে। |
মৌলিক পদার্থের তড়িদ্বিশ্লেষণ হতে পারে কি? ব্যাখ্যা করো।
গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবক দ্রবীভূত কোনো পদার্থের বিয়োজনে উৎপন্ন ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নের মধ্য দিয়ে তড়িৎ পরিবহণের ফলে পদার্থটি রাসায়নিকভাবে পরিবর্তিত হয়ে ভিন্ন ধর্মবিশিষ্ট অন্য পদার্থে পরিণত হলে তড়িদ্বিশ্লেষণ সম্পন্ন হয়। সুতরাং, তড়িদ্বিশ্লেষণের জন্য বিপরীতধর্মী আয়নের উপস্থিতি আবশ্যক। মৌলিক পদার্থগুলি বিপরীতধর্মী আয়নে বিয়োজিত হয় না। তাই মৌলিক পদার্থের তড়িদ্বিশ্লেষণ সম্ভব নয়।
ক্লোরোফর্ম, বেঞ্জিন ইত্যাদি যৌগিক তরল পদার্থ তড়িৎ পরিবহণ করে না কেন?
তরল অবস্থায় থাকলেও ক্লোরোফর্ম বা বেঞ্জিন ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নে তড়িৎ বিয়োজিত হয় না। তরলে ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন উপস্থিত থাকলে তবেই ওই তরল তড়িৎ পরিবহণ করে। তাই, ক্লোরোফর্ম ও বেঞ্জিন তড়িৎ পরিবহণ করে না।
তড়িদ্দ্বার কাকে বলে? ক্যাথোড ও অ্যানোড কী?
বিগলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত তড়িদ্বিশ্লেষ্যের মধ্যে যে দুটি সুপরিবাহী ধাতব (যেমন – কপার, সিলভার ইত্যাদি) বা অধাতব (যেমন – গ্রাফাইট, গ্যাস কার্বন) পাত বা দণ্ড আংশিকভাবে নিমজ্জিত থাকে এবং যাদের মাধ্যমে তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের মধ্য দিয়ে তড়িতের প্রবাহ ঘটে, তাদের তড়িদ্দ্বার বলে।
যে তড়িদ্দ্বারকে ব্যাটারির ঋণাত্মক মেরুর সঙ্গে যুক্ত করা হয়, তাকে ক্যাথোড এবং যে তড়িদ্দ্বারকে ব্যাটারির ধনাত্মক মেরুর সঙ্গে যুক্ত করা হয়, তাকে অ্যানোড বলে।
সক্রিয় এবং নিষ্ক্রিয় তড়িদ্দ্বার কাকে বলে?
তড়িদ্বিশ্লেষণের সময় যে তড়িদ্দ্বারগুলির কোনো রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে না তাদের নিষ্ক্রিয় তড়িদ্দ্বার বলে। যেমন – প্ল্যাটিনাম, গ্রাফাইট ইত্যাদি। অন্যদিকে, তড়িদ্বিশ্লেষণের সময় যে তড়িদ্দ্বারগুলি রাসায়নিক বিক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে এবং দ্রবণে ধাতব আয়নের জোগান দেয় তাদের সক্রিয় তড়িদ্দ্বার বলে। যেমন – কপার তড়িদ্দ্বারের উপস্থিতিতে CuSO4 -এর জলীয় দ্রবণের তড়িদ্বিশ্লেষণ করলে, কপার অ্যানোডটি সক্রিয় তড়িদ্দ্বার হিসেবে কাজ করে। তড়িদ্বিশ্লেষণ চলাকালীন কপার অ্যানোড থেকে Cu2+ আয়ন দ্রবণে আসে, ফলে অ্যানোডটি ক্রমশ ক্ষয় পায়।
তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থ কঠিন অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে না কিন্তু গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িৎ পরিবহণ করে কেন?
তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থ সাধারণ অবস্থায় কঠিন ও কেলাসাকার হয়। কেলাসের মধ্যে অসংখ্য ক্যাটায়ন ও অ্যানায়ন স্থির তড়িৎ-আকর্ষণ বলের ফলে দৃঢ়ভাবে আবদ্ধ থাকে। এই অবস্থায় আয়নগুলির চলাচল সম্ভব নয় বলে তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থ তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে না। গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের উপাদান আয়নগুলির পারস্পরিক আকর্ষণ বল শিথিল হয়ে আয়নগুলি গতিশীল হয়। এই গতিশীল আয়নগুলিই গলিত বা দ্রবীভূত তড়িদ্বিশ্লেষ্যের মধ্য দিয়ে তড়িৎ পরিবহণ করে।
তীব্র তড়িদ্বিশ্লেষ্য কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় যেসব তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের অধিকাংশ অণুই আয়নে বিয়োজিত হয়ে বেশিমাত্রায় তড়িৎ পরিবহণ করে, তাদের তীব্র তড়িদ্বিশ্লেষ্য বলে।
উদাহরণ – HCl, H2SO4 প্রভৃতি অ্যাসিড; NaOH, KOH প্রভৃতি ক্ষার; NaCl, KCl, CaCl2 প্রভৃতি লবণ।
মৃদু তড়িদ্বিশ্লেষ্য কাকে বলে? উদাহরণ দাও।
গলিত বা দ্রবীভূত অবস্থায় যেসব তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের সামান্য সংখ্যক অণুই আয়নে বিয়োজিত হয় এবং বেশিরভাগ অণুই অবিয়োজিত অবস্থায় থাকে, তাদের মৃদু তড়িদ্বিশ্লেষ্য বলে। মৃদু তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থগুলির তড়িৎ পরিবহণের মাত্রা কম।
উদাহরণ – H2CO3, HCOOH, CH3COOH ইত্যাদি অ্যাসিড। NH4OH, Mg(OH)2 ইত্যাদি ক্ষারক।
সাধারণ লবণের জলীয় দ্রবণ তড়িৎ পরিবহণ করে, কিন্তু চিনির জলীয় দ্রবণ তড়িৎ পরিবহণ করে না কেন?
সাধারণ লবণ (NaCl) একটি তীব্র তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থ। ফলে সাধারণ লবণ জলীয় দ্রবণে প্রায় সম্পূর্ণ আয়নিত হয়ে Na+ এবং Cl– আয়ন উৎপন্ন করে। NaCl → Na+ + Cl– দ্রবণে উপস্থিত এই আয়নগুলিই তড়িৎ পরিবহণ করে।
অপরপক্ষে, সমযোজী যৌগ চিনি জলীয় দ্রবণে আয়নিত হয় না। দ্রবণে আয়নের অনুপস্থিতির জন্য চিনির জলীয় দ্রবণ তড়িৎ পরিবহণ করতে পারে না।
ভোল্টামিটার ও ভোল্টমিটারের পার্থক্য লেখো।
ভোল্টামিটার ও ভোল্টমিটারের মধ্যে পার্থক্যগুলি হল –
ভোল্টামিটার | ভোল্টমিটার |
যে যন্ত্রে তড়িদ্বিশ্লেষণ করা হয়, অর্থাৎ তড়িদ্বিশ্লেষ্য রাখার পাত্র, তড়িদ্বিশ্লেষ্য ও তড়িদ্দ্বারসহ সমগ্র পরীক্ষা ব্যবস্থাকে ভোল্টামিটার বলে। | যে যন্ত্রের সাহায্যে তড়িৎ-বর্তনীর যে-কোনো দুটি বিন্দুর মধ্যে বিভব-প্রভেদ পরিমাপ করা যায়, তাকে ভোল্টমিটার বলে। |
ভোল্টামিটারের মধ্যে গলিত বা দ্রবীভূত তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থ নেওয়া হয়। | ভোল্টমিটারের মধ্যে কোনোরূপ রাসায়নিক পদার্থ নেওয়া হয় না। |
ধাতুর মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহের ফলে ভৌত পরিবর্তন ঘটে – উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।
ধাতুর মধ্য দিয়ে তড়িৎপ্রবাহের ফলে ধাতুটি গরম হয়ে ওঠে ও অনেকসময় ভাস্বর হয়ে আলো বিকিরণ করে। যেমন – বৈদ্যুতিক বাল্বের টাংস্টেন ফিলামেন্ট তড়িৎপ্রবাহের ফলে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং ভাস্বর হয়ে আলো বিকিরণ করে। তড়িৎপ্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে ধাতু পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে, অর্থাৎ, এক্ষেত্রে ভৌত পরিবর্তন ঘটে।
গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের উষ্ণতা বৃদ্ধি করলে তড়িৎ পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায় কেন?
উষ্ণতা বৃদ্ধি করলে গলিত বা উপযুক্ত দ্রাবকে দ্রবীভূত তড়িৎ বিয়োজিত তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থের ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নগুলির গতিবেগ বৃদ্ধি পায়। ফলে তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থে তড়িৎপ্রবাহ চালানো হলে ক্যাটায়ন ও অ্যানায়নগুলি দ্রুত যথাক্রমে ক্যাথোডে ও অ্যানোডে পৌঁছায়। আয়নগুলির গতিবেগ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে তড়িদ্বিশ্লেষ্যের তড়িৎ পরিবাহিতাও বৃদ্ধি পায়।
তড়িদ্দ্বারে ইলেকট্রন গ্রহণ ও বর্জনের দৃষ্টিকোণ থেকে অ্যানোড ও ক্যাথোডের সংজ্ঞা দাও।
যে তড়িদ্দ্বারে ক্যাটায়নগুলি ইলেকট্রন গ্রহণ করে প্রশম পরমাণু বা মূলকে পরিণত হয় তাকে ক্যাথোড বলে। সুতরাং বলা যায়, ক্যাটায়নগুলি ক্যাথোডে বিজারিত হয়।
অপরদিকে, যে তড়িদ্দ্বারে অ্যানায়নগুলি ইলেকট্রন ত্যাগ করে প্রশম পরমাণু বা মূলকে পরিণত হয় তাকে অ্যানোড বলে। অর্থাৎ অ্যানোডে অ্যানায়নগুলি জারিত হয়।
HCl সমযোজী পদার্থ হলেও এটির জলীয় দ্রবণ তীব্র তড়িদ্বিশ্লেষ্যের মতো আচরণ করে কেন?
HCl সমযোজী গ্যাসীয় পদার্থ। HCl অণুর সমযোজী বন্ধনের প্রকৃতি পোলার হওয়ায়, পোলার দ্রাবক জলে সহজে আয়নিত হয়ে হাইড্রোনিয়াম (H3O+) আয়ন এবং ক্লোরাইড আয়ন (Cl–) উৎপন্ন করে।
HCl + H2O ⇌ H3O+ + Cl–
জলীয় দ্রবণে আয়নের উপস্থিতির জন্য HCl জলীয় দ্রবণে তীব্র তড়িদ্বিশ্লেষ্যের মতো আচরণ করে।
NaOH তীব্র তড়িদ্বিশ্লেষ্য হলেও NH4OH মৃদু তড়িদ্বিশ্লেষ্য কেন?
দ্রবীভূত বা গলিত অবস্থায় NaOH প্রায় সম্পূর্ণরূপে বিয়োজিত হয়ে বহুসংখ্যক আয়ন উৎপন্ন করে। দ্রবণে Na+ আয়ন ও OH– আয়নের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তড়িৎ পরিবহণের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। তাই NaOH তীব্র তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থ।
\( NaOH\rightarrow Na^++OH^- \\\)অপরপক্ষে, দ্রবণে NH4OH -এর খুব কম সংখ্যক অণু বিয়োজিত হয়ে আয়ন উৎপন্ন করে।
\(NH_4OH\rightleftharpoons NH_4^++OH^-\\\)দ্রবণে \(NH_4^+\) ও \(OH^-\) আয়নের সংখ্যা কম হওয়ায় তড়িৎ পরিবহণের মাত্রা হ্রাস পায়। তাই \(NH_4OH\) মৃদু তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থ।
তড়িদ্বিশ্লেষণের সময় সমপ্রবাহী তড়িতের (DC) পরিবর্তে পরিবর্তী প্রবাহ (AC) ব্যবহার করা যাবে কি?
তড়িদ্বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে পরিবর্তী প্রবাহ ব্যবহার করা যায় না, কারণ পরিবর্তী প্রবাহের ক্ষেত্রে প্রতি মুহূর্তে তড়িৎপ্রবাহের অভিমুখ পরিবর্তিত হয়। ফলে তড়িদ্দ্বারদুটির মেরুধর্মিতাও পরিবর্তিত হতে থাকে এবং নির্দিষ্ট তড়িদ্দ্বারের অভিমুখে আয়নগুলির গমন বিঘ্নিত হয়।
বিশুদ্ধ জলে সামান্য তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থ যোগ করলে জলের পরিবাহিতা বৃদ্ধি পায় কেন?
বিশুদ্ধ জল অত্যন্ত মৃদু তড়িদ্বিশ্লেষ্য পদার্থ। সাধারণভাবে বিশুদ্ধ জলের নগণ্য সংখ্যক অণু বিয়োজিত হয়ে অল্প সংখ্যক H3O+ ও OH– আয়ন উৎপন্ন করে। কিন্তু জলে সামান্য অ্যসিড বা ক্ষার যোগ করলে দ্রবণে আয়নের সংখ্যা বহুগুণ বৃদ্ধি পায়। দ্রবণে আয়নের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই জলের তড়িৎ পরিবহণ ক্ষমতা বিশুদ্ধ জলের তুলনায় বেশি হয়।
জলের তড়িদ্বিশ্লেষণে উৎপন্ন গ্যাসগুলিকে কীভাবে শনাক্ত করবে?
জলের তড়িদ্বিশ্লেষণে ক্যাথোডে ও অ্যানোডে উৎপন্ন গ্যাসগুলিকে নিম্নরূপে শনাক্ত করা যায় –
- ক্যাথোডে সঞ্চিত গ্যাসের মধ্যে একটি জ্বলন্ত শলাকা প্রবেশ করালে দেখা যায় গ্যাসটি নীলাভ শিখায় জ্বলছে। অতএব, ক্যাথোডে সঞ্চিত গ্যাসটি হাইড্রোজেন।
- অনুরূপভাবে, অ্যানোডে সঞ্চিত গ্যাসের মধ্যে একটি শিখাহীন জ্বলন্ত শলাকা প্রবেশ করালে দেখা যায়, কাঠিটি দপ্ করে জ্বলে ওঠে কিন্তু গ্যাসটি নিজে জ্বলে না। এ থেকে বোঝা যায়, অ্যানোডে সঞ্চিত গ্যাসটি অক্সিজেন।
Cu -তড়িদ্দ্বারের সাহায্যে CuSO4 দ্রবণের তড়িদ্বিশ্লেষণের ফলে অ্যানোডের ভর হ্রাস ও ক্যাথোডের ভর বৃদ্ধি পায় কেন?
\(CuSO_4\) -এর জলীয় দ্রবণে ক্যাটায়নরূপে \(Cu^{2+}\) ও \(H^+\) এবং অ্যানায়নরূপে \(SO_4^{2-}\) ও \(OH^-\) আয়ন উপস্থিত থাকে। \(Cu\)-তড়িদ্দ্বার ব্যবহার করে \(CuSO_4\) দ্রবণের তড়িদ্বিশ্লেষণ ঘটালে \(H^+\) -এর পরিবর্তে \(Cu^{2+}\) আয়নগুলি ক্যাথোডে গিয়ে ইলেকট্রন গ্রহণ করে \(Cu\) -পরমাণুতে পরিণত হয় এবং ধাতব কপাররূপে ক্যাথোডে সঞ্চিত হয়। ফলে ক্যাথোডের ভর বৃদ্ধি পায়। অপরদিকে, \(SO_4^{2-}\) ও \(OH^-\) আয়নের অ্যানোডে গিয়ে তড়িৎমুক্ত হওয়ার আগে অ্যানোডের \(Cu\) -পরমাণু, \(Cu^{2+}\) আয়নরূপে দ্রবণে আসে। ফলে অ্যানোড ক্রমশ ক্ষয়ে যেতে থাকে এবং এর ভর হ্রাস পায়।
ক্যাথোড বিক্রিয়া – Cu2+ + 2e → Cu,
অ্যানোড বিক্রিয়া – Cu → Cu2+ + 2e
Cu -তড়িদ্দ্বারের সাহায্যে CuSO4 দ্রবণের তড়িদ্বিশ্লেষণ করলে তড়িদ্বিশ্লেষ্য দ্রবণে CuSO4 -এর গাঢ়ত্বের কোনো পরিবর্তন ঘটবে কি? আলোচনা করো।
Cu -তড়িদ্দ্বারের সাহায্যে CuSO4 দ্রবণের তড়িদ্বিশ্লেষণ ঘটালে একটি নির্দিষ্ট সময়ের অবকাশে ক্যাথোডে যে পরিমাণ ধাতব কপার সঞ্চিত হয়, অ্যানোড থেকে ঠিক সেই পরিমাণ কপার, Cu2+ আয়নরূপে দ্রবণে আসে। ফলে তড়িদ্বিশ্লেষ্য দ্রবণে CuSO4 -এর গাঢ়ত্বের কোনো পরিবর্তন ঘটে না। বাহ্যিক দৃষ্টিতেও দেখা যায়, তড়িদ্বিশ্লেষণকালে CuSO4 দ্রবণের নীল বর্ণের প্রগাঢ়তা অপরিবর্তিত থাকে।
ক্যাথোড বিক্রিয়া – Cu2+ + 2e → Cu
অ্যানোড বিক্রিয়া – Cu → Cu2+ + 2e
ধাতু নিষ্কাশন কী? কোন্ ধরনের ধাতুগুলিকে তড়িদ্বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে নিষ্কাশিত করা হয় এবং কেন?
কোনো ধাতুর আকরিক থেকে সংশ্লিষ্ট ধাতুটিকে পৃথক করার পদ্ধতিকে ধাতু নিষ্কাশন বলে। আকরিক মধ্যস্থ বিভিন্ন অশুদ্ধিগুলি দূর করে বিশুদ্ধ ধাতু পাওয়ার জন্য ধাতু নিষ্কাশন করা হয়।
Na, K, Ca, Al প্রভৃতি তীব্র তড়িৎ-ধনাত্মক ধাতুগুলিকে তড়িদ্বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে নিষ্কাশিত করা হয়। এই ধাতুগুলির অক্সাইড খুব স্থায়ী হওয়ায় কার্বন বিজারণ পদ্ধতিতে এদের নিষ্কাশন সম্ভব হয় না। তাই এই ধাতুগুলির ক্লোরাইড লবণ বা কোনো কোনো ক্ষেত্রে অক্সাইড যৌগ (Al -এর ক্ষেত্রে) -এর তড়িদ্বিশ্লেষণ দ্বারা ধাতুগুলিকে নিষ্কাশিত করা হয়।
ধাতুর তড়িৎ-পরিশোধন বলতে কী বোঝ? তড়িৎ-পরিশোধনের মূল নীতিটি লেখো।
তড়িদ্বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ার সাহায্যে সাধারণ পদ্ধতিতে নিষ্কাশিত অবিশুদ্ধ ধাতু থেকে অশুদ্ধিগুলি দূর করে বিশুদ্ধ ধাতু তৈরির পদ্ধতিকে তড়িৎ-বিশোধন বা তড়িৎ-পরিশোধন বলা হয়।
তড়িৎ-পরিশোধন পদ্ধতিতে অবিশুদ্ধ ধাতুর মোটা পাতকে অ্যানোডরূপে, ওই ধাতুরই বিশুদ্ধ পাতকে ক্যাথোডরূপে এবং ধাতুটির কোনো লবণের জলীয় দ্রবণ তড়িদ্বিশ্লেষ্যরূপে ব্যবহার করে তড়িদ্বিশ্লেষণ সম্পন্ন করা হয়। তড়িদ্বিশ্লেষণের ফলে অ্যানোড থেকে ধাতব পরমাণুগুলি আয়নরূপে দ্রবণে আসে। এই আয়নগুলি ক্যাথোডে ইলেকট্রন বর্জন করে ধাতব পরমাণুতে পরিণত হয়ে বিশুদ্ধ ধাতুরূপে ক্যাথোডে সঞ্চিত হয়।
তড়িৎলেপন কাকে বলে?
তড়িদ্বিশ্লেষণ প্রক্রিয়ার সাহায্যে ক্যাথোডরূপে ব্যবহৃত অধিকতর সক্রিয় কোনো ধাতু (লোহা, তামা প্রভৃতি) বা ধাতু-সংকরের তৈরি বস্তুর ওপর অ্যানোডরূপে ব্যবহৃত তুলনামূলক কম সক্রিয় ধাতু (সিলভার, গোল্ড, নিকেল প্রভৃতি) -এর প্রলেপ দেওয়ার পদ্ধতিকে তড়িৎলেপন (electroplating) বলে।
তড়িৎলেপনের নীতিটি উল্লেখ করো।
তড়িৎলেপনের সময় যে বস্তুর ওপর ধাতুর প্রলেপ দেওয়া হবে সেই বস্তুটিকে ক্যাথোডরূপে, যে ধাতুর প্রলেপ দেওয়া হবে সেই ধাতুর একটি বিশুদ্ধ পাতকে অ্যানোডরূপে এবং যে ধাতুর প্রলেপ দেওয়া হবে সেই ধাতুর একটি জলে দ্রাব্য লবণের দ্রবণ তড়িদ্বিশ্লেষ্যরূপে ব্যবহার করা হয়। যেমন – সিলভার-নির্মিত বস্তুর ওপর সোনার প্রলেপ দিতে বিশুদ্ধ সোনার পাতকে অ্যানোডরূপে, ক্যাথোডরূপে সিলভার-নির্মিত বস্তু ও তড়িদ্বিশ্লেষ্যরূপে পটাশিয়াম অরোসায়ানাইড দ্রবণ নেওয়া হয়।

তড়িৎলেপনের উদ্দেশ্যগুলি লেখো?
তড়িৎলেপনের উদ্দেশ্যগুলি হল –
- অধিক সক্রিয় কোনো ধাতু বা ধাতু-সংকরের তৈরি বস্তুকে জলবায়ু, বিভিন্ন রাসায়নিক পদার্থ প্রভৃতির ক্রিয়া থেকে রক্ষা করার জন্য তড়িৎলেপনের দ্বারা তার ওপর কম সক্রিয় কোনো ধাতুর প্রলেপ দেওয়া হয়। যেমন – মরচে পড়ার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য লোহার বস্তুর ওপর নিকেল, টিন, অ্যালুমিনিয়াম, জিংক প্রভৃতি ধাতুর প্রলেপ দেওয়া হয়।
- ধাতুর তৈরি জিনিসকে অধিকতর সুদৃশ্য করার জন্য তড়িৎলেপন করা হয়। যেমন – রুপোর তৈরি গহনার ওপর সোনার প্রলেপ দিয়ে গহনার সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়।
- ধাতু বা ধাতুনির্মিত বস্তুর পৃষ্ঠতলকে অধিক দৃঢ় ও ঘর্ষণজনিত ক্ষয়রোধী করা যায়।
তড়িৎলেপনের সময় কমমাত্রার সমপ্রবাহী তড়িৎ বেশিক্ষণ ধরে চালনা করা উচিত কেন?
তড়িৎলেপনের সময় কমমাত্রার তড়িৎপ্রবাহ চালনা করলে তড়িদ্বিশ্লেষ্য দ্রবণ উষ্ণ হয়ে ওঠে না। তড়িৎপ্রবাহ বেশিক্ষণ ধরে চালনা করলে বস্তুতে সুষম প্রলেপ পড়ে। পরিবর্তী প্রবাহ চালনা করলে ক্যাথোড ও অ্যানোড ক্রমাগত পরিবর্তিত হওয়ায় আয়নগুলি কোনো নির্দিষ্ট তড়িদ্দ্বার অভিমুখে সচল থাকতে পারে না, তাই সমপ্রবাহী তড়িৎ ব্যবহার করে তড়িৎলেপন করা হয়।
তড়িদ্বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে Al ধাতু নিষ্কাশনের জন্য তড়িদ্বিশ্লেষ্যরূপে কী ব্যবহার করা হয়?
তড়িদ্বিশ্লেষণ পদ্ধতিতে Al ধাতু নিষ্কাশনের জন্য তড়িদ্বিশ্লেষ্যরূপে একটি গলিত মিশ্রণ নেওয়া হয়। মিশ্রণটির উপাদানগুলি হল – 60% ক্রায়োলাইট (Na3AlF6), 20% অ্যালুমিনা (Al2O3) এবং 20% ফ্লুওস্পার (CaF2)।
CuSO4 -এর আম্লিক দ্রবণের তড়িদ্বিশ্লেষণে ক্যাথোডে Cu মুক্ত হয়। কিন্তু Al -লবণের আম্লিক দ্রবণের তড়িদ্বিশ্লেষণে ক্যাথোডে Al মুক্ত হয় না কেন?
CuSO4 -এর জলীয় দ্রবণে Cu2+ ও H+ আয়ন ক্যাটায়ন-রূপে উপস্থিত থাকে। H+ আয়নের থেকে Cu2+ আয়নের ইলেকট্রন গ্রহণের প্রবণতা বেশি হওয়ায় Cu2+ আয়ন ক্যাথোডে গিয়ে ইলেকট্রন গ্রহণ করে Cu -পরমাণুরূপে মুক্ত হয়। অ্যালুমিনিয়াম লবণের জলীয় দ্রবণে Al3+ ও H+ আয়ন ক্যাটায়নরূপে উপস্থিত থাকে। কিন্তু Al3+ আয়নের থেকে H+ আয়নের ইলেকট্রন গ্রহণের প্রবণতা বেশি হওয়ায় এক্ষেত্রে Al3+ -এর পরিবর্তে H+ আয়ন ক্যাথোডে গিয়ে ইলেকট্রন গ্রহণ করে প্রশম পরমাণুতে পরিণত হয় ও 2টি করে H -পরমাণু যুক্ত হয়ে H2 অণু উৎপন্ন করে। তাই এক্ষেত্রে অ্যালুমিনিয়াম ধাতু ক্যাথোডে মুক্ত হবে না।
অ্যানোড মাড কী? এর গুরুত্ব লেখো।
কপার পরিশোধনের সময় অবিশুদ্ধ কপার অ্যানোডে অশুদ্ধিরূপে উপস্থিত উচ্চ তড়িৎ-ধনাত্মক ধাতুগুলি (Fe, Ni, Zn প্রভৃতি) দ্রবণে দ্রবীভূত হয় এবং কম তড়িৎ-ধনাত্মক মূল্যবান ধাতুগুলি (Au, Ag, Pt প্রভৃতি) অন্যান্য অশুদ্ধির সঙ্গে কাদার আকারে অ্যানোডের নীচে জমা হয়। একে ‘অ্যানোড কাদা’ বা ‘অ্যানোড মাড’ বলে। অ্যানোডের চারদিকে সূক্ষ্ম মসলিনের থলি রেখে অ্যানোড কাদাকে সঞ্চিত করা হয়।
অ্যানোড মাড থেকে গোল্ড, সিলভার, প্লাটিনাম প্রভৃতি মূল্যবান ধাতুগুলি পাওয়া যায়।
Class 10 Physical Science – Notes for All Chapters
আমরা আমাদের আর্টিকেলে দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞানের অষ্টম অধ্যায়ের ‘পদার্থের ভৌত রাসায়নিক ধর্মসমূহ‘ থেকে ‘তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়া’ এর কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য বা চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি দশম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।