আমরা আমাদের আর্টিকেলে দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞানের সপ্তম অধ্যায় ‘পরমাণুর নিউক্লিয়াস’ এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
তেজস্ক্রিয়তা – যে ধর্মের জন্য সাধারণত কিছু উচ্চ পারমাণবিক ভর সংখ্যাবিশিষ্ট মৌল সব অবস্থায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এক বিশেষ ধরণের অদৃশ্য বিকিরণ নিঃসরণ করে এবং নতুন মৌলের পরমাণুতে পরিণত হয় তাকে তেজস্ক্রিয়তা বলা হয়।
কোনো মৌলের তেজস্ক্রিয়তা সম্পূর্ণ নিউক্লিয়াসজনিত ঘটনা, এর সঙ্গে ইলেকট্রন বিন্যাসের কোনো সম্পর্ক নেই। তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গমনের ফলে নিউক্লিয়াসের গঠনের পরিবর্তন হয় অর্থাৎ নিউক্লিয়াসে প্রোটন ও নিউট্রন সংখ্যার পরিবর্তন হয় তাই নতুন মৌল উৎপন্ন হয়।
পোলোনিয়ামের (Po) তেজস্ক্রিয়তা, ইউরেনিয়ামের তুলনায় প্রায় হাজার গুণ ও রেডিয়ামের তেজস্ক্রিয়তা ইউরেনিয়ামের তুলনায় প্রায় দশ লক্ষ গুণ।
তেজস্ক্রিয় মৌলের যে পরমাণুর তেজস্ক্রিয় বিঘটন হয় তাকে জনক পরমাণু এবং ওই পরমাণুর নিউক্লিয়াস থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হওয়ার পর যে নতুন মৌলের পরমাণু উৎপন্ন হয় তাকে দুহিতা পরমাণু বলা হয়।
তেজস্ক্রিয় বিকিরণের মধ্যে তিনটি বিভিন্ন প্রকৃতির রশ্মি আছে। এদের মধ্যে একটি ধনাত্মক তড়িদগ্রস্ত কণার স্রোত, এটিকে α-রশ্মি বলা হয়। অপর একটি রশ্মি ঋণাত্মক তড়িদ্গ্রস্ত কণার স্রোত, এটিকে β-রশ্মি বলা হয় এবং অন্যটি নিস্তড়িৎ বা একধরনের তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ, একে \(\gamma\)-রশ্মি বলা হয়।
α-কণার আধান প্রোটনের আধানের দ্বিগুণ। এর চিহ্ন হল \( {}_2^4He \), ভর \( 6.642\times10^{-27}\;kg \) (বা 4.0015 u) এবং এর গতিবেগ শূন্যস্থানে আলোর গতিবেগের প্রায় 0.01 অংশ থেকে 0.1 অংশের মধ্যে হয়।
β-কণার আধান একটি ইলেকট্রনের আধানের সমান অর্থাৎ \(-1.6\times10^{-19}C\)। এর চিহ্ন হল \( {}_{-1}^0e \) বা \( {}_{-1}^0\beta \) ভর \( 9.1\times10^{-31}\;kg \) এবং এর গতিবেগ শূন্যস্থানে আলোর গতিবেগের প্রায় 0.3 অংশ থেকে 0.98 অংশের মধ্যে হয়।
\(\gamma\)-রশ্মি ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্যের একধরনের তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ যার তরঙ্গদৈর্ঘ্য প্রায় 0.1 Å -এর কম। \(\gamma\)-রশ্মি নিস্তড়িৎ। এর চিহ্ন \({}_0^0\gamma\) এবং এই রশ্মি শূন্যস্থানে আলোর বেগে যায়।
কোনো তেজস্ক্রিয় মৌলের পরমাণুর α-বিঘটন হলে যে নতুন পরমাণুর সৃষ্টি হয়, তার ভর সংখ্যা 4 একক এবং পারমাণবিক সংখ্যা 2 একক কম হয়; অর্থাৎ,
কোনো তেজস্ক্রিয় মৌলের পরমাণুর β-বিঘটন হলে যে নতুন পরমাণুর সৃষ্টি হয় তার ভর সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকে এবং পারমাণবিক সংখ্যা 1 একক বেশি হয়; অর্থাৎ,
কোনো তেজস্ক্রিয় মৌলের পরমাণুর α-বিঘটন বা β-বিঘটন হলে নিউক্লিয়াস উত্তেজিত অবস্থায় থাকে।
নিউক্লিয়াস থেকে \(\gamma\)-রশ্মি নির্গত হলে পরমাণুর ভর সংখ্যা বা পারমাণবিক সংখ্যার কোনো পরিবর্তন হয় না।
ক্যানসার, লিউকিমিয়া বা থাইরয়েড রোগের চিকিৎসায় তেজস্ক্রিয় আইসোটোপ ব্যবহৃত হয়। এ ছাড়া কার্বনের রেডিয়া-আইসোটোপ 14C দ্বারা কোনো জীবাশ্ম বা পুরাতাত্ত্বিক বস্তুর বয়স নির্ণয় করা যায়।
কোনো নিউক্লিয়াস যতগুলি প্রোটন ও নিউট্রন নিয়ে গঠিত তাদের ভরের সমষ্টি অপেক্ষা নিউক্লিয়াসের ভর কিছুটা কম হয়। ভরের এই পার্থক্যকে ভর ত্রুটি (mass defect) বলা হয়। ভর ত্রুটির তুল্য শক্তিই হল বন্ধন-শক্তি।
নিউক্লিয়ন প্রতি বন্ধন-শক্তি 8 MeV -এর কাছাকাছি হলে নিউক্লিয়াস স্থায়ী হয়। 62Ni -এর নিউক্লিয়ন প্রতি বন্ধন-শক্তি সর্বোচ্চ এবং এর মান প্রায় 8.8 MeV I
নিউক্লীয় বিভাজন – নিউক্লীয় বিভাজন হল একধরনের কেন্দ্রক বিক্রিয়া যেখানে কোনো ভারী নিউক্লিয়াস প্রায় সমান ভরের দুটি কেন্দ্রকে বিভাজিত হয় এবং কয়েকটি নিউট্রন, \(\gamma\)-রশ্মি এবং প্রচণ্ড শক্তির উদ্ভব হয়।
নিউক্লীয় বিভাজনের একটি উদাহরণ –
\({}_{92}^{235}U\) নিউক্লিয়াসকে ধীরগতিসম্পন্ন নিউট্রন দিয়ে আঘাত করলে নিউক্লীয় বিভাজনের সমীকরণটি হল –
\({}_{92}^{235}U+{}_0^1n\rightarrow{}_{92}^{236}U^\ast\rightarrow{}_{56}^{141}Ba+{}_{36}^{92}Kr+3{}_0^1n+200.6MeV\) (প্রায়)
নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটর হল এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে নিউক্লীয় বিভাজনকে বিশেষ পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখে, নিউক্লীয় বিভাজনে উৎপন্ন তাপশক্তিকে তড়িৎশক্তিতে রূপান্তরিত করে অল্প সময়ে বিপুল শক্তি উৎপন্ন করা যায়।
নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটরে 1 kg পরিমাণ \({}_{92}^{235}U\) ব্যবহার করলে যে তাপশক্তি উৎপন্ন হয় (প্রায় \(7.2\times10^{13}J\)) তা 1 kg কয়লা পুড়িয়ে উৎপন্ন তাপের (প্রায় \(2.4\times10^7J\)) প্রায় 30 লক্ষ গুণ।
নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটরে উৎপন্ন বিদ্যুৎ বর্তমান শক্তি সংকটের যুগে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটরের যেমন অনেক ভালো দিক আছে তেমনই এর থেকে বিপদও আছে। এর মূল বিপদ হল অনিয়ন্ত্রিত তেজস্ক্রিয় রশ্মির নির্গমন। যার কুফল আমরা দেখেছি ইউক্রেনের চেরনোবিল ও জাপানের ফুকুশিমায়।
নিউক্লীয় সংযোজন – যে নিউক্লীয় বিক্রিয়ায় একাধিক হালকা নিউক্লিয়াস যুক্ত হয়ে একটি ভারী নিউক্লিয়াস গঠন করে তাকে নিউক্লীয় সংযোজন বলে।
নিউক্লীয় সংযোজনের একটি উদাহরণ হল –
\({}_1^2H+{}_1^2H\rightarrow{}_2^3He+{}_0^1n+3.27MeV\)নিউক্লীয় সংযোজনে নির্গত শক্তি, নিউক্লীয় বিভাজনের তুলনায় বেশি। 1 g হাইড্রোজেনের সংযোজনে নির্গত শক্তি 1 g ইউরেনিয়ামের \(\left({}_{92}^{235}U\right)\) বিভাজনে নির্গত শক্তির তুলনায় প্রায় 7.3 গুণ।
যে-কোনো নক্ষত্র, যেমন সূর্যের তাপশক্তির মূল উৎস হল নিউক্লীয় সংযোজন। নক্ষত্রের মূল জ্বালানি হল হাইড্রোজেন। নক্ষত্রে সংযোজন বিক্রিয়া কতকগুলি চক্রের মাধ্যমে সংঘটিত হয়।
আমরা আমাদের আর্টিকেলে দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞানের সপ্তম অধ্যায় ‘পরমাণুর নিউক্লিয়াস’ এর বিষয়সংক্ষেপ নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য বা চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি দশম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।