এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – পরমাণুর নিউক্লিয়াস – সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর

আমরা আমাদের আর্টিকেলে দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞানের সপ্তম অধ্যায় ‘পরমাণুর নিউক্লিয়াস’ এর কিছু সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – পরমাণুর নিউক্লিয়াস – সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর
মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – পরমাণুর নিউক্লিয়াস – সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর

তেজস্ক্রিয়তার সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর

Contents Show

তেজস্ক্রিয়তা কাকে বলে?

যে ধর্মের জন্য সাধারণত কিছু উচ্চ পারমাণবিক ভর সংখ্যাবিশিষ্ট মৌল সব অবস্থায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এক বিশেষ ধরনের অদৃশ্য বিকিরণ নিঃসরণ করে এবং নতুন মৌলের পরমাণুতে পরিণত হয় তাকে তেজস্ক্রিয়তা বলা হয়।

স্বাভাবিক তেজস্ক্রিয় মৌল ও স্বাভাবিক তেজস্ক্রিয়তা কাকে বলে?

কতকগুলি প্রাকৃতিক মৌল স্বাভাবিকভাবেই তেজস্ক্রিয় রশ্মি বিকিরণ করে এদের স্বাভাবিক তেজস্ক্রিয় মৌল বলা হয়। যেমন – Po (পোলোনিয়াম), Ra (রেডিয়াম), U (ইউরেনিয়াম)।

স্বাভাবিক তেজস্ক্রিয় মৌলের তেজস্ক্রিয়তাকেই স্বাভাবিক তেজস্ক্রিয়তা বলা হয়।

84 থেকে 92 পরমাণু ক্রমাঙ্ক পর্যন্ত সব মৌল ও তাদের আইসোটোপগুলি উদাহরণ দাও।

84 থেকে 92 পরমাণু ক্রমাঙ্ক পর্যন্ত সব মৌল ও তাদের আইসোটোপগুলি তেজস্ক্রিয়। যেমন – 84Po (পোলোনিয়াম), 85At (অ্যাস্টাটিন), 86Ra (রেডন), 87Fr (ফ্রান্সিয়াম), 88Ra (রেডিয়াম), 89AC (অ্যাকটিনিয়াম), 90Th (থোরিয়াম), 91Pa (প্রোট্যাক্টিনিয়াম), 92U (ইউরেনিয়াম)।

তেজস্ক্রিয়তার কারণ কী?

যেসব মৌলের নিউক্লিয়াসের নিউট্রন এবং প্রোটন সংখ্যার অনুপাত 1.5 -এর চেয়ে বেশি সেই নিউক্লিয়াসগুলি অস্থায়ী হয়। এগুলি স্বতঃস্ফূর্তভাবে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ করে স্থায়ী হতে চেষ্টা করে। যেসব মৌলের পারমাণবিক সংখ্যা 82 -এর বেশি অথবা পারমাণবিক গুরুত্ব 206 -এর বেশি সেই মৌলগুলি তেজস্ক্রিয়া প্রদর্শন করে।

তেজস্ক্রিয় মৌল কাকে বলে?

যেসব মৌলের পরমাণু সব অবস্থায় স্বতঃস্ফূর্তভাবে এক বিশেষ ধরনের অদৃশ্য বিকিরণ নিঃসরণ করে নতুন মৌলের পরমাণুতে পরিণত হয় সেই মৌলগুলিকে তেজস্ক্রিয় মৌল বলা হয়। 

তেজস্ক্রিয়তার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখো।

তেজস্ক্রিয়তার বৈশিষ্ট্যগুলি হল –

  • তেজস্ক্রিয় মৌল থেকে যে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হয় তা ভেদন ক্ষমতাসম্পন্ন। এই রশ্মি অস্বচ্ছ কাগজ বা খুব পাতলা ধাতব পাত সহজেই ভেদ করতে পারে।
  • তাপ, চাপ, আলোক, তড়িৎক্ষেত্র বা চৌম্বক ক্ষেত্র কোনো কিছুর প্রয়োগে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গমন বন্ধ করা যায় না।
  • তেজস্ক্রিয় মৌলগুলির রাসায়নিক পরিবর্তন হয়ে অন্য যৌগ গঠন করলেও তার তেজস্ক্রিয় ধর্মের পরিবর্তন হয় না।
  • কোনো মৌলের তেজস্ক্রিয়তা সম্পূর্ণ নিউক্লিয়াসজনিত ঘটনা, এর সঙ্গে ইলেকট্রন-বিন্যাসের কোনো সম্পর্ক নেই।
  • তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গমনের ফলে নিউক্লিয়াসের গঠনের পরিবর্তন হয়। অর্থাৎ নিউক্লিয়াসে প্রোটন ও নিউট্রন সংখ্যার পরিবর্তন হয় তাই নতুন মৌল উৎপন্ন হয়।
  • তেজস্ক্রিয় ভাঙনের সময় একই মৌল থেকে α-কণা বা β-কণা নির্গত হয় না। তবে \(\gamma\)-রশ্মি কখনও α-রশ্মির সঙ্গে বা কখনও β-রশ্মির সঙ্গে নির্গত হয়।
  • তেজস্ক্রিয় বিকিরণ জীবকোশের পক্ষে ক্ষতিকারক।
  • তেজস্ক্রিয় রশ্মি গ্যাসকে আয়নিত করতে পারে এবং এটির ফোটোগ্রাফিক প্লেটের ওপর প্রভাব আছে।

কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা কাকে বলে? তিনটি কৃত্রিম তেজস্ক্রিয় মৌলের উদাহরণ দাও।

কতকগুলি অতেজস্ক্রিয় মৌলকে কৃত্রিম উপায়ে তেজস্ক্রিয় মৌলে রূপান্তরিত করা হয়। কৃত্রিম উপায়ে উৎপন্ন এইসব মৌলের তেজস্ক্রিয়তাকে কৃত্রিম তেজস্ক্রিয়তা বলা হয়।

তিনটি কৃত্রিম তেজস্ক্রিয় মৌল – \({}_{14}^{27}Si,\;{}_{11}^{24}Na,\;{}_{15}^{32}P\)।

কোনো মৌলের তেজস্ক্রিয়তা সম্পূর্ণ নিউক্লিয়াস জনিত ঘটনা – ব্যাখ্যা করো।

যে মৌলগুলি তেজস্ক্রিয় তাদের রাসায়নিক পরিবর্তন হয়ে অন্য যৌগ গঠন করলেও তার তেজস্ক্রিয় ধর্মের কোনো পরিবর্তন হয় না। যেমন – রেডিয়াম তেজস্ক্রিয় এবং রেডিয়াম ক্লোরাইডও তেজস্ক্রিয়। কোনো মৌলের রাসায়নিক ধর্ম বিভিন্ন কক্ষে ইলেকট্রন বিন্যাসের ওপর নির্ভরশীল। যেহেতু রাসায়নিক পরিবর্তনের পরেও তেজস্ক্রিয় মৌলের তেজস্ক্রিয়তা বর্তমান থাকে তাই তেজস্ক্রিয়তার সঙ্গে মৌলের পরমাণুর ইলেকট্রন বিন্যাসের কোনো সম্পর্ক নেই। আবার, তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গমণের ফলে নিউক্লিয়াসের গঠনের পরিবর্তন হয় অর্থাৎ নিউক্লিয়াসে প্রোটন ও নিউট্রন সংখ্যার পরিবর্তন হয় এবং নতুন মৌল উৎপন্ন হয়। তাই বলা যায় – কোনো মৌলের তেজস্ক্রিয়তা সম্পূর্ণ নিউক্লিয়াসজনিত ঘটনা।

তেজস্ক্রিয় রশ্মির নামকরণ উল্লেখ করো।

1896 খ্রিস্টাব্দে ফরাসি বিজ্ঞানী অঁরি বেকারেল (Henry Becquerel) X-রশ্মির সঙ্গে প্রতিপ্রভার সম্পর্ক নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কার করেন। সেই সময় ইউরেনিয়াম ধাতুর একটি লবণ পটাশিয়াম ইউরেনিল সালফেটকে প্রতিপ্রভ বস্তু হিসেবে ধরা হত। তিনি ভাবলেন এই ধরনের প্রতিপ্রভ বস্তু থেকে X-রশ্মি নির্গত হতে পারে। এইজন্য কালো কাগজে মোড়া একটি ফোটোগ্রাফিক প্লেটের ওপর এই লবণটিকে রেখে সূর্যালোকে রাখেন। দেখা যায় ফোটোগ্রাফিক প্লেটের ওপর লবণ রাখার জায়গাটা কালো হয়ে গেছে। এ থেকে তিনি এই সিদ্ধান্তে এলেন যে, সূর্যালোকে রাখলে এই লবণ থেকে ভেদন ক্ষমতাসম্পন্ন একপ্রকার অদৃশ্য রশ্মি নির্গত হয়। সেই সময় প্যারিস কয়েকদিন মেঘলা থাকায় তিনি লবণটিকে কালো কাগজে মুড়ে ফোটোগ্রাফিক প্লেটের ওপর রেখে ডেস্কের ড্রয়ারে রেখে দেন। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে দেখা যায় অন্ধকারেও ফোটোগ্রাফিক প্লেটের ওপর লবণ রাখার জায়গাটি কালো হয়ে গেছে। পরবর্তী বিভিন্ন পরীক্ষার দ্বারা তিনি এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, এই রশ্মি নির্গমনকে কোনোভাবে বন্ধ করা যায় না, এই রশ্মি পদার্থ থেকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে নির্গত হয়। প্রথমে এই রশ্মির নাম ছিল বেকারেল রশ্মি, পরে বিজ্ঞানী মাদাম কুরি এই রশ্মির নাম দেন তেজস্ক্রিয় রশ্মি।

তেজস্ক্রিয় রশ্মির নামকরণ উল্লেখ করো।

পোলোনিয়াম ও রেডিয়াম আবিষ্কার সম্পর্কে লিখ?

1898 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী মাদাম কুরি তাঁর স্বামী বিজ্ঞানী পিয়ের কুরির সহযোগিতায় ইউরেনিয়ামের একটি খনিজ পিচব্লেন্ড নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে লক্ষ করেন যে, ইউরেনিয়ামের যা তেজস্ক্রিয়তা হওয়ার কথা এই যৌগের তেজস্ক্রিয়তা তার চেয়ে অনেক বেশি। এরপর তাঁরা এক কঠিন পরীক্ষার সাহায্যে কয়েকটন পিচব্লেন্ড থেকে সামান্য পরিমাণ এক নতুন তেজস্ক্রিয় মৌল আবিষ্কার করেন। বিজ্ঞানী মাদাম কুরির জন্মভূমি পোল্যান্ডের নামানুসারে এই নতুন মৌলের নাম রাখা হয় পোলোনিয়াম (Po)। পোলোনিয়ামের তেজস্ক্রিয়তা ইউরেনিয়ামের তুলনায় হাজার গুণ। এর কয়েক বছর পর মাদাম কুরি ইউরেনিয়ামের তুলনায় 10 লক্ষ গুণ তেজস্ক্রিয়তাসম্পন্ন রেডিয়াম (Ra) আবিষ্কার করেন। তেজস্ক্রিয়তা আবিষ্কারের জন্য 1903 সালে অঁরি বেকারেল, পিয়ের কুরি ও মাদাম কুরিকে পদার্থবিদ্যায় নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় এবং পোলোনিয়াম ও রেডিয়াম আবিষ্কারের জন্য 1911 সালে মাদাম কুরিকে রসায়নে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়।

পোলোনিয়াম ও রেডিয়াম আবিষ্কার সম্পর্কে লিখ?

জনক পরমাণু ও দুহিতা পরমাণু কাকে বলে?

তেজস্ক্রিয় মৌলের যে পরমাণুর তেজস্ক্রিয় বিঘটন হয় তাকে জনক পরমাণু এবং ওই পরমাণুর নিউক্লিয়াস থেকে তেজস্ক্রিয় রশ্মি নির্গত হওয়ার পর যে নতুন মৌলের পরমাণু উৎপন্ন হয় তাকে দুহিতা পরমাণু বলা হয়।

তেজস্ক্রিয়তা কোনো নির্দিষ্ট মৌলের বৈশিষ্ট্য নয় বরং কোনো মৌলের নির্দিষ্ট আইসোটোপের বৈশিষ্ট্য – উদাহরণসহ বোঝাও।

কার্বনের \({}_6^{12}C\) আইসোটোপটি তেজস্ক্রিয় নয়, কিন্তু \({}_6^{14}C\) আইসোটোপটি তেজস্ক্রিয়। আবার \({}_{92}^{235}U\) ও \({}_{92}^{238}U\) -ইউরেনিয়ামের এই আইসোটোপ দুটির তেজস্ক্রিয়তা একইরকম নয়, তাই বলা যায় তেজস্ক্রিয়তা কোনো নির্দিষ্ট মৌলের বৈশিষ্ট্য নয় বরং কোনো মৌলের নির্দিষ্ট আইসোটোপের বৈশিষ্ট্য।

সংকট দূরত্ব (critical distance) কী?

সংকট দূরত্ব (critical distance) হল এমন দূরত্ব যা অতিক্রম করার পর α-কণার, গ্যাসকে আয়নিত করার ক্ষমতা, ফোটোগ্রাফিক প্লেটে বিক্রিয়া ঘটানোর ক্ষমতা ও প্রতিপ্রভা সৃষ্টি করার ক্ষমতা তিনটি ধর্ম লোপ পায়।

একটি α-কণা নির্গমনের ফলে কোনো তেজস্ক্রিয় মৌলের নিউক্লিয়াসের কীরূপ পরিবর্তন হয়?

কোনো তেজস্ক্রিয় মৌলের নিউক্লিয়াস থেকে একটি α-কণা নির্গত হলে যে নতুন পরমাণুর সৃষ্টি হয় তার ভর সংখ্যা 4 একক কম হয় ও পরমাণু ক্রমাঙ্ক 2 একক কম হয়।

একটি α-কণা নির্গমনের ফলে কোনো তেজস্ক্রিয় মৌলের নিউক্লিয়াসের কীরূপ পরিবর্তন হয়?

একটি β-কণা নির্গমনের ফলে কোনো তেজস্ক্রিয় মৌলের নিউক্লিয়াসের কীরূপ পরিবর্তন হয়?

কোনো তেজস্ক্রিয় মৌলের নিউক্লিয়াস থেকে একটি β-কণা নির্গত হলে যে নতুন পরমাণুর সৃষ্টি হয় তার ভর সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকে কিন্তু পরমাণু ক্রমাঙ্ক 1 একক বেশি হয়।

একটি β-কণা নির্গমনের ফলে কোনো তেজস্ক্রিয় মৌলের নিউক্লিয়াসের কীরূপ পরিবর্তন হয়?

\(\gamma\)-রশ্মি নির্গমনের ফলে কোনো তেজস্ক্রিয় মৌলের নিউক্লিয়াসের কীরূপ পরিবর্তন হয়?

কোনো তেজস্ক্রিয় মৌলের পরমাণুর α বা β বিঘটন হলে নিউক্লিয়াস উত্তেজিত অবস্থায় থাকে। সেই অবস্থা থেকে ভৌম অবস্থায় ফিরে আসার জন্য দুহিতা পরমাণুর নিউক্লিয়াস \(\gamma\)-রশ্মি নির্গমন করে। \(\gamma\)-রশ্মির নির্গমন হলে পরমাণুর ভর সংখ্যা বা পরমাণু ক্রমাঙ্কের কোনো পরিবর্তন হয় না।

রেডিয়াম \(\left({}_{86}^{226}Ra\right)\) একটি α-কণা নির্গমন করে রেডনে (Rn) পরিণত হয়। রেডনের ভর সংখ্যা ও পরমাণু ক্রমাঙ্ক নির্ণয় করো।

কোনো তেজস্ক্রিয় মৌলের নিউক্লিয়াস থেকে একটি α-কণা নির্গত হলে যে নতুন পরমাণুর সৃষ্টি হয় তার ভরসংখ্যা 4 একক কম হয় ও পরমাণু ক্রমাঙ্ক 2 একক কম হয়।

∴ রেডনের ভর সংখ্যা = 226 – 4 = 222 ও পরমাণু ক্রমাঙ্ক = 86 – 2 = 84

থোরিয়াম \(\left({}_{90}^{234}Th\right)\) একটি β-কণা নির্গমন করে প্রোট্যাকটিনিয়ামে (Pa) পরিণত হয়। প্রোট্যাকটিনিয়ামের ভর সংখ্যা ও পরমাণু ক্রমাঙ্ক নির্ণয় করো।

কোনো তেজস্ক্রিয় মৌলের নিউক্লিয়াস থেকে একটি β-কণা নির্গত হলে যে নতুন পরমাণুর সৃষ্টি হয় তার ভর সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকে কিন্তু পরমাণু ক্রমাঙ্ক 1 একক বেশি হয়।

∴ প্রোট্যাকটিনিয়ামের ভর সংখ্যা = 234 ও পরমাণু ক্রমাঙ্ক = 90 + 1 = 91

তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে কত প্রকার রশ্মি নির্গত হয় এবং কী কী?

তেজস্ক্রিয় পদার্থ থেকে তিনধরনের রশ্মি নির্গত হয়। এই তিনধরনের রশ্মি হল – আলফা (α) রশ্মি, বিটা (β) রশ্মি ও গামা (\(\gamma\)) রশ্মি।

α-রশ্মি, β-রশ্মি ও \(\gamma\)-রশ্মির ধর্মের তুলনা করো।

α-রশ্মি, β-রশ্মি ও \(\gamma\)-রশ্মির ধর্মের তুলনা –

ধর্মα-রশ্মিβ-রশ্মি\(\gamma\)-রশ্মি
প্রকৃতিα-রশ্মি হল ধনাত্মক আধানবাহী কণার স্রোত।β-রশ্মি হল ঋণাত্মক আধানবাহী কণার স্রোত।\(\gamma\)-রশ্মি হল ক্ষুদ্র তরঙ্গদৈর্ঘ্য-বিশিষ্ট একধরনের তড়িৎচুম্বকীয় তরঙ্গ, এটি কোনো কণার স্রোত নয়।
আধানএকটি α-কণার আধান একটি প্রোটনের আধানের দ্বিগুণ বা 3.2 × 10-19Cএকটি β-কণার আধান একটি ইলেকট্রনের আধানের সমান বা -1.6 × 10-19C\(\gamma\)-রশ্মি নিস্তড়িৎ।
ভরএকটি α-কণার ভর প্রোটনের ভরের প্রায় 4 গুণ। এর ভর হল 4.0015 u। এটি আসলে একটি হিলিয়াম নিউক্লিয়াস (He2+) অর্থাৎ এটি 2টি প্রোটন ও 2টি নিউট্রন নিয়ে গঠিত।একটি β-কণার ভর একটি ইলেকট্রনের ভরের সমান বা 9.1 × 10-31kg\(\gamma\)-রশ্মির স্থির ভর শূন্য।
গতিবেগα-রশ্মির প্রারম্ভিক গতিবেগ শূন্যস্থানে আলোর বেগের 0.01 অংশ থেকে 0.1 অংশের মধ্যে হয়।β-রশ্মির প্রারম্ভিক গতিবেগ শূন্যস্থানে আলোর বেগের 0.3 অংশ থেকে 0.98 অংশের মধ্যে হয়।\(\gamma\)-রশ্মির গতিবেগ শূন্যস্থানে আলোর বেগের সমান।
তড়িৎ ও চৌম্বক ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়াα-রশ্মি তড়িৎক্ষেত্র বা চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা বিক্ষিপ্ত হয়।β-রশ্মি তড়িৎক্ষেত্র বা চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা বিক্ষিপ্ত হয়।\(\gamma\)-রশ্মি তড়িৎক্ষেত্র বা চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা বিক্ষিপ্ত হয় না।
ভেদন ক্ষমতাβ ও \(\gamma\)-রশ্মির তুলনায় α-রশ্মির ভেদন ক্ষমতা কম। পাতলা ধাতব পাত, যেমন – 0.02 mm Al পাতকে α-রশ্মি ভেদ করতে পারে, কিন্তু 0.1 mm বেধের Al পাত α-রশ্মিকে থামিয়ে দেয়।β-রশ্মির ভেদন ক্ষমতা α-রশ্মির তুলনায় বেশি কিন্তু \(\gamma\)-রশ্মির তুলনায় কম। 2 mm পুরু Al পাত β-রশ্মি ভেদ করতে পারে, কিন্তু 5 mm বেধের Al পাত β-রশ্মিকে থামিয়ে দেয়।\(\gamma\)-রশ্মির ভেদন ক্ষমতা α-রশ্মি ও β-রশ্মির চেয়ে বেশি। \(\gamma\)-রশ্মি 100 cm পুরু Al পাত ভেদ করে যেতে পারে। α, β ও \(\gamma\)-রশ্মির ভেদন ক্ষমতার অনুপাত 1 : 100 : 10000
গ্যাসকে আয়নিত করার ক্ষমতা α-রশ্মির গ্যাসকে আয়নিত করার ক্ষমতা সবচেয়ে বেশি। α, β ও \(\gamma\)-রশ্মির গ্যাসকে আয়নিত করার ক্ষমতার অনুপাত 10000 : 100 : 1β-রশ্মির গ্যাসকে আয়নিত করার ক্ষমতা \(\gamma\)-রশ্মির চেয়ে বেশি কিন্তু α-রশ্মির চেয়ে কম।\(\gamma\)-রশ্মির গ্যাসকে আয়নিত করার ক্ষমতা α ও β-রশ্মির তুলনায় কম।

পরমাণুর নিউক্লিয়াসে ইলেকট্রন না থাকা সত্ত্বেও তেজস্ক্রিয় মৌলের পরমাণু থেকে β-কণা রূপে ইলেকট্রন নির্গত হয় কেন?

যে তেজস্ক্রিয় মৌলের নিউক্লিয়াস থেকে β-কণা নির্গত হয় সেই পরমাণুর নিউক্লিয়াসের একটি নিউট্রন (n) বিভাজিত হয়ে একটি প্রোটন (p) ও একটি ইলেকট্রন (e) উৎপন্ন হয়। উৎপন্ন প্রোটনটি নিউক্লিয়াসে থেকে যায় এবং ইলেকট্রনটি তীব্র বেগে নিউক্লিয়াস থেকে β-কণা হিসেবে বেরিয়ে আসে। এই প্রক্রিয়ায় শূন্য ভরবিশিষ্ট একটি আধানহীন কণা অ্যান্টিনিউট্রিনো (\(\overset-v\)) নির্গত হয়। \({}_0^1n\rightarrow{}_1^1p+{}_{-1}^0e+\overset-v\)

সুতরাং পরমাণুর নিউক্লিয়াসে ইলেকট্রন না থাকা সত্ত্বেও তেজস্ক্রিয় মৌলের পরমাণু থেকে β-কণা রূপে ইলেকট্রন নির্গত হয়।

α-কণা বা β-কণা নির্গত হওয়ার আগে কি \(\gamma\)-রশ্মি নির্গত হতে পারে?

কোনো তেজস্ক্রিয় মৌলের পরমাণুর α বা β বিঘটন হলে নিউক্লিয়াস উত্তেজিত অবস্থায় থাকে। সেই অবস্থা থেকে ভৌম অবস্থায় ফিরে আসার জন্য দুহিতা পরমাণুর নিউক্লিয়াস \(\gamma\)-রশ্মি নির্গমন করে। তাই α-কণা বা β-কণা নির্গত হওয়ার আগে \(\gamma\)-রশ্মি নির্গত হতে পারে না।

β-কণা ও সাধারণ ইলেকট্রনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

β-কণা ও সাধারণ ইলেকট্রনের মধ্যে পার্থক্য –

β-কণাসাধারণ ইলেকট্রন
কোনো তেজস্ক্রিয় পরমাণুর নিউক্লিয়াস থেকে একটি নিউট্রন বিভাজিত হয়ে একটি প্রোটন, একটি ইলেকট্রন এবং একটি আধানহীন, ভরহীন কণিকা অ্যান্টিনিউট্রিনো উৎপন্ন হয়। উৎপন্ন ইলেকট্রনটি β-কণা রূপে তীব্রবেগে বেরিয়ে আসে।সাধারণ ইলেকট্রন থাকে পরমাণুর বিভিন্ন কক্ষে।
তেজস্ক্রিয় মৌলের নিউক্লিয়াস থেকে একটি β-কণা নির্গত হলে উৎপন্ন নতুন পরমাণুর ভর সংখ্যা একই থাকে কিন্তু পরমাণু ক্রমাঙ্ক 1 একক বৃদ্ধি পায়।কোনো পরমাণু থেকে সাধারণ ইলেকট্রন নির্গত হলে পরমাণু ধনাত্মক আয়নে পরিণত হয়।

নীচের বিক্রিয়াগুলি সম্পূর্ণ করো।
\((i) {}_{88}^{226}Ra\rightarrow?+{}_{86}^{222}Rn\\\)
\((ii) {}_6^{14}C\rightarrow?+{}_7^{14}N\\\)
\((iii) {}_{90}^{234}Th\rightarrow{}_{91}^{234}Pa+?\\\)
\((iv) {}_{92}^{238}U\rightarrow{}_?^?Th+{}_2^4{He}\\\)

\((i) {}_{86}^{226}Ra\rightarrow{}_2^4He+{}_{86}^{222}Rn\\\)
\((ii) {}_6^{14}C\rightarrow{}_{-1}^0e+{}_7^{14}N\\\)
\((iii) {}_{90}^{234}Th\rightarrow{}_{91}^{234}Pa+{}_{-1}^0e\\\)
\((iv) {}_{92}^{238}U\rightarrow{}_{90}^{234}Th+{}_2^4{He}\\\)

একটি নিউক্লিয়াস X থেকে নিম্নলিখিতভাবে α-কণা নির্গত হয়।
\({}_{92}^AX\rightarrow{}_Z^{228}Y+\alpha\)
উপরিউক্ত বিক্রিয়া থেকে A ও Z -এর মান নির্ণয় করো।

কোনো তেজস্ক্রিয় নিউক্লিয়াস থেকে একটি α-কণা নির্গত হলে যে নতুন পরমাণুর সৃষ্টি হয় তার ভর সংখ্যা 4 একক এবং পরমাণু ক্রমাঙ্ক 2 একক কমে যায়।

∴ A = 228 + 4 = 232

এবং Z = 92 – 2 = 90

তেজস্ক্রিয় পরিবর্তন ও রাসায়নিক পরিবর্তনের পার্থক্য লেখো।

তেজস্ক্রিয় পরিবর্তন ও রাসায়নিক পরিবর্তনের পার্থক্য –

তেজস্ক্রিয় পরিবর্তনরাসায়নিক পরিবর্তন
তেজস্ক্রিয় পরিবর্তন পরমাণুর নিউক্লিয়াসজনিত ঘটনা।রাসায়নিক পরিবর্তন পরমাণুর যোজ্যতা কক্ষের ইলেকট্রনজনিত ঘটনা।
তেজস্ক্রিয় পরিবর্তন বাহ্যিক চাপ, আলোক, অনুঘটক, তড়িৎক্ষেত্র বা চৌম্বক ক্ষেত্র দ্বারা প্রভাবিত হয় না।রাসায়নিক পরিবর্তন বাহ্যিক চাপ, আলোক, অনুঘটক প্রভৃতি দ্বারা প্রভাবিত হয়।
তেজস্ক্রিয় পরিবর্তন একমুখী।রাসায়নিক পরিবর্তন একমুখী ও উভমুখী দু-রকমই হতে পারে।
তেজস্ক্রিয় পরিবর্তনে নতুন মৌলের সৃষ্টি হয়।রাসায়নিক পরিবর্তনে যৌগ উৎপন্ন হয় কিন্তু নতুন মৌল উৎপন্ন হয় না।
তেজস্ক্রিয় পরিবর্তনে উৎপন্ন শক্তি অনেক বেশি।রাসায়নিক পরিবর্তনে উৎপন্ন শক্তি তেজস্ক্রিয় পরিবর্তনে তুলনায় অনেক কম, তবে রাসায়নিক পরিবর্তনে কখনো-কখনো শক্তির শোষণও হয়।

α ও β -কণাগুলি আধানযুক্ত। কিন্তু তেজস্ক্রিয় মৌল থেকে α ও β -কণা নির্গমনের ফলে প্রাপ্ত মৌলের পরমাণুগুলি নিস্তড়িৎ হয় কীভাবে?

কোনো তেজস্ক্রিয় মৌলের নিউক্লিয়াস থেকে α-কণা নির্গত হলে পরমাণুটি আর নিস্তড়িৎ থাকে না, পরমাণুর আধান হয় -2e (যেখানে e = 1.6 × 10-19C)। তখন ওই পরমাণু পারিপার্শ্বে দুটি ইলেকট্রন ত্যাগ করে নিস্তড়িৎ হয়।

আবার কোনো তেজস্ক্রিয় মৌলের নিউক্লিয়াস থেকে β-কণা নির্গত হলে পরমাণুটি আর নিস্তড়িৎ থাকে না, পরমাণুর আধান হয় +e। তখন ওই পরমাণু পারিপার্শ্ব থেকে একটি ইলেকট্রন গ্রহণ করে নিস্তড়িৎ হয়।

যে-কোনো তেজস্ক্রিয় ধাতুর খনিজতে লেড থাকে কেন?

কোনো ভারী তেজস্ক্রিয় মৌলের তেজস্ক্রিয় বিভাজন পরপর হতে থাকলে একসময় লেডের (82Pb) কোনো অতেজস্ক্রিয় আইসোটোপে পরিণত হয়। তারপর আর তেজস্ক্রিয় বিঘটন হয় না। তাই যে-কোনো তেজস্ক্রিয় ধাতুর খনিজতে লেড পাওয়া যায়।

কোনো কোনো তেজস্ক্রিয় ধাতুর খনিতে হিলিয়াম গ্যাস থাকে কেন?

তেজস্ক্রিয় ধাতুর খনিতে যদি তেজস্ক্রিয় মৌল থেকে α-কণা নির্গমন হয় তাহলে ওই α-কণা গ্যাসকে আয়নিত করে এবং পরিবেশ থেকে 2টি ইলেকট্রন গ্রহণ করে হিলিয়াম পরমাণুতে পরিণত হয় এবং হিলিয়াম গ্যাসরূপে খনিতে থেকে যায়।

তেজস্ক্রিয়তার কয়েকটি ব্যবহার লেখো।

তেজস্ক্রিয়তার আবিষ্কার বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখাকে যেমন সমৃদ্ধ করেছে তেমনই দৈনন্দিন জীবনে তা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে –

চিকিৎসাবিজ্ঞানে – ক্যানসার রোগের চিকিৎসায় ক্যানসার আক্রান্ত কোশগুলো নষ্ট করার কাজে তেজস্ক্রিয় মৌল যেমন রেডিয়াম, কোবাল্ট (60Co) ব্যবহৃত হয়। লিউকিমিয়া, মস্তিষ্কের টিউমার রোগের চিকিৎসায় তেজস্ক্রিয় ফসফরাস (32P) ব্যবহৃত হয়। থাইরয়েড রোগের চিকিৎসায় তেজস্ক্রিয় আয়োডিন (131I) ব্যবহৃত হয়।

পৃথিবীর বয়স নির্ণয়ে – পৃথিবীর যে-কোনো স্থানে প্রাপ্ত ইউরেনিয়ামের আকরিক থেকে সিসার আইসোটোপ (\({}_{82}^{206}Pb\)) পাওয়া যায়। পরীক্ষার দ্বারা ওই আকরিকে ইউরেনিয়াম ও সিসার অনুপাত নির্ণয় করে পৃথিবীর বয়স নির্ণয় করা যায়।

14C দ্বারা বয়স নির্ণয়ে – কোনো জীবাশ্ম বা কোনো পুরাতাত্ত্বিক বস্তুর মধ্যে 14C ও 12C -এর অনুপাত নির্ণয় করে তাদের বয়স নির্ণয় করা যায়।

এ ছাড়া প্রাণী ও উদ্ভিদের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় ও কৃষিকাজে তেজস্ক্রিয় আইসোটোপের বহুল ব্যবহার আছে।

\({}_{92}^{238}U\) কেন্দ্রক থেকে ক্রমান্বয়ে 8টি α-কণা ও 6টি β-কণা নিঃসৃত হয়ে যে নতুন মৌলিক পদার্থের সৃষ্টি হয় তার ভর সংখ্যা ও পরমাণু ক্রমাঙ্ক কত হবে?

কোনো তেজস্ক্রিয় মৌলের নিউক্লিয়াস থেকে একটি α-কণার নির্গমন হলে ভর সংখ্যা 4 কমে ও পরমাণু ক্রমাঙ্ক 2 কমে এবং একটি β-কণা নির্গত হলে ভর সংখ্যা অপরিবর্তিত থাকে কিন্তু পরমাণু ক্রমাঙ্ক 1 বাড়ে।

যেহেতু \({}_{92}^{238}U\) -এর কেন্দ্রক থেকে 8টি α-কণা ও 6টি β-কণা নির্গত হয় ফলে নতুন মৌলের ভর সংখ্যা = 238 – 4 × 8 = 206

ও পরমাণু ক্রমাঙ্ক = 92 – 2 × 8 + 1 × 6

= 92 – 16 + 6

= 82

বন্ধন-শক্তি, নিউক্লীয় বিভাজন ও নিউক্লীয় সংযোজনের সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর

1u পরিমাণ ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হলে তুল্য শক্তির পরিমাণ নির্ণয় করো।

m পরিমাণ ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হলে E = mc2 পরিমাণ শক্তি পাওয়া যায়, যেখানে c = 2.998 × 108 m/s হল শূন্যস্থানে আলোর বেগের প্রকৃত মান। তবে আমরা সাধারণত এই মানটিকে 3 × 108 m/s ই ধরে থাকি।

এখানে, m = 1u = 1.66 × 10-27kg

∴ E = mc2

বা, E = 1.66 × 10-27 × (2.998 × 108)2

= 14.92008 × 10-11 J

আবার, 1 MeV = 1.602 × 10-13 J

∴ E = \(\frac{14.92008\times10^{-11}}{1.602\times10^{-13}}\) MeV = 931.5 MeV (প্রায়)

ম্যাজিক সংখ্যা কাকে বলে?

এমন কিছু নিউক্লিয়াস আছে যাদের নিউক্লিয়াসে নিউট্রন বা প্রোটন সংখ্যা 2, 8, 20, 28, 50, 82 বা 126 হলে নিউক্লিয়াসগুলি খুব সুস্থিত হয়। এই সংখ্যাগুলিকে ম্যাজিক সংখ্যা বলা হয়।

নিউক্লিয়ন প্রতি বন্ধন শক্তি কাকে বলে? এর রাশিমালাটি লেখো।

কোনো নিউক্লিয়াসের বন্ধন-শক্তি ও নিউক্লিয়নের সংখ্যার (A) অনুপাতকে নিউক্লিয়ন প্রতি বন্ধন-শক্তি বলা হয়।

মনে করি, কোনো পরমাণুর পরমাণু ক্রমাঙ্ক Z ও ভর সংখ্যা A। একটি প্রোটন ও নিউট্রনের ভর যথাক্রমে mp ও mn

পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভর M ও শূন্যস্থানে আলোর বেগ c হলে,

∴ বন্ধন-শক্তি = {Z⋅mp + (A – Z)mn – M}c2

∴ নিউক্লিয়ন প্রতি বন্ধন-শক্তি = \(\frac{{\left\{Z⋅m_p+(A-Z)m_n-M\right\}⋅}c^2}A\)

নিউক্লিয়ন প্রতি বন্ধন-শক্তির মান কেন কমতে থাকে?

40 থেকে 120 ভর সংখ্যাবিশিষ্ট মৌলগুলির নিউক্লিয়ন প্রতি বন্ধন-শক্তির মান 8.5 MeV -এর কাছাকাছি। মৌলের ভর সংখ্যা 120 -এর বেশি হলে নিউক্লিয়ন প্রতি বন্ধন-শক্তির মান কমতে থাকে। ইউরেনিয়াম মৌলে এই মান হয় প্রায় 7.6 MeV। 

\({}_2^4He\) নিউক্লিয়াসের বন্ধন-শক্তি ও নিউক্লিয়ন প্রতি বন্ধন-শক্তি নির্ণয় করো। দেওয়া আছে \(m_p\) = 1.007276 u, \(m_n\) = 1.008665 u, \({}_2^4He\) নিউক্লিয়াসের ভর = 4.001505 u

\({}_2^4He\) নিউক্লিয়াসের ভর ত্রুটি = \(\left(2m_p+2m_n\right)-m\)

= (2 × 1.007276 + 2 × 1.008665) – 4.001505

= 0.0304 u (প্রায়)

∴ \({}_2^4He\) নিউক্লিয়াসের বন্ধন-শক্তি = 0.0304 × 931.5 MeV

= 28.3 MeV (প্রায়)

∴ \({}_2^4He\) নিউক্লিয়াসের নিউক্লিয়ন প্রতি বন্ধন-শক্তি \(=\frac{28.3}4= 7.075\;MeV\)

নিউক্লিয়ন প্রতি বন্ধন-শক্তির বিচারে প্রথম চারটি নিউক্লিয়াসে উদাহরণ দাও। 

নিউক্লিয়ন প্রতি বন্ধন-শক্তির বিচারে প্রথম চারটি নিউক্লিয়াস হল – 62Ni, 58Fe, 56Fe, 60Ni।

ভর ত্রুটি বলতে কী বোঝ?

কোনো নিউক্লিয়াস যতগুলি প্রোটন ও নিউট্রন নিয়ে গঠিত তাদের ভরের সমষ্টি অপেক্ষা নিউক্লিয়াসের ভর কিছুটা কম হয়। ভরের এই পার্থক্যকে ভর ত্রুটি বলা হয়।

বন্ধন-শক্তি কাকে বলে? বন্ধন-শক্তির রাশিমালাটি প্রতিষ্ঠা করো।

কোনো নিউক্লিয়াসকে ভেঙে ওর মধ্যে থাকা নিউক্লিয়ন-গুলিকে সম্পূর্ণ স্বাধীন কণায় পরিণত করতে প্রয়োজনীয় ন্যূনতম শক্তিকে বন্ধন-শক্তি বলা হয়।

অথবা, কোনো নিউক্লিয়াস যতগুলি প্রোটন ও নিউট্রন নিয়ে গঠিত তাদের ভরের সমষ্টি অপেক্ষা নিউক্লিয়াসের ভর কিছুটা কম হয়। ভরের এই পার্থক্যকে ভর ত্রুটি বলা হয়। ভর ত্রুটির তুল্যশক্তিই হল বন্ধন-শক্তি।

মনে করি, কোনো পরমাণুর পরমাণু ক্রমাঙ্ক Z এবং ভর সংখ্যা A

একটি প্রোটন ও নিউট্রনের ভর যথাক্রমে mp ও mn এবং পরমাণুর নিউক্লিয়াসের ভর M হলে,

ভর ত্রুটি = Z⋅mp + (A – Z)mn – M

∴ বন্ধন-শক্তি = {Z⋅mp + (A – Z)mn – M}c2 [যেখানে c হল শূন্যস্থানে আলোর বেগ]

নিউক্লীয় বিভাজন কাকে বলে?

নিউক্লীয় বিভাজন হল একধরনের কেন্দ্রক বিক্রিয়া যেখানে কোনো ভারী নিউক্লিয়াস প্রায় সমান ভরের দুটি কেন্দ্রকে বিভাজিত হয় এবং কয়েকটি নিউট্রন, \(\gamma\)-রশ্মি এবং প্রচণ্ড শক্তির উদ্ভব হয়।

উদাহরণসহ নিউক্লীয় বিভাজন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করো। কীভাবে এই প্রক্রিয়ায় শক্তি উৎপন্ন হয়?

\({}_{92}^{235}U\) নিউক্লিয়াসকে ধীরগতিসম্পন্ন নিউট্রন দিয়ে আঘাত করলে নিউক্লিয়াসটি নিউট্রন গ্রহণ করে সংযুক্ত নিউক্লিয়াস (compound nucleus) গঠন করে। সেটি অত্যন্ত দুস্থিত হওয়ায়, সঙ্গে সঙ্গে দুটি খণ্ডে বিভাজিত হয়। এদের বলা হয় বিভাজন খণ্ড (fission fragments)। বিভাজন খণ্ডগুলি হল বেরিয়াম (\({}_{56}^{141}Ba\)) ও ক্লিপটন (\({}_{36}^{92}Kr\))। এর সঙ্গে 3টি নিউট্রন, \(\gamma\)-রশ্মি নিঃসৃত হয় এবং প্রচণ্ড শক্তির উদ্ভব হয় (প্রায় 200.6 MeV)। এই নিউক্লীয় বিভাজনের সমীকরণটি হল –

U92235+n01U*92236দুস্থিত নিউক্লিয়াসB56141a+K5692r+3n01+200.6 MeV (প্রায়)

এই প্রক্রিয়ায় \({}_{92}^{235}U\) ও একটি নিউট্রনের ভরের সমষ্টি অপেক্ষা \({}_{56}^{141}Ba\), \({}_{36}^{92}Kr\) ও 3টি নিউট্রনের ভরের সমষ্টি প্রায় 0.21536 u পরিমাণ কম। এই ভর হ্রাস, আইনস্টাইনের \(E=mc^2\) সমীকরণ অনুযায়ী শক্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং প্রায় 200.6 MeV শক্তি উৎপন্ন হয়।

শৃঙ্খল বিক্রিয়া বলতে কী বোঝ?

নিউট্রনের আঘাতে প্রতিটি 235U পরমাণুর নিউক্লীয় বিভাজনের সময় 2টি বা 3টি উচ্চগতিসম্পন্ন নিউট্রন নির্গত হয়। এদের গৌণ নিউট্রন বলা হয়। এই গৌণ নিউট্রনগুলি পাশ্ববর্তী ইউরেনিয়াম নিউক্লিয়াসকে আঘাত করে আবার নিউক্লীয় বিভাজন ঘটায় ও নতুন নিউট্রন উৎপন্ন করে। যদি ইউরেনিয়াম পিণ্ডের ভর এমন হয় যাতে গৌণ নিউট্রন পিণ্ড ছেড়ে যাওয়ার আগেই আবার নিউক্লীয় বিভাজন ঘটায় তাহলে নিউক্লীয় বিভাজন স্বতঃচালিত হয়। এইরূপ স্বতঃচালিত বিক্রিয়াকে শৃঙ্খল বিক্রিয়া বলা হয়।

হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমার ক্ষতিকর প্রভাব আলোচনা করো।

হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে যে পরমাণু বোমা ফেলা হয়েছিল তা নিউক্লীয় বিভাজন প্রক্রিয়া ও শৃঙ্খল বিক্রিয়া নীতির ভিত্তিতে তৈরি। 1945 খ্রিস্টাব্দের 6 আগস্ট হিরোশিমায় ইউরেনিয়াম বোমা ও 1945 খ্রিস্টাব্দের 9 আগস্ট নাগাসাকিতে প্লুটোনিয়াম বোমা ফেলা হয়েছিল। প্লুটোনিয়াম বোমার ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা ইউরেনিয়াম বোমার থেকে বেশি।

পরমাণু বোমার ক্ষতিকর প্রভাব বিশাল। এই বোমা ফেলার কয়েক মিনিটের মধ্যে শহরের অর্ধেক নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিল। শুধু হিরোশিমাতেই প্রায় 60000 থেকে 70000 মানুষ মারা গিয়েছিল, শহরের প্রায় 90000 বাড়ির মধ্যে প্রায় 60000 বাড়ি ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। বোমার ক্ষমতা এত বেশি ছিল যে নিক্ষেপস্থলের 500 m -এর মধ্যে থাকা 90% মানুষ সঙ্গে সঙ্গে মারা গিয়েছিল। বোমা ফেলার তিন সপ্তাহ পর যেসব মানুষ বেঁচে ছিল তাদের বেশিরভাগের মধ্যে চুল ওঠা, অ্যানিমিয়া, ক্যানসার, ডায়ারিয়া প্রভৃতি রোগ দেখা দিয়েছিল। বোমা ফেলার অর্ধশতাব্দী পরেও তার প্রভাবে থাইরয়েড ক্যানসার, ফুসফুসে ক্যানসার, বিকলাঙ্গ শিশুর জন্ম ইত্যাদির মতো সমস্যা রয়ে গেছে।

হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমার ক্ষতিকর প্রভাব আলোচনা করো।

নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটর কাকে বলে?

নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটর হল এমন একটি ব্যবস্থা যেখানে নিউক্লীয় বিভাজনকে বিশেষ পদ্ধতিতে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখে, নিউক্লীয় বিভাজনে উৎপন্ন তাপশক্তিকে তড়িৎশক্তিতে রূপান্তরিত করে অল্প সময়ে বিপুল শক্তি উৎপন্ন করা যায়।

সংকট ভর (critical mass) কাকে বলে?

নিউক্লীয় বিভাজনযোগ্য পদার্থের যে ন্যূনতম ভরের জন্য শৃঙ্খল বিক্রিয়া ঘটানো সম্ভব হয় তাকে সংকট ভর (critical mass) বলা হয়।

নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটর সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটরে, নিউক্লীয় বিভাজনে উৎপন্ন তাপশক্তি দিয়ে সাধারণত জলকে ফুটিয়ে স্টিম তৈরি করা হয়। সেই স্টিম টারবাইনকে ঘোরায় এবং উৎপন্ন হয় তড়িৎশক্তি। এখানে তাপশক্তি উৎপন্ন হয় কোর নামক একটি অংশে। প্রেসারাইজড ওয়াটার রিঅ্যাকটর (PWR) এক ধরনের পরিচিত নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটর। এই যন্ত্রের কোরের মধ্যেই নিউক্লীয় বিভাজন বিক্রিয়াটি ঘটে। এই যন্ত্রের অন্যান্য অংশগুলি হল জ্বালানি রড, নিয়ন্ত্রণ রড, মডারেটর, কুল্যান্ট। এখানে জ্বালানি রড হিসেবে \({}_{92}^{235}U\) ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই যন্ত্রে উৎপন্ন নিউট্রনকে নিয়ন্ত্রণ বা শোষণ করার জন্য এক বিশেষ ধরনের দণ্ড ব্যবহার করা হয়। মডারেটর উচ্চগতিবেগসম্পন্ন নিউট্রনকে ধীরগতিসম্পন্ন করে। মডারেটর হিসেবে সাধারণত ভারী জল ব্যবহার করা হয়। নিউক্লীয় বিভাজনে উৎপন্ন তাপকে শোষণ করে কুল্যান্ট। কুল্যান্ট হিসেবে জল ব্যবহার করা হয়।

নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটর বিপুল পরিমাণ শক্তি উৎপন্ন হয়। নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটর 1 kg পরিমাণ \({}_{92}^{235}U\) ব্যবহার করলে যে তাপশক্তি উৎপন্ন হয় (প্রায় \(7.2\times10^{13}\) J) তা 1 kg কয়লা পুড়িয়ে উৎপন্ন তাপের (প্রায় \(2.4\times10^7\) J) প্রায় 30 লক্ষ গুণ। নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটরে উৎপন্ন বিদ্যুৎ বর্তমান শক্তি সংকটের যুগে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটর সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও।

চেরনোবিল ও ফুকুশিমার দুর্ঘটনার উল্লেখ করে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটরের বিপদ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।

নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটরের যেমন অনেক ভালো দিক আছে তেমনি এর থেকে বিপদও আছে। এর মূল বিপদ হল তেজস্ক্রিয় রশ্মির নির্গমন। যার কুফল দেখা গেছে 26 এপ্রিল 1986 খ্রিস্টাব্দে ইউক্রেনের চেরনোবিল ও 11 মার্চ 2011 খ্রিস্টাব্দে জাপানের ফুকুশিমায়। চেরনোবিলের ঘটনা ফুকুশিমার চেয়ে অনেক বেশি ভয়াবহ ছিল কারণ চেরনোবিলে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ ফুকুশিমার প্রায় 10 গুণ ছিল।

চেরনোবিলে চারটি ক্রিয়ারত রিঅ্যাকটর ও দুটি নির্মীয়মাণ রিঅ্যাকটরে বিস্ফোরণ হয়েছিল। তার ফলে রিঅ্যাকটর থেকে গলিত তেজস্ক্রিয় পদার্থ আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাতের মতো বেরিয়ে এসেছিল ও বিস্তৃর্ণ এলাকা তেজস্ক্রিয় বিকিরণ দ্বারা দূষিত হয়েছিল। বিকিরণের বিষক্রিয়ায় কয়েক সপ্তাহের মধ্যে 31 জন মারা গিয়েছিল এবং কিছু বছর পরেও কয়েক হাজার মানুষ ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছিল।

যদিও ফুকুশিমায় ক্ষয়ক্ষতি অনেক কম ছিল জাপান সরকার খুব তৎপর হওয়ায়। ফুকুশিমায় সুনামির ঢেউ ও ভূমিকম্পের জন্য রিঅ্যাকটরের ঠান্ডা করার ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল ফলে রিঅ্যাকটর গলে গিয়েছিল। জাপান সরকার দ্রুততার সঙ্গে রিঅ্যাকটরের পার্শ্ববর্তী প্রায় 25 মাইল ব্যাসার্ধের অঞ্চল থেকে বাসিন্দাদের সরিয়ে ফেলেছিল। যদিও সেখানে ওই কারণে কোনো ব্যক্তির মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি, তবুও এই বিকিরণের কুপ্রভাব সুদূরপ্রসারী।

চেরনোবিল ও ফুকুশিমার দুর্ঘটনার উল্লেখ করে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটরের বিপদ সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো।

নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটরের ব্যবহার লেখো।

জাহাজ চালানো, চিকিৎসাবিজ্ঞান, পরমাণু কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন, টারবাইন ঘোরাতে এবং শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় আইসোটোপ তৈরি করতে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটর ব্যবহৃত হয়। কিছু নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটর শুধুমাত্র গবেষণার কাজেই ব্যবহৃত হয়। সারা পৃথিবীতে প্রায় 30টি দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কাজে প্রায় 450টি নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটর ব্যবহার করা হয়।

নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটরে উৎপন্ন বিদ্যুৎ খুবই গুরুত্বপূর্ণ কেন?

নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটরে উৎপন্ন বিদ্যুৎ বর্তমান শক্তি সংকটের যুগে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ভারতে তারাপুর, কলাপক্কমে এরূপ বিদ্যুৎকেন্দ্র আছে। তবে নিউক্লিয়ার রিঅ্যাকটর ব্যবহারের প্রধান সমস্যা হল তেজস্ক্রিয় রশ্মির নির্গমন। এর নিয়ন্ত্রণ সঠিকভাবে না করা হলে তেজস্ক্রিয় জ্বালানি বায়ুতে নির্গত হয়ে বা সমুদ্রে মিশে পরিবেশ দূষণ ঘটাতে পারে।

নিউক্লীয় সংযোজন কাকে বলে?

যে নিউক্লীয় বিক্রিয়ায় একাধিক হালকা নিউক্লিয়াস যুক্ত হয়ে একটি ভারী নিউক্লিয়াস গঠন করে তাকে নিউক্লীয় সংযোজন বলা হয়।

উদাহরণসহ নিউক্লীয় সংযোজন প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা করো।

নিউক্লীয় সংযোজনের একটি উদাহরণ হল,

\({}_1^2H+{}_1^2H\rightarrow{}_2^3He+{}_0^1n+3.27\;MeV\)

এখানে দুটি ডয়টেরিয়াম নিউক্লিয়াস যুক্ত হয়ে একটি হিলিয়াম (\({}_2^3He\)) নিউক্লিয়াস গঠন করে ও 1টি নিউট্রন উৎপন্ন হয়। দুটি ডয়টেরিয়ামের ভর অপেক্ষা হিলিয়াম (\({}_2^3He\)) ও নিউট্রনের ভরের সমষ্টি কিছুটা কম হয়। এই হ্রাসপ্রাপ্ত ভর আইনস্টাইনের \(E=mc^2\) সমীকরণ অনুযায়ী শক্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং প্রায় 3.27 MeV শক্তি উৎপন্ন হয়।

অথবা, নিউক্লীয় সংযোজনের একটি উদাহরণ হল,

\(4{}_1^2H\rightarrow{}_2^4He+2{}_1^0e+25.69\;MeV\)

এখানে চারটি হাইড্রোজেন নিউক্লিয়াস যুক্ত হয়ে একটি হিলিয়াম (\({}_2^4He\)) নিউক্লিয়াস গঠন করে ও 2টি পজিট্রন (\({}_0^1e\)) উৎপন্ন হয়। 4টি হাইড্রোজেনের ভর অপেক্ষা একটি হিলিয়াম ও দুটি পজিট্রনের ভরের সমষ্টি কিছুটা কম হয়। এই হ্রাসপ্রাপ্ত ভর আইনস্টাইনের \(E=mc^2\) সমীকরণ অনুযায়ী শক্তিতে রূপান্তরিত হয় এবং প্রায় 25.69 MeV শক্তি উৎপন্ন হয়।

নিউক্লীয় বিভাজন ও নিউক্লীয় সংযোজন – এদের মধ্যে কোনটিতে বেশি শক্তি উৎপন্ন হয় ব্যাখ্যা করো।

আপাতদৃষ্টিতে মনে হতে পারে নিউক্লীয় বিভাজনে উৎপন্ন শক্তি, নিউক্লীয় সংযোজন অপেক্ষা বেশি, কিন্তু বাস্তবে তা হয় না। নিউক্লীয় বিভাজনের তুলনায় নিউক্লীয় সংযোজনে শতকরা বেশি ভর শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় 1 g হাইড্রোজেনের সংযোজনে নির্গত শক্তি, 1 g ইউরেনিয়ামের (\({}_{92}^{235}U\)) বিয়োজনে নির্গত শক্তির তুলনায় প্রায় 7.3 গুণ।

যে-কোনো সংযোজন বিক্রিয়া ঘটানোর পূর্বে বিভাজন ঘটানো হয় কেন?

নিউক্লীয় সংযোজনে উৎপন্ন শক্তি নিউক্লীয় বিভাজনের তুলনায় বেশি, কিন্তু নিউক্লীয় সংযোজন প্রক্রিয়াটি সহজে সংঘটিত হয় না। দুটি নিউক্লিয়াসকে যখন সংযুক্ত করা হয় তখন বিকর্ষণ বলের মান এত বেড়ে যায় যে, নিউক্লিয়াসগুলির সংযুক্তির জন্য প্রায় 107°C থেকে 108°C উষ্ণতার প্রয়োজন হয়। সাধারণ উপায়ে এই উচ্চ উষ্ণতা সৃষ্টি করা সম্ভব হয় না। তাই সংযোজন প্রক্রিয়া ঘটানোর জন্য আগে নিউক্লীয় বিভাজন প্রক্রিয়া ঘটিয়ে এই তাপমাত্রা উৎপন্ন করা হয়। সুতরাং, যে-কোনো সংযোজন বিক্রিয়া ঘটানোর পূর্বে বিভাজন প্রক্রিয়া ঘটানো হয়।

সূর্য বা অন্যান্য নক্ষত্রে উৎপন্ন শক্তির মূল উৎস কী তা সংক্ষেপে ব্যাখ্যা করো।

যে-কোনো নক্ষত্র, যেমন সূর্যের তাপশক্তির মূল উৎস হল নিউক্লীয় সংযোজন। নক্ষত্রের মূল জ্বালানি হল হাইড্রোজেন। নক্ষত্রে সংযোজন প্রক্রিয়াটি কতকগুলি চক্রের মাধ্যমে সংঘটিত হয়। মোটামুটিভাবে বলা হয় প্রতি চক্রে চারটি হাইড্রোজেনের (\({}_1^1H\)) নিউক্লিয়াস যুক্ত হয়ে উৎপন্ন করে একটি হিলিয়াম (\({}_2^4He\)) ও দুটি পজিট্রন (\({}_1^0e\))।

\(4{}_1^1H\rightarrow{}_2^4He+2{}_1^0e\)

একটি হিলিয়াম (\({}_2^4He\)) ও দুটি পজিট্রনের (\({}_1^0e\)) ভরের সমষ্টি চারটি হাইড্রোজেনের ভরের তুলনায় কম। এই ভর-হ্রাস শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। সূর্যে প্রতি মিনিটে 12 কোটি টন হাইড্রোজেন, হিলিয়ামে রূপান্তরিত হচ্ছে এবং বিপুল তাপশক্তি উৎপন্ন হচ্ছে। সূর্য এইভাবে প্রায় 460 কোটি বছর ধরে তাপশক্তি বিকিরণ করে যাচ্ছে।

নিউক্লীয় বিভাজন ও নিউক্লীয় সংযোজনের মধ্যে পার্থক্য লেখো।

নিউক্লীয় বিভাজন ও নিউক্লীয় সংযোজনের মধ্যে পার্থক্য –

নিউক্লীয় বিভাজননিউক্লীয় সংযোজন
এই প্রক্রিয়ায় কোনো ভারী নিউক্লিয়াস প্রায় সমান ভরের দুটি কেন্দ্রকে বিভাজিত হয়।এই প্রক্রিয়ায় কয়েকটি হালকা নিউক্লিয়াস যুক্ত হয়ে একটি ভারী নিউক্লিয়াস গঠন করে।
এই প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তি সংযোজনের তুলনায় কম।এই প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন শক্তি বিভাজনের তুলনায় বেশি।
এই প্রক্রিয়ায় টার্গেট নিউক্লিয়াসকে আঘাত করার জন্য আঘাতকারী কণা বা নিউট্রনের প্রয়োজন হয়।এই প্রক্রিয়ায় কোনো আঘাতকারী কণার প্রয়োজন হয় না।
এই প্রক্রিয়া সাধারণ উষ্ণতাতেই ঘটে।এই প্রক্রিয়া 107°C থেকে 108°C উষ্ণতার মধ্যে ঘটে।
এই প্রক্রিয়া কাজে লাগিয়ে পরমাণু বোমা তৈরি করা হয়।এই প্রক্রিয়া কাজে লাগিয়ে হাইড্রোজেন বোমা তৈরি করা হয়।
এই প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন পদার্থ তেজস্ক্রিয় হয়।এই প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন পদার্থ অতেজস্ক্রিয় হয়।

Class 10 Physical Science – Notes for All Chapters

1. পরিবেশের জন্য ভাবনাবিষয়সংক্ষেপ
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর
2. গ্যাসের আচরণবিষয়সংক্ষেপ
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর
গাণিতিক উদহারণ
3. রাসায়নিক গণনাবিষয়সংক্ষেপ
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর
গাণিতিক উদহারণ
4. তাপের ঘটনাসমূহবিষয়সংক্ষেপ
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর
গাণিতিক উদাহরণ
5. আলোবিষয়সংক্ষেপ
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর
গাণিতিক উদাহরণ
সক্রিয়তামূলক প্রশ্নোত্তর
6. চলতড়িৎবিষয়সংক্ষেপ
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর
গাণিতিক উদাহরণ
সক্রিয়তামূলক প্রশ্নোত্তর
7. পরমাণুর নিউক্লিয়াসবিষয়সংক্ষেপ
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর
সক্রিয়তামূলক প্রশ্নোত্তর
8. পদার্থের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মসমূহ – পর্যায়-সারণি এবং মৌলদের ধর্মের পর্যাবৃত্ততাবিষয়সংক্ষেপ
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর
9. পদার্থের ভৌত রাসায়নিক ধর্মসমূহ – আয়নীয় ও সমযোজী বন্ধনবিষয়সংক্ষেপ
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর
সক্রিয়তামূলক প্রশ্নোত্তর
10. পদার্থের ভৌত রাসায়নিক ধর্মসমূহ – তড়িৎপ্রবাহ ও রাসায়নিক বিক্রিয়াবিষয়সংক্ষেপ
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর
সক্রিয়তামূলক প্রশ্নোত্তর
11. পদার্থের ভৌত রাসায়নিক ধর্মসমূহ – পরীক্ষাগার ও রাসায়নিক শিল্পে অজৈব রসায়নবিষয়সংক্ষেপ
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর
সক্রিয়তামূলক প্রশ্নোত্তর
12. পদার্থের ভৌত রাসায়নিক ধর্মসমূহ – ধাতুবিদ্যাবিষয়সংক্ষেপ
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর
সক্রিয়তামূলক প্রশ্নোত্তর
13. পদার্থের ভৌত রাসায়নিক ধর্মসমূহ – জৈব রসায়নবিষয়সংক্ষেপ
অতিসংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর
সক্রিয়তামূলক প্রশ্নোত্তর

আমরা আমাদের আর্টিকেলে দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞানের সপ্তম অধ্যায় ‘পরমাণুর নিউক্লিয়াস’ এর কিছু সংক্ষিপ্ত ও দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো দশম শ্রেণীর ভৌতবিজ্ঞান পরীক্ষার জন্য বা চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি দশম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Share via:

মন্তব্য করুন