এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

নবম শ্রেণী – ভূগোল – ভারতের সম্পদ (খনিজ সম্পদ) – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর

আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের সপ্তম অধ্যায় ‘ভারতের সম্পদ (খনিজ সম্পদ)’ এর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

ভারতের সম্পদ (খনিজ সম্পদ) - সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
ভারতের সম্পদ (খনিজ সম্পদ) – সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর
Contents Show

খনিজ কাকে বলে?

শিলার মধ্যে অবস্থিত নির্দিষ্ট রাসায়নিক সংযোগবিশিষ্ট, নির্দিষ্ট পারমাণবিক গঠনযুক্ত, কেলাসিত মৌলিক বা যৌগিক পদার্থকে খনিজ বলে। যেমন – মৌলিক খনিজ হল হিরে এবং যৌগিক খনিজ হল লৌহ। এই সকল খনিজ যখন মানুষের নানান চাহিদা পূরণ করে, তখন তাকে বলা হয় খনিজ সম্পদ।

ধাতব খনিজ কাকে বলে?

সংজ্ঞা – যেসব খনিজ দ্রব্য গলালে ধাতু পাওয়া যায়, তাদের ধাতব খনিজ বলে।

উদাহরণ – আকরিক লোহা, তামা, বক্সাইট, ম্যাঙ্গানিজ প্রভৃতি।

বৈশিষ্ট্য –

  • ধাতব খনিজ অবিশুদ্ধ প্রকৃতির।
  • ধাতব খনিজ ওজন হ্রাসশীল কাঁচামাল রূপে শিল্পে ব্যবহৃত হয়।

অধাতব খনিজ কাকে বলে?

সংজ্ঞা – যেসব খনিজ গলানো বা শোধন করার সময় নানা অধাতব পদার্থ বা উপজাত দ্রব্য পাওয়া যায়, তাকে অধাতব খনিজ বলে।

উদাহরণ – কয়লা, খনিজ তেল, চুনাপাথর, গন্ধক, ইউরেনিয়াম প্রভৃতি।

বৈশিষ্ট্য –

  • অধাতব খনিজ সাধারণত বিশুদ্ধ প্রকৃতির হয়।
  • এই খনিজ সরাসরি বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা যায়।

জ্বালানি খনিজ কাকে বলে?

সংজ্ঞা – যেসব খনিজ দহন করলে প্রচুর তাপ উৎপন্ন হয় বা যার থেকে তেজস্ক্রিয় পদার্থ বের হয়, তাকে জ্বালানি খনিজ বলে।

উদাহরণ – কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস, ইউরেনিয়াম প্রভৃতি।

আকরিক কাকে বলে?

সংজ্ঞা – যেসব খনিজে অপ্রয়োজনীয় অপদ্রব্যের তুলনায় ধাতব মৌলের পরিমাণ বেশি থাকে এবং যেগুলি থেকে সহজেই ধাতু নিষ্কাশন করা যায়, তাদের আকরিক বলে।

উদাহরণ – হেমাটাইট, ম্যাগনেটাইট প্রভৃতি।

পিগ আয়রন (Pig Iron) কাকে বলে?

খনি থেকে তোলা আকরিক লোহায় যে অপ্রয়োজনীয় পদার্থ মিশে থাকে তা বাদ দেওয়ার জন্য এর সঙ্গে চুনাপাথর ও ডলোমাইট মিশিয়ে বাতচুল্লিতে গলানো হয় এবং পরিস্রুত গলিত তরল লোহা ছাঁচে ফেলে যে লৌহপিণ্ড প্রস্তুত করা হয়, তাকে পিগ আয়রন বলে।

স্পঞ্জ আয়রন (Sponge Iron) কাকে বলে?

ছাঁট লোহা (Scrap) থেকে ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস (Electric Arc Furnace) ও ইনডাকশন ফার্নেস (Induction Furnace) -এর মাধ্যমে সরাসরি যে লোহা উৎপাদন করা হয়, তাকে স্পঞ্জ আয়রন বলে। স্পঞ্জ লোহা উৎপাদনে ভারত পৃথিবীতে প্রথম স্থান অধিকার করেছে।

জীবাশ্ম জ্বালানি কাকে বলে?

সংজ্ঞা – উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষ শিলাস্তরের মধ্যে চাপা পড়ে প্রস্তরীভূত হলে, তাকে জীবাশ্ম বলা হয়। এই জীবাশ্ম সৃষ্টির সময় জীবদেহাবশেষ ভূঅভ্যন্তরের চাপ ও তাপে এবং রাসায়নিক বিক্রিয়ায় পরিবর্তিত হয়ে যখন জ্বালানি খনিজে পরিণত হয়, তখন তাকে জীবাশ্ম জ্বালানি বলে।

উদাহরণ – কয়লা, খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস।

কোককয়লা বলতে কী বোঝো?

বিটুমিনাস কয়লাকে কোক চুল্লিতে প্রসেসিং করে কয়লাস্থিত অপদ্রব্য, জলীয়বাষ্প পরিস্রুত করে কার্বন উপাদান বাড়িয়ে যে উৎকৃষ্ট কয়লা তৈরি করা হয়, তাকে কোক কয়লা বলে। লৌহ-ইস্পাত শিল্পে এই কয়লা অধিক ব্যবহৃত হয়।

কয়লার উপজাত দ্রব্যগুলির নাম লেখো।

কয়লার বিভিন্ন উপজাত দ্রব্য ও তাদের ব্যবহার নিম্নে ছকের মাধ্যমে দেখানো হল –

উপজাত দ্রব্যব্যবহার
ন্যাপথলিনকীটনাশক দ্রব্য এবং বার্নিশ তৈরির কাঁচামাল টেট্রালিন উৎপাদন করা হয়।
বেনজিনডিডিটি, গ্যামাকশিন প্রভৃতি কীটনাশক দ্রব্য, জ্বালানি তেল উৎপাদন করা হয়।
পাইরিডিনরং উৎপাদন ও রাবার ভালকানাইজ করার কাজে লাগে।
ফেনল, ক্রিসোলঔষধ ও অ্যান্টিসেপটিক সামগ্রী উৎপাদন করা হয়।
টোলুয়েনবিস্ফোরক দ্রব্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
প্যারাজাইলিনকৃত্রিম তন্তু উৎপাদন করা যায়।
অ্যানথ্রাসিনরং উৎপাদনের কাজে লাগে।
পিচরাস্তা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়।
আলকাতরারং করতে কাজে লাগে।
স্যাকারিনএই মিষ্টি দ্রব্যটি চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা হয়।
বেনজলরঞ্জক দ্রব্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়।
অ্যামোনিয়াম সালফেটসার উৎপাদনে ও হিমায়িত করার কাজে ব্যবহার করা হয়।

ভারতের প্রধান চারটি কয়লাখনি অঞ্চল ও তাদের একটি করে খনির নাম লেখো।

ভারতের চারটি কয়লা খনি অঞ্চল হল –

  • দামোদর উপত্যকা অঞ্চল – পশ্চিমবঙ্গের রানিগঞ্জ।
  • শোন উপত্যকা অঞ্চল – ছত্তিশগড়ের ঝিলিমিলি।
  • মহানদী উপত্যকা অঞ্চল – ওড়িশার তালচের।
  • গোদাবরী উপত্যকা অঞ্চল – অন্ধ্রপ্রদেশের তান্ডুর।

কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড (Coal India Limited) কী?

কয়লা উত্তোলনের ক্ষেত্রে ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হল কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড। 1975 সালে বিশ্বের বৃহত্তম এই কয়লা উৎপাদনকারী সংস্থাটি স্থাপিত হয়, এর সদর দপ্তর কলকাতায় অবস্থিত। বর্তমান ভারতে এই সংস্থার অধীনে মোট 18টি সংস্থা কয়লা উত্তোলনে নিযুক্ত আছে। যেমন –

  • সেন্ট্রাল কোল ফিল্ডস্ লিমিটেড (CCL)।
  • ভারত কোকিং কোল লিমিটেড (BCCL) প্রভৃতি।

ভারতের চারটি লিগনাইট কয়লা খনির নাম লেখো।

ভারতের চারটি লিগনাইট কয়লা খনি হল –

  • তামিলনাড়ুর নেভেলি (ভারতের বৃহত্তম লিগনাইট কয়লা খনি)।
  • রাজস্থানের পালানা।
  • কেরালার ওয়ারকালা।
  • গুজরাটের উমরসর।

ক্রুড অয়েল (Crude Oil) ও অয়েল ট্র্যাপ (Oil Trap) কী?

ভূগর্ভের শিলাস্তর থেকে যে তেল উত্তোলন করা হয়, তা ঘন, ভারী ও মালিন্যযুক্ত, একে ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত তেল বলে। এই তেল শোধন করে ব্যবহার করা হয়।

বাণিজ্যিক তেল উত্তোলনের উপযোগী তেল ভান্ডারকে অয়েল ট্র্যাপ বলে।

ONGC কী?

  • পুরো কথা – Oil and Natural Gas Corporation।
  • স্থাপনকাল – 1956 সালের 14 আগস্ট এই রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়।
  • সদর দপ্তর – এর সদর দপ্তর উত্তরাখন্ডের রাজধানী দেরাদুনে অবস্থিত।
  • উদ্দেশ্য – ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে খনিজ তেলের অনুসন্ধান করা ও উত্তোলন করা।

সাগর সম্রাট ও সাগর বিকাশ কী?

তর ভারতের বৃহত্তম তৈলক্ষেত্র আরবসাগরে যে দুটি ভাসমান প্লাটফর্ম বা জাহাজ বা রেগ -এর সাহায্যে তেল উত্তোলন করা হয়, তাদের নাম হল সাগর সম্রাট ও সাগর বিকাশ।

সাগর সম্রাট
সাগর সম্রাট

IOC কী?

IOC -এর পুরো কথাটি হল Indian Oil Corporation এটি ভারতের বৃহত্তম খনিজ তেল শোধনকারী সংস্থা। 1959 সালের 30 জুন এই সংস্থাটি স্থাপিত হয়। সদর দপ্তর মুম্বাইতে অবস্থিত। এই সংস্থাটি খনিজ তেল পরিশোধন, খনিজ তেলজাত সামগ্রী বিক্রয়, গবেষণা ইত্যাদি কাজ করে। এই সংস্থার অধীনে ভারতে ৪টি (পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া, বিহারের বারাউনি, অসমের ডিগবয়, নুনমাটি, বঙ্গাইগাঁও, উত্তরপ্রদেশের মথুরা, গুজরাটের কয়ালি, হরিয়ানার পানিপথ) কেন্দ্র স্থাপিত হয়েছে।

ভারতের তিনটি খনিজ তেল উত্তোলক অঞ্চল ও তার একটি করে তৈলখনির নাম লেখো।

উত্তোলক অঞ্চলতৈলখনি
আবরসাগরীয় দরিয়া অঞ্চলবোম্বে হাই
উত্তর-পূর্ব ভারতের তৈলক্ষেত্র অঞ্চলডিগবয়
পশ্চিম ভারতের তৈলক্ষেত্র অঞ্চলআঙ্কেলেশ্বর

সবুজ জ্বালানি কী?

দূষণমুক্ত পরিবেশের জন্য সিসামুক্ত পেট্রোল ও সালফার মুক্ত ডিজেল ব্যবহারের ওপর বর্তমানে গুরুত্ব আরোপ করা হচ্ছে। এরূপ জ্বালানি পরিবেশবান্ধব বলে একে সবুজ জ্বালানি বলে। ভারতের তেলশোধনাগার গুলিতে বর্তমানে এই সবুজ জ্বালানি উৎপাদন করা হচ্ছে।

‘কালো হিরে’ কাকে বলে? কেন বলে?

কয়লাকে ‘কালো হিরে’ বলে। কারণ, বর্তমানে দৈনন্দিন জীবনে কয়লা এবং তা থেকে প্রাপ্ত উপজাত দ্রব্যগুলি অত্যন্ত অপরিহার্য হয়ে গেছে এবং সর্বোপরি তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন করতে ও কলকারখানার বিভিন্ন কাজে কয়লা ব্যবহৃত হয়। হিরে যেমন মূল্যবান পদার্থ ঠিক তেমনি ব্যবহারগত দিক থেকে কয়লাও অত্যন্ত মহার্ঘ বস্তু এবং কয়লার রং কালো। তাই হিরের সঙ্গে তুলনা করে কয়লাকে ‘কালো হিরে’ বলে।

‘তরল সোনা’ কাকে বলে? কেন বলে?

মানুষ পৃথিবীর বুকে যে-সকল বহুমুখী উদ্দেশ্য সাধনকারী সম্পদ খুঁজে পেয়েছে, তার মধ্যে শ্রেষ্ঠ হল খনিজ তেল। বহুমুখী ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে খনিজ তেলের গুরুত্ব তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ খনিজ তেল নির্ভর শিল্পগুলি জীবিকার মূল উৎস। তাছাড়া কোনো দেশে খনিজ তেলের সম্ভার ও ব্যবহার ওই দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির সূচক। মোটকথা শিল্প, সমাজ-সংস্কৃতি, বিজ্ঞান-প্রযুক্তি, রাজনীতি, অর্থনীতি ও দৈনন্দিন জীবনের এমন কোনো দিক নেই যেখানে খনিজ তেল প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ব্যবহৃত হয় না। তাই খনিজ তেলের অপরিসীম ব্যবহারিক মূল্যের কথা ভেবে একে ‘তরল সোনা’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

ভারতের মার্মাগাঁও বন্দর দিয়ে কেন প্রচুর পরিমাণে আকরিক লোহা রপ্তানি করা হয়?

গোয়া রাজ্যের মার্মাগাঁও ভারতের একটি প্রাচীনতম বন্দর। গোয়ার বিস্তীর্ণ বিচোলেম, মাপুখা, সিরিগাঁও, কুদ্রেমুখ, কুমারস্বামী প্রভৃতি স্থানে প্রচুর পরিমাণে লৌহ আকরিক পাওয়া যায়। তাই এই সমস্ত স্থানের উৎকৃষ্ট লৌহ আকরিক স্থানীয় মার্মাগাঁও বন্দরের মাধ্যমে পাকিস্তান, চিন, ইরান, শ্রীলঙ্কা প্রভৃতি দেশে রপ্তানি করা হয়।

ভারতের আকরিক লোহার বাণিজ্য সম্পর্কে লেখো।

রপ্তানি – ভারত উল্লেখযোগ্য পরিমাণে আকরিক লোহা রপ্তানি করে। ভারতীয় লৌহ আকরিকের সবচেয়ে বড়ো ক্রেতা জাপান ও চিন। এছাড়া উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়া, নেদারল্যান্ড, জার্মানি, ইতালি, রুমানিয়া, হাঙ্গেরি প্রভৃতি দেশে ভারত আকরিক লোহা রপ্তানি করে।

আমদানি – তবে দক্ষিণ আফ্রিকা, বাহারিন, রাশিয়া, ইউক্রেন, অস্ট্রেলিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে কিছু উচ্চমানের আকরিক লোহা ভারত আমদানি করে থাকে।

ভারতে উৎপাদিত আকরিক লোহার কত % বিদেশে রপ্তানি করা হয়?

ভারতে উৎপাদিত আকরিক লোহার 33% বিদেশে রপ্তানি করা হয়। মোট রপ্তানির 58% জাপান ক্রয় করে।

ভারতের কয়লার বাণিজ্য সম্পর্কে লেখো।

রপ্তানি – ভারত স্বল্প পরিমাণে কয়লা বিদেশে রপ্তানি করে। ভারতের মোট রপ্তানির \( \frac23 \) অংশ পাঠানো হয় বাংলাদেশে। এছাড়া পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, জাপান, মায়ানমার, মালয়েশিয়া, হংকং প্রভৃতি দেশে ভারত কয়লা রপ্তানি করে।

আমদানি – ভারত কিছু পরিমাণ উৎকৃষ্ট কয়লা বিদেশ থেকে আমদানি করে থাকে। প্রধানত ব্রিটিশ যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি প্রভৃতি দেশ থেকে উন্নত মানের কোক কয়লা আমদানি করে।

আন্ডার গ্রাউন্ড মাইনিং (Underground Mining) কাকে বলে?

যে পদ্ধতিতে খনিজ উত্তোলনের সময় ভূগর্ভের কোনো উল্লম্ব বা অনুভূমিক সুড়ঙ্গ খুঁড়ে খনিজ নিষ্কাশন করা হয়, তাকে আন্ডার গ্রাউন্ড মাইনিং বলে। এই পদ্ধতিতে খনিজ উত্তোলনের ফলে বনভূমি ধ্বংস ও ভূমিক্ষয় হয়ে থাকে।

ওপেন কাস্ট মাইনিং (Open Cast Mining) কাকে বলে?

যে পদ্ধতিতে ভূগর্ভ থেকে খনিজ উত্তোলনের সময় গহ্বর খনন করা হয় এবং সেই গহ্বর দিয়ে খনিজ নিষ্কাশন করা হয়, তাকে ওপেন কাস্ট মাইনিং বলে। এই পদ্ধতিতে খনিজ উত্তোলন বনভূমি ও মাটির দৃঢ়তা দুই-ই নষ্ট করে।

ভারতের খনিজ তেলের বাণিজ্য সম্পর্কে লেখো।

ভারত খনিজ তেল আমদানিকারক দেশ। পরিবহণ, শিল্প, জ্বালানি প্রভৃতি ক্ষেত্রে তেলের ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতে খনিজ তেলের আমদানির পরিমাণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রধানত সৌদি আরব, কুয়েত, ইরান, ইরাক, বাহরিন, রুমানিয়া, রাশিয়া প্রভৃতি দেশ থেকে ভারত প্রচুর পরিমাণে অপরিশোধিত খনিজ তেল আমদানি করে। দেশের মোট চাহিদার 50% খনিজ তেল বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়।

কার্বনের পরিমাণ অনুসারে কয়লার শ্রেণিবিভাগ করো।

বিভাগকার্বনের পরিমাণ (%)
অ্যানথ্রাসাইট85%-95%
বিটুমিনাস50%-85%
লিগনাইট30%-50%
পিট30% -এর কম

ক্রিয়োজোট কী? এটি কী কাজে ব্যবহৃত হয়?

ক্রিয়োজোট কয়লার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপজাত দ্রব্য, এটি কীটনাশক দ্রব্য প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।

তেল গাশার (Oil gusher) কী?

Gusher কথাটির আভিধানিক অর্থ হল – প্রবলভাবে নিঃসৃত পদার্থ। আবার যে তৈলকূপ থেকে কোনোরূপ পাম্প ছাড়া তেল বেরোতে থাকে, তাকে তেল গাশার বা Oil gusher বলে। পৃথিবীর যেসব স্থানে খনিতে তেল অত্যধিক পরিমাণে সঞ্চিত আছে, সেখানে যদি তৈলবাহী শিলাস্তরটি দুই শিলাস্তরের প্রবল চাপের মধ্যে থাকে, তখন সেই স্থানে তৈলকূপ খনন করলে তেল আপনা-আপনি বেরিয়ে আসে ফোয়ারার মতো। এই ধরনের তৈলকূপকে তেল গাশার বলে। যেমন – CIS -এর অন্তর্গত আজারবাইজানের বাকু, ইরানের মসজিদ-ই-সুলেমান, আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়াতে তেল গাশার দেখা যায়।

তেল গাশার
তেল গাশার

কোথায় প্রথম তৈল গাশার বা তৈল প্রস্রবণ দেখা যায়?

উত্তর আমেরিকার অন্টারিও-তে 1862 সালে প্রথম এই ধরনের গাশার বা তৈল প্রস্রবণ (Oil Spring) দেখা যায়। ভারতে এ ধরনের তৈলকূপের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি।

শিলা তেল কী?

খনিজ তেল (Mineral Oil/Petroleum) -কে শিলা তেল (Rock Oil) বলে। পাললিক শিলাস্তরের অভ্যন্তরে যখন ফোরামিনিফেরা (Foraminifera) নামক সামুদ্রিক ব্যাকটেরিয়া, উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশসহ অতি ক্ষুদ্র জীবদেহ চাপা পড়ে যায়, তখন শিলাস্তরের প্রবল চাপে এবং ভূ-গর্ভের প্রচণ্ড তাপে তাদের দেহ নিঃসৃত নির্যাস নানারকম হাইড্রোজেন ও কার্বনের দ্রবণে পরিণত হয়ে খনিজ তেলের সৃষ্টি করে। এই কারণে শুধুমাত্র সচ্ছিদ্র পাললিক শিলাস্তরেই খনিজ তেল অবস্থান করে। এই জন্যই খনিজ তেলকে শিলা তেল বলা হয়। অপরদিকে Petroleum একটি ল্যাটিন শব্দ। এর বাংলা প্রতিশব্দ শিলা তেল (Rock Oil)। ‘Petra’ -এর বাংলা প্রতিশব্দ শিলা (Rock) এবং ‘Oleum’ -এর বাংলা প্রতিশব্দ তেল (Oil)। সেজন্যও Petroleum বা খনিজ তেলকে শিলা তেল বা Rock Oil বলা হয়।

রট আয়রন (Wrought Iron) কাকে বলে?

লৌহ আকরিক থেকে লোহা নিষ্কাশন করে ইস্পাত তৈরি করার প্রথম পর্যায়ে বাতচুল্লিতে আকরিক লোহা, চুনাপাথর ও ডলোমাইটের মিশ্রণকে কোক কয়লার সাহায্যে 1600°C তাপমাত্রায় গলিয়ে উত্তপ্ত গলিত কাঁচা লোহাকে শূকরের আকৃতি বিশিষ্ট ছাঁচে ঢেলে যে লোহা প্রস্তুত করা হয় তাকে পিগ্‌ আয়রন বা ঢালাই লোহা বলে। এরপর একটি বিশেষ ধরনের বাতচুল্লিতে পিগ্‌ আয়রনকে গলিয়ে যে লোহা পাওয়া যায় তাকে রট আয়রন (Wrought Iron) বলে।

ব্যবহার – আকরিক লোহা গলিয়ে প্রাপ্ত রট আয়রন নাট, বল্টু, পেরেক, গ্রিলের রড, শিকল প্রভৃতি তৈরির কাজে ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে এই আয়রনের বাণিজ্যিক গুরুত্ব অনেক বেশি।

কয়লাকে জৈব শিলা বলে কেন?

আজ থেকে প্রায় (30-35) কোটি বছর আগে কার্বোনিফেরাস যুগে এবং (7-10) কোটি বছর আগে টার্শিয়ারি যুগে প্রবল ভূ-আলোড়নের ফলে সেই সময়কার গভীর, বিস্তীর্ণ অরণ্য অঞ্চল দুটি পৃথক সময়ে মাটির তলায় চাপা পড়ে যায়। কোটি কোটি বছর ধরে মাটির তলায় চাপা পড়ে থাকার কারণে অভ্যন্তরীণ চাপ, তাপ ও রাসায়নিক বিক্রিয়ায় উদ্ভিদদেহে যে সৌরশক্তি প্রচ্ছন্নরূপে স্থিতিশক্তিরূপে জমা ছিল সেই শক্তি অঙ্গারীভূত হয়ে কয়লায় পরিণত হয়। উদ্ভিদদেহ যেহেতু জৈব পদার্থ এবং সেখান থেকেই শিলারূপী কঠিন কয়লা সৃষ্টি হয়, তাই কয়লাকে ‘জৈব শিলা‘ বলে।

ভারতের প্রাচীনতম তৈলক্ষেত্রটি সম্পর্কে যা জানো লেখো।

উত্তর-পূর্ব ভারতের অসম রাজ্যের ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার অন্তর্গত ‘ডিগবয়’ ভারতের প্রাচীনতম তৈলক্ষেত্র। 1959 খ্রিস্টাব্দ থেকে ভারত সরকারের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘Oil India Limited’ এই তৈলক্ষেত্রে তৈল উত্তোলনের কাজে ব্রতী আছে। ডিগবয় তৈলক্ষেত্রে আজ পর্যন্ত প্রায় 800টি তৈলকূপ খনন করা হয়েছে। এখানকার তৈলবাহী স্তরটির আয়তন প্রায় 13 বর্গ কিমি। ভূবিজ্ঞানীদের মতে, আজ থেকে প্রায় 2-5.5 কোটি বছর আগে এই তৈলক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছিল। এই তৈলক্ষেত্রে 400–2000 মিটার গভীরতায় খনিজ তেলের সঞ্চয় লক্ষ করা যায়। ডিগবয় শহরটি অসমের ডিব্ৰুগড় জেলার তিপাম পাহাড়ে অবস্থিত।

IBM কী?

ভারত সরকারের খনি দপ্তর 1948 খ্রিস্টাব্দের 1 মার্চ স্বাধীন ভারতে খনিজ পদার্থের অনুসন্ধান, উন্নয়ন, উৎপাদন ও গবেষণার কাজ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য যে সংস্থাটি গঠন করে, তার নাম IBM। IBM -এর পুরো নাম হল ‘Indian Bureau of Mines’ এই সংস্থাটির সদর দপ্তর মহারাষ্ট্রের ‘নাগপুর’ শহরে অবস্থিত।

এই সংস্থার প্রধান কাজ হল খনিজ সম্পদের যথাযথ সংরক্ষণ, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে খনিজ সম্পদের ব্যবহার ও উন্নয়ন এবং পরিবেশকে খনিজ সম্পদের অতিরিক্ত ব্যবহারজনিত ক্ষয়ক্ষতির হাত থেকে সুরক্ষিত করা।

UCG কী?

UCG -এর সম্পূর্ণ কথাটি হল Underground Coal Gasification। এটি একটি আধুনিক কয়লা উত্তোলন পদ্ধতি। সাধারণত যে সমস্ত অঞ্চলে কয়লা মাটির অনেক গভীরে অবস্থিত বা যেখানে কয়লা উত্তোলন সহজসাধ্য নয়, সেই সব অঞ্চলে একটি নির্দিষ্ট দূরত্বে ভূগর্ভের কয়লার স্তর পর্যন্ত দুটি গর্ত খোঁড়া হয়। এরপর একটি গর্ত দিয়ে অক্সিডেন্ট (জল + বায়ু + অক্সিজেন) প্রবেশ করিয়ে কয়লাকে সিনগ্যাসে রূপান্তরিত করা হয় এবং অন্য গর্তটি দিয়ে তা সংগ্রহ করা হয়। এই পদ্ধতি Underground Coal Gasification নামে পরিচিত।

এই প্রক্রিয়ায় কয়লাখনি অঞ্চলে ভূ-পৃষ্ঠের প্রায় 1200 ফুট নীচে কোল গ্যাস উৎপাদন করে অখনি অঞ্চলে গ্যাসকে নিয়ে গিয়ে ব্যবহার করা হয়।

CIL কী?

CIL -এর পুরো নাম Coal India Limited (কোল ইন্ডিয়া লিমিটেড)। এটি ভারত সরকারের অধীনস্থ অর্থাৎ রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। এই সংস্থাটি ভারত তথা পৃথিবীর মধ্যে বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা। 1975 খ্রিস্টাব্দের 21 অক্টোবর সংস্থাটি যাত্রা শুরু করে। ভারত সরকার মূলত কয়লা উত্তোলন ও কয়লার বণ্টন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য এই সংস্থাটি গড়ে তোলে। ভারতের মোট কয়লার প্রায় 85% কয়লা ‘কোল ইন্ডিয়ার’ তত্ত্বাবধানে উত্তোলিত হয়। এই সংস্থাটির সদর দপ্তর কলকাতায় অবস্থিত। 2014 সালের হিসাব অনুযায়ী 4 লক্ষ 26 হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এই সংস্থায়।

বর্তমান ভারতে এই সংস্থার অধীনে মোট 18টি সংস্থা কয়লা উত্তোলনে নিযুক্ত আছে। যেমন – সেন্ট্রাল কোল ফিল্ডস্ লিমিটেড (CCL), ভারত কোকিং কোল লিমিটেড (BCCL) প্রভৃতি।

একটি গন্ডোয়ানা ও একটি টার্শিয়ারি যুগের কয়লা উত্তোলক অঞ্চলের নাম লেখো।

গন্ডোয়ানা যুগের- দামোদর অববাহিকা অঞ্চল ঝাড়খণ্ডের ঝরিয়া।

টার্শিয়ারি যুগের – জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চল – চাকরা।

খনিজ তেলের দুটি গুরুত্ব লেখো।

  • পরিবহণ ক্ষেত্রে বিভিন্ন যানবাহনের প্রধান চালিকা শক্তি হল খনিজ তেল।
  • পেট্রোরসায়ন শিল্পের কাঁচামালরূপে খনিজ তেলের গুরুত্ব অপরিসীম।

লৌহ সংকর ধাতু কাকে বলে?

যে সকল ধাতু আকরিক লোহার সঙ্গে মিশিয়ে সংকর ইস্পাত তৈরি করা হয় তাকে লৌহ সংকর ধাতু বলে। যেমন – ম্যাঙ্গানিজ, নিকেল, ক্রোমিয়াম প্রভৃতি।

ভারতের বৃহত্তম খনিজ তেল এবং খনিজ তেল শোধনকারী সংস্থাটির নাম কী?

ONGC (Oil and Natural Gas Corporation)।

ভারতের বৃহত্তম খনিজ তেল শোধনকারী সংস্থা হল – IOC (Indian Oil Corporation)।


আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের সপ্তম অধ্যায় ‘ভারতের সম্পদ (খনিজ সম্পদ)’ এর সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য বা চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি নবম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।

Share via:

মন্তব্য করুন