আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের ষষ্ঠ অধ্যায় ‘দুর্যোগ ও বিপর্যয়’ এর টীকা নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

সুনামি (Tsunami)
সুনামি (Tsunami) একটি জাপানি শব্দ, যেখানে ‘Tsu’ -এর অর্থ বন্দর ও ‘nami’ ঢেউকে বোঝায়। কাজেই প্রবল ভূমিকম্পের ফলে সমুদ্র উপকূল বা বন্দর সংলগ্ন অঞ্চলে যে প্রবল জলোচ্ছ্বাস সৃষ্টি হয়, তাকে সুনামি বলে।
উৎপত্তি – সমুদ্রগর্ভে ভূমিকম্প, পার্বত্য অঞ্চলে ধস, হিমানী সম্প্রপাত, অগ্ন্যুৎপাত বা সমুদ্রে বড়ো উল্কাপিণ্ডের পতনের ফলে সমুদ্রবক্ষে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়। ভূমিকম্পের ফলে সমুদ্রবক্ষে স্থানচ্যুতি ঘটে উপকেন্দ্রের সব জল অনেক উঁচু হয়ে তরঙ্গের আকারে প্রচণ্ড গতিতে উপকূলের দিকে ধেয়ে আসে। এর ফলে উপকূল অঞ্চলে প্রবল জলোচ্ছ্বাস অর্থাৎ সুনামির সৃষ্টি হয়। প্রশান্ত মহাসাগরীয় আগ্নেয় মেখলা একটি সুনামিপ্রবণ অঞ্চল।
বৈশিষ্ট্য –
- সুনামির গতি থাকে 300-1000 কিমি/ঘণ্টা
- উপকূলের কাছে সুনামির উচ্চতা থাকে 30-40 মিটার।
মনুষ্যকুলের ওপর প্রভাব – এই জলোচ্ছ্বাস সমুদ্র উপকূলে আছড়ে পড়ে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করে। সম্পত্তি ও জীবনহানি ঘটায়।
উদাহরণ – 2004 সালের 26 ডিসেম্বর ভারত মহাসাগরে ঘটে যাওয়া বিশাল সুনামি।

ঘূর্ণিঝড় (Cyclone)
শব্দের অর্থ – ঘূর্ণিঝড় শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Cyclone। ‘Cyclone’ শব্দটি এসেছে গ্রিক শব্দ ‘Kukloma’ থেকে যার অর্থ সাপের কুণ্ডলী।
সংজ্ঞা – দীর্ঘকালীন উত্তাপের কারণে সৃষ্ট নিম্নচাপ কেন্দ্রের দিকে উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে প্রবল বেগে প্রবাহিত বায়ুকে বলে ঘূর্ণিঝড়।
প্রভাবিত রাজ্য – ভারতের পূর্ব উপকূল বরাবর ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও তামিলনাড়ু হল ঘূর্ণিঝড় প্রভাবিত রাজ্য।
বৈশিষ্ট্য –
- সাইক্লোনে বাতাসের গতিবেগ থাকে 100-200 কিমি/ঘণ্টা।
- সমুদ্র থেকে এই ঘূর্ণিঝড় প্রবল বৃষ্টি সহকারে উপকূলীয় এলাকায় আছড়ে পড়ে।
- বেশিরভাগ সময়ই এই ঘূর্ণিঝড় মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমনের সময় সৃষ্টি হয়।
উদাহরণ – আয়লা, ফাইলিন প্রভৃতি হল কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সাইক্লোন।

হিমানী সম্প্রপাত (Avalanche)
পর্বতের ঢাল বেয়ে মাধ্যাকর্ষণের প্রভাবে বিপুল পরিমাণ হিমরাশির বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে নেমে আসার ঘটনাকে হিমানী সম্প্রপাত বলে।
সৃষ্টির কারণ – অতিরিক্ত তুষারপাত, উষ্ণতার বৃদ্ধি, প্রবল বায়ুপ্রবাহ, ভূমিকম্প প্রভৃতি কারণে হিমানী সম্প্রপাত হয়ে থাকে।
প্রভাব –
- হিমানী সম্প্রপাতের ফলে পর্বতারোহণে বিঘ্নতার সৃষ্টি হয়।
- অনেক সময় পর্বতারোহীদের মৃত্যু ঘটে।
- রাস্তাঘাট অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।

ব্লিজার্ড (Blizzard)
সংজ্ঞা – সূক্ষ্ম তুষার কেলাস (ছোটো বরফকণা) বহনকারী অতি শীতল এবং প্রচন্ড বেগে প্রবাহিত বায়ুপ্রবাহকে তুষারঝড় বা ব্লিজার্ড বলে। আন্টার্কটিকা, উত্তর আমেরিকার উত্তরভাগ, কানাডা, ইউরোপ ও এশিয়ার উত্তরাংশে, বরফাবৃত উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে ব্লিজার্ড সৃষ্টি হতে দেখা যায়।
বৈশিষ্ট্য –
- এই ঝড়ে বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় 120-160 কিমি হয়
- তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নীচে নেমে যায়
- সামান্য দূরের বস্তুও দৃশ্যমান হয় না
- ঝড়ের স্থায়িত্ব কমপক্ষে 3 ঘণ্টা হয়ে থাকে
প্রভাব –
- ব্লিজার্ডের প্রভাবে জমা বরফ পরে গলে গিয়ে বন্যার সৃষ্টি করে
- কৃষিজমি তুষারাবৃত হয়ে পড়ায় ফসলের ক্ষতি হয়
- রেলপথ, সড়কপথ, বিমানবন্দর তুষারাবৃত হয়ে পড়ে
উদাহরণ – 1888 সালে ঘটা ব্লিজার্ড -এর ফলে USA -এর কানেটিকাট্ এবং ম্যাসাচুসেট্স -এ প্রায় 400 জন মারা যায়।

মহা অগ্ন্যুৎপাত (Super volcano)
সংজ্ঞা – যে সমস্ত আগ্নেয়গিরি থেকে 1015 কেজি -এর বেশি ম্যাগমা উদ্গীরণ হয় তাদের Super volcano বা মহা অগ্ন্যুৎপাত বলে। এই Super volcano -গুলি সাধারণত তপ্তবিন্দু (Hot Spot) বা অধঃপাত অঞ্চলে (Subduction Zone) -এ সংঘটিত হয়।

Class 9 Geography All Chapter Notes
আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলেরষষ্ঠ অধ্যায় ‘দুর্যোগ ও বিপর্যয়’ এর টীকা নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য বা চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি নবম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন