আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় ‘পৃথিবীপৃষ্ঠে কোনো স্থানের অবস্থান নির্ণয়’ এর কিছু ভৌগোলিক কারণ ব্যাখ্যা মূলক প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

“নিরক্ষরেখা বরাবর হাঁটলে সময় পরিবর্তন হয় এবং মূলমধ্যরেখা বরাবর হাঁটলে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে” – সংক্ষেপে কারণ ব্যাখ্যা করো।
অথবা, দ্রাঘিমারেখা বরাবর হাঁটলে জলবায়ুর পরিবর্তন হয় – ব্যাখ্যা করো।
নিরক্ষরেখা বরাবর হাঁটলে সময় পরিবর্তনের কারণ – একজন পর্যটক যদি নিরক্ষরেখা বরাবর হাঁটতে থাকে, তাহলে তাকে দ্রাঘিমারেখা অতিক্রম করে যেতে হবে। পৃথিবী নিজের মেরুদণ্ডের চারদিকে পশ্চিম থেকে পূর্বে একবার আবর্তন করতে সময় নেয় 1 দিন বা 24 ঘণ্টা। অর্থাৎ, 360° ঘুরতে পৃথিবী সময় নেয় (24 × 60) = 1440 মিনিট। সুতরাং, 1° দ্রাঘিমা অতিক্রম করতে পৃথিবী সময় নেয় (1440 ÷ 360) = 4 মিনিট। তাই নিরক্ষরেখা বরাবর হাঁটলে প্রতি 1° দ্রাঘিমা অতিক্রম করলে 4 মিনিট করে সময়ের পার্থক্য হবে। পর্যটকটি যদি পূর্বদিকে এগোতে থাকে তাহলে 1° দ্রাঘিমার পার্থক্যে সময় 4 মিনিট করে এগিয়ে যাবে এবং পশ্চিমদিকে এগোতে থাকলে একই কারণে 4 মিনিট করে সময় পিছিয়ে যাবে।
মূলমধ্যরেখা বরাবর হাঁটলে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ – মূলমধ্যরেখা উত্তর-দক্ষিণে বিস্তৃত এবং প্রতিটি অক্ষরেখাকে সমকোণে ছেদ করেছে। আমরা জানি, অক্ষরেখার পরিবর্তনে জলবায়ুর পরিবর্তন ঘটে, কারণ নিরক্ষরেখা থেকে দুই মেরুর দিকে সূর্যরশ্মি ক্রমশ তির্যকভাবে পড়ে বলে উষ্ণতা নিরক্ষরেখা থেকে দুই মেরুর দিকে ক্রমশ কমতে থাকে। তাই নিরক্ষরেখা থেকে যে-কোনো দ্রাঘিমারেখা বা মূলমধ্যরেখা বরাবর মেরু অঞ্চলের দিকে কোনো পর্যটক এগোতে থাকলে জলবায়ুর পরিবর্তন প্রত্যক্ষ করবে। অর্থাৎ, সে অধিক উষ্ণ জলবায়ু অঞ্চল থেকে অধিক শীতল জলবায়ু অঞ্চলে পৌঁছাবে।
180° দ্রাঘিমারেখাকে আন্তর্জাতিক তারিখরেখা ধরা হল কেন?
180° দ্রাঘিমারেখাকে আন্তর্জাতিক তারিখরেখা ধরার যুক্তি হল –
- 180° পূর্ব ও 180° পশ্চিম দ্রাঘিমারেখা আসলে একটিই দ্রাঘিমারেখা।
- 180° রেখাটি মূল মধ্যরেখার (0°) ঠিক বিপরীতে অবস্থিত। অর্থাৎ, সময় যেখানে শুরু হয় তার বিপরীতে সময় শেষ হয়।
- রেখাটির প্রায় পুরো অংশই সমুদ্রের ওপর দিয়ে বিস্তৃত।
- 180° রেখাটি চারটি মহাদেশকে পৃথক করেছে। দেশ অপেক্ষা মহাদেশের সীমারেখা বরাবর তারিখ পরিবর্তন অনেক সুবিধাজনক।
- মূলমধ্যরেখার সঙ্গে 180° রেখা হল পূর্ব ও পশ্চিম গোলার্ধের সীমারেখা।
পৃথিবীতে প্রতিপাদ স্থান দুটি সর্বদা বিপরীত গোলার্ধে অবস্থিত হয় কেন?
অথবা, ব্যাখ্যা করো – কলকাতার প্রতিপাদ স্থান অক্ষাংশ অনুসারে দক্ষিণ গোলার্ধে এবং দ্রাঘিমাংশ অনুসারে পশ্চিম গোলার্ধে অবস্থিত।
আমরা জানি, ভূপৃষ্ঠের কোনও স্থান বা বিন্দু থেকে কল্পিত ব্যাস ভূকেন্দ্র ভেদ করে সোজা বিপরীত গোলার্ধের যে প্রান্তে মিলিত হয়, তাকে প্রথম স্থান বা প্রথম বিন্দুর প্রতিপাদ স্থান বলা হয়। কল্পিত প্রতিপাদ স্থানের 180° ব্যাসটি যেহেতু ভূকেন্দ্রকে ভেদ করে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে বিপরীত প্রান্তে পৌঁছায়, তাই প্রতিপাদ স্থান দুটি সর্বদা বিপরীত গোলার্ধে অবস্থিত হয়।
উদাহরণ – কলকাতা উত্তর গোলার্ধে 22°34′ উত্তর অক্ষরেখায় অবস্থিত। তাই স্বাভাবিকভাবেই কলকাতার প্রতিপাদ স্থান দক্ষিণ গোলার্ধে 22°34′ দক্ষিণ অক্ষরেখায় অবস্থিত হবে।
আবার, কলকাতা পূর্ব গোলার্ধে 88°30′ পূর্ব দ্রাঘিমারেখায় অবস্থিত। তাই স্বাভাবিকভাবেই কলকাতার প্রতিপাদ স্থান পশ্চিম গোলার্ধে অবস্থিত হবে। তবে এক্ষেত্রে প্রতিপাদ স্থান 88°30′ পশ্চিম দ্রাঘিমারেখায় অবস্থিত হবে না। প্রতিপাদ স্থানের অবস্থান হবে (180° − 88°30′) = 91°30′ পশ্চিম দ্রাঘিমারেখা। কারণ কোনো স্থান ও তার প্রতিপাদ স্থানের মধ্যে দ্রাঘিমার পার্থক্য হয় 180°।
প্রশান্ত মহাসাগরের ওপর দিয়ে 180° দ্রাঘিমারেখা অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক তারিখরেখাকে কল্পনা করা হয়েছে, কিন্তু কোথাও কোথাও এই রেখা বাঁকিয়ে দেওয়া হয়েছে কেন?
আন্তর্জাতিক তারিখরেখা সর্বত্র 180° দ্রাঘিমারেখাকে অনুসরণ করেনি। মাঝে মাঝে এই রেখাটিকে বাঁকিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেমন –

- উত্তর সাগরে ক্রোভ ও ভ্রাঙ্গেলিয়া দ্বীপের কাছে 11° পূর্বে বাঁকিয়ে বেরিং সাগরের ওপর দিয়ে টানা হয়েছে।
- অ্যালুসিয়ান দ্বীপপুঞ্জকে এড়ানোর জন্য প্রায় 7° পশ্চিমে বাঁকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
- ফিজি, টোঙ্গা, চ্যাথাম প্রভৃতি দ্বীপপুঞ্জের নিকট 11° পূর্বে বাঁকিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কারণ – এই সকল দ্বীপ ও দ্বীপপুঞ্জের অধিবাসীদের মধ্যে তারিখ বা বার নিয়ে যাতে কোনো বিভ্রান্তি দেখা না যায়, তার জন্য আন্তর্জাতিক তারিখরেখাকে এমনভাবে বাঁকানো হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ আন্তর্জাতিক তারিখরেখা পেরিয়ে কোনো পূর্ব গোলার্ধের দেশে গেলে রবিবার হত এবং আন্তর্জাতিক তারিখরেখা পেরিয়ে পশ্চিম গোলার্ধে গেলে সেখানে শনিবার হত।
কলকাতা (88°30′ পূর্ব) এবং ঢাকার (90° পূর্ব) দ্রাঘিমার পার্থক্য মাত্র 1°30′ হওয়া সত্ত্বেও আকাশবাণী কলকাতা এবং ঢাকার রেডিয়োর সময়ের পার্থক্য 30 মিনিট হয় কেন?
কলকাতা (88°30′পূর্ব) এবং ঢাকার (90° পূর্ব) দ্রাঘিমার পার্থক্য মাত্র 1°30′ হওয়া সত্ত্বেও আকাশবাণী কলকাতা এবং ঢাকার রেডিয়োর সময়ের পার্থক্য 30 মিনিট হয়, কারণ – ভারতের প্রমাণ দ্রাঘিমার (82°30′ পূর্ব) সময় অনুযায়ী আকাশবাণী কলকাতার রেডিয়োর অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হয় এবং ঢাকা রেডিয়ো বাংলাদেশের প্রমাণ দ্রাঘিমার (90° পূর্ব) সময় অনুসারে অনুষ্ঠান সম্প্রচার করে। অর্থাৎ, ঢাকা ও কলকাতা দুটি আলাদা রাষ্ট্রে অবস্থিত বলে তাদের প্রমাণ সময়ও আলাদা। যদিও কলকাতা (88°30′ পূর্ব) এবং ঢাকার (90° পূর্ব) মধ্যে দ্রাঘিমাগত পার্থক্য মাত্র 1°30′ হলেও আসলে ঢাকার (যা বাংলাদেশের প্রমাণ দ্রাঘিমা 90° পূর্ব) ও ভারতের প্রমাণ দ্রাঘিমার মধ্যে পার্থক্য ধরা হয় (90° পূর্ব − 82°30′ পূর্ব) = 7°30′। 1° দ্রাঘিমা পার্থক্যে সময় পার্থক্য হয় 4 মিনিট। তাই 7° দ্রাঘিমা পার্থক্যে সময়ের পার্থক্য হয় (4 × 7) = 28 মিনিট এবং 30′ দ্রাঘিমার পার্থক্যে সময়ের পার্থক্য হয় 2 মিনিট (যেহেতু, 1′ দ্রাঘিমার পার্থক্যে সময়ের পার্থক্য হয় 4 সেকেন্ড), তাই ভারতের প্রমাণ সময় ও বাংলাদেশের তথা ঢাকার প্রমাণ সময়ের মোট পার্থক্য হয় (28 মিনিট + 2 মিনিট) = 30 মিনিট। যেহেতু, ভারতের প্রমাণ সময় অনুযায়ী সারা ভারতে সময় নির্ধারণ করা হয়, তাই কলকাতার সময় ও ঢাকার সময়ের মধ্যে পার্থক্যও হয় 30 মিনিটের।

কোনো স্থান ও তার প্রতিপাদ স্থানের মধ্যে সময়ের পার্থক্য 12 ঘণ্টা – উপযুক্ত কারণসহ ব্যাখ্যা করো।
ভূ-পৃষ্ঠের ওপর অবস্থিত কোনো স্থানের ঠিক বিপরীত স্থানকে ওই স্থানের প্রতিপাদ স্থান বলে। অর্থাৎ, ভূ-পৃষ্ঠের কোনো স্থান থেকে কল্পিত রেখা পৃথিবীর কেন্দ্রের মধ্য দিয়ে প্রসারিত করলে তা বিপরীত প্রান্তে যে স্থানে স্পর্শ করে, তাকে প্রতিপাদ স্থান বলে। পৃথিবীর গোলকাকার আকৃতির (360°) জন্য কোনো স্থান ও তার প্রতিপাদ স্থানের মধ্যে কৌণিক দূরত্ব হয় 180°।

আমরা জানি,
360° কৌণিক দূরত্ব ঘুরতে পৃথিবীর সময় লাগে 24 ঘণ্টা
1° কৌণিক দূরত্ব ঘুরতে পৃথিবীর সময় লাগে \(\frac{24}{360}\) ঘণ্টা
180° কৌণিক দূরত্ব ঘুরতে পৃথিবীর সময় লাগে \(180\times\frac{24}{360}\) ঘণ্টা = 12 ঘণ্টা।
সুতরাং, কোনো স্থান ও তার প্রতিপাদ স্থানের মধ্যে কৌণিক দূরত্ব বা দ্রাঘিমার পার্থক্য 180° হওয়ায় সময়ের পার্থক্য হয় 12 ঘণ্টা।
পৃথিবীর কোন্ দেশের ক্যালেন্ডারে 2011 সালের 30 ডিসেম্বর তারিখটি নেই এবং কেন?
প্রশান্ত মহাসাগরের বুকে অবস্থিত দ্বীপ দেশ সামোয়ার ক্যালেন্ডারে 30 ডিসেম্বর তারিখটি নেই। কারণ – সামোয়া আন্তর্জাতিক তারিখরেখার ওপারে পশ্চিম গোলার্ধের দেশ ছিল। কিন্তু এই দেশের ব্যাবসা-বাণিজ্য চলত পূর্ব গোলার্ধের দেশ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে। এই কারণে সামোয়া দেশটিতে সপ্তাহে 3 দিন কাজের সময় কমে যাচ্ছিল। এই অসুবিধা দূর করার জন্য সামোয়া সরকার আন্তর্জাতিক তারিখ রেখা বাঁকিয়ে দিয়ে পূর্বগোলার্ধে চলে আসে। এজন্য সামোয়া সরকারকে 1 দিন কমিয়ে দিতে হয়। তাই তারা 2011 সালের 30 ডিসেম্বর তারিখটিকে ক্যালেন্ডার থেকে বাদ দিয়ে দেয়। সামোয়া দেশে 2011 সালে 29 ডিসেম্বর বৃহস্পতিবারের পরে শুরু হয় 31 ডিসেম্বর শনিবার।
Class 9 Geography All Chapter Notes
আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের তৃতীয় অধ্যায় ‘পৃথিবীপৃষ্ঠে কোনো স্থানের অবস্থান নির্ণয়’ এর কিছু ভৌগোলিক কারণ ব্যাখ্যা মূলক প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য বা চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি নবম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।
মন্তব্য করুন