মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – রাসায়নিক গণনা – দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর

এ আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের রাসায়নিক গণনা অধ্যায়ের দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করব। যেগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। রাসায়নিক গণনা অধ্যায়ের দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর গুলি আপনি যদি ভালো করে দেখে মুখস্ত করে যান, তাহলে মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাসায়নিক গণনা অধ্যায়ের দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর থেকে যা প্রশ্নই আসুক না কেন আপনি সঠিক উত্তর দিতে পারবেন।

মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান – রাসায়নিক গণনা

রাসায়নিক গণনার ক্ষেত্রে শমিত রাসায়নিক সমীকরণের গুরুত্ব আলোচনা করো।

রাসায়নিক সমীকরণ থেকে রাসায়নিক বিক্রিয়ার গুণগত ও পরিমাণগত বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।

গুণগত তথ্য – রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কী কী বিক্রিয়ক পদার্থ (মৌল বা যৌগ) বিক্রিয়া করে কী কী বিক্রিয়াজাত পদার্থ উৎপন্ন করে তা জানা যায়।

পরিমাণগত তথ্য –

  • বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থগুলির অণু ও পরমাণুর সংখ্যা জানা যায়।
  • কত ভাগ ওজনের বিক্রিয়ক পরস্পর বিক্রিয়া করে কত ভাগ ওজনের বিক্রিয়াজাত পদার্থ উৎপন্ন করে অর্থাৎ বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থগুলির ওজনগত সম্পর্ক জানা যায়।
  • বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থগুলি গ্যাসীয় হলে একই চাপ ও উন্নতায় ওদের আয়তনের অনুপাত অর্থাৎ আয়তনমাত্রিক সম্পর্ক জানা যায়।

2H2+O2 → 2H20 সমীকরণটি থেকে কী কী বিষয় জানা যায়?

প্রদত্ত সমীকরণটি থেকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি জানা যায় –

গুণগত তথ্য – হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় জল উৎপন্ন হয়।

পরিমাণগত তথ্য –

  • 2 মোল হাইড্রোজেন অণু, 1 মোল অক্সিজেন অণুর সঙ্গে বিক্রিয়া করে 2 মোল জলের অণু বিক্রিয়াজাত পদার্থরূপে উৎপন্ন করে।
  • এক্ষেত্রে 2× (2×1) বা 4 গ্রাম ভরের হাইড্রোজেন, (2×16) বা 32 গ্রাম ভরের অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে 2x (2×1 +16) বা 36 গ্রাম ভরের জল উৎপন্ন করে।
  • একই চাপ ও উষ্ণতায় 2 আয়তন হাইড্রোজেন, 1 আয়তন অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে 2 আয়তন জল উৎপন্ন করে।
  • STP – তে (2 x 22.4) বা 44.8 লিটার হাইড্রোজেন, 22.4 লিটার অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে (2 × 22.4) বা 44.8 লিটার স্টিম উৎপন্ন করে।

রাসায়নিক সমীকরণের কয়েকটি সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করো।

রাসায়নিক সমীকরণ থেকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি জানা যায় না –

  • বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থগুলির গাঢ়ত্ব সম্পর্কে জানা যায় না।
  • বিক্রিয়াটির গতিবেগ সম্বন্ধে বা বিক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হতে কত সময়ের প্রয়োজন তা রাসায়নিক সমীকরণ থেকে জানা যায় না।
  • বিক্রিয়াটির সম্পূর্ণতা সম্বন্ধে অর্থাৎ বিক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হয়েছে কি না তা জানা যায় না।

রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ভরের সংরক্ষণ হয় কিনা তা একটি পরীক্ষার সাহায্যে বর্ণনা করো।

লোহায় মরচে পড়ার পরীক্ষার মাধ্যমে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ভরের সংরক্ষণ সূত্রটি ব্যাখ্যা করা হল।

উপকরণ – একটি হার্ডগ্লাস টেস্টটিউব, কয়েকটি চকচকে লোহার পেরেক, জল, রবার কর্ক, তুলাযন্ত্র।

পরীক্ষা পদ্ধতি – হার্ডগ্লাস টেস্টটিউবের মধ্যে সামান্য জল নিয়ে ওর মধ্যে কয়েকটি চকচকে লোহার পেরেক আংশিক ডুবিয়ে রাখা হল। রবারের কর্ক দিয়ে টেস্টটিউবের মুখটি বায়ুনিরুদ্ধ করে বন্ধ করে দেওয়া হল। এই অবস্থায় তুলাযন্ত্রে জল ও পেরেকসমেত টেস্টটিউবটির ভর মেপে কয়েকদিন রেখে দেওয়া হল।

পর্যবেক্ষণ – কয়েকদিন পর দেখা গেল যে, লোহার পেরেকের গায়ে বাদামি রং – এর মরচে পড়েছে। এখন টেস্টটিউবের ভর আবার মাপা হলে দেখা যাবে আগের ভর ও পরের ভর একই আছে।

সিদ্ধান্ত – লোহার পেরেক, টেস্টটিউবের ভেতরে থাকা বায়ুর অক্সিজেন এবং জলীয় বাষ্পের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মরচে উৎপন্ন করে। Fe + O₂ + জলীয় বাষ্প → Fe2o3·xH2O (মরচে), x = জল অণুর সংখ্যা। টেস্টটিউবের মধ্যে যেটুকু অক্সিজেন এবং জলীয় বাষ্প কমে যায়, সেইটুকু অক্সিজেন এবং জলীয় বাষ্প লোহার সঙ্গে যুক্ত হয়ে মরচে উৎপন্ন করে। এই পরীক্ষায় রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ভরের সংরক্ষণ প্রমাণিত হল।

∴ গ্যাসীয় পদার্থের প্রমাণ ঘনত্ব = গ্যাসের আপেক্ষিক ঘনত্ব বা বাষ্পঘনত্ব × 0.089 gL-1

কোনো গ্যাসের আণবিক গুরুত্ব (M) ও বাষ্পঘনত্বের (D) মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করো।

গ্যাসের বাষ্পঘনত্ব

=নির্দিষ্ট উষ্ণতা ও চাপে V আয়তন গ্যাসের ভরএকই উষ্ণতা ও চাপে V আয়তন H₂ গ্যাসের ভর

অ্যাভোগাড়ো সূত্রানুসারে নির্দিষ্ট উষ্ণতা ও চাপে V আয়তন কোনো গ্যাসের n সংখ্যক অণু থাকলে, ওই একই উষ্ণতা ও চাপে V আয়তন H2 গ্যাসে n সংখ্যক হাইড্রোজেন অণু থাকবে।

∴ গ্যাসের বাষ্পঘনত্ব (D)

=গ্যাসের n – সংখ্যক অণুর ভরহাইড্রোজেনের n – সংখ্যক অণুর ভর

=গ্যাসের 1 টি অণুর ভরহাইড্রোজেনের 1 টি অণুর ভর

=গ্যাসের 1 টি অণুর ভর2 টি হাইড্রোজেন পরমাণুর ভর ∴ (হাইড্রোজেন দ্বি-পরমাণুক)

=12×(গ্যাসের 1টি অণুর ভর1 টি হাইড্রোজেন পরমাণুর ভর)

কোনো মৌল বা যৌগের একটি অণু একটি হাইড্রোজেন পরমাণুর তুলনায় যতগুণ ভারী, সেই তুলনামূলক সংখ্যাকে ওই মৌল বা যৌগের আণবিক গুরুত্ব বলে।

∴ গ্যাসের বাষ্পঘনত্ব (D)

=12×গ্যাসের আণবিক গুরুত্ব (M)

D=12 বা, M = 2D

সুতরাং, কোনো গ্যাসের আণবিক গুরুত্ব = 2 × হাইড্রোজেনের সাপেক্ষে গ্যাসটির বাষ্পঘনত্ব।

বায়ুতে আয়তনগতভাবে 74% N2, 24%O2 এবং 2%CO2 উপস্থিত। প্রদত্ত গ্যাসগুলির মধ্যে কোনগুলি বায়ু অপেক্ষা হালকা এবং কোগুলি বায়ু অপেক্ষা ভারী হবে – CO2, NH3, CH4, Cl2?

বায়ুর গড় আণবিক গুরুত্ব

=(28×74)+(32×24)+(2×44)100=29.28

∴ বায়ুর বাষ্পঘনত্ব =29.282=14.64

এখন, CO₂ – এর বাষ্পঘনত্ব =442=22, NH3 – এর বাষ্পঘনত্ব =172=8.5, CH4 – এর বাষ্পঘনত্ব =162=8 এবং Cl2 -এর বাষ্পঘনত্ব =712=35.5

সুতরাং, বায়ুর সাপেক্ষে হালকা গ্যাসগুলি হল NH3 ও CH4, এবং বায়ুর সাপেক্ষে ভারী গ্যাসগুলি হল CO2 ও Cl2

কোনো গ্যাসীয় পদার্থের প্রমাণ ঘনত্ব ও আপেক্ষিক ঘনত্ব বা বাষ্পঘনত্বের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করো।

কোনো গ্যাসীয় পদার্থের আপেক্ষিক ঘনত্ব বা বাষ্পঘনত্ব

কোনো গ্যাসীয় পদার্থের প্রমাণ ঘনত্ব ও আপেক্ষিক ঘনত্ব বা বাষ্পঘনত্বের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করো

মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য রাসায়নিক গণনা অধ্যায়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অধ্যায়ের দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরগুলো ভালোভাবে অনুশীলন করলে আপনি যেকোনো ধরণের প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবেন। এই প্রশ্নোত্তরগুলোতে রাসায়নিক নীতি, ধারণা এবং সূত্রের ব্যবহারিক প্রয়োগ রয়েছে। নিয়মিত অনুশীলনের মাধ্যমে আপনি আপনার সমস্যা সমাধানের দক্ষতা এবং আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করতে পারবেন।

এছাড়াও, দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরগুলো সমাধান করার মাধ্যমে আপনি পরীক্ষার সময় ব্যবস্থাপনা করার দক্ষতা অর্জন করতে পারবেন।

সুতরাং, মাধ্যমিক রসায়ন শাস্ত্রে ভালো ফলাফল অর্জনের জন্য দীর্ঘ প্রশ্নোত্তরগুলো নিয়মিত অনুশীলন করা অত্যন্ত জরুরি।

Share via:

মন্তব্য করুন