আজকের এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞানের তৃতীয় অধ্যায় ‘রাসায়নিক গণনা’ – এর গুরুত্বপূর্ণ দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য অত্যন্ত সহায়ক হবে, বিশেষত যারা প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন। কারণ, এই ধরনের প্রশ্ন মাধ্যমিক এবং বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় প্রায়শই আসে।
রাসায়নিক গণনার ক্ষেত্রে শমিত রাসায়নিক সমীকরণের গুরুত্ব আলোচনা করো।
রাসায়নিক সমীকরণ থেকে রাসায়নিক বিক্রিয়ার গুণগত ও পরিমাণগত বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়।
গুণগত তথ্য – রাসায়নিক বিক্রিয়ায় কী কী বিক্রিয়ক পদার্থ (মৌল বা যৌগ) বিক্রিয়া করে কী কী বিক্রিয়াজাত পদার্থ উৎপন্ন করে তা জানা যায়।
পরিমাণগত তথ্য –
- বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থগুলির অণু ও পরমাণুর সংখ্যা জানা যায়।
- কত ভাগ ওজনের বিক্রিয়ক পরস্পর বিক্রিয়া করে কত ভাগ ওজনের বিক্রিয়াজাত পদার্থ উৎপন্ন করে অর্থাৎ বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থগুলির ওজনগত সম্পর্ক জানা যায়।
- বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থগুলি গ্যাসীয় হলে একই চাপ ও উষ্ণতায় ওদের আয়তনের অনুপাত অর্থাৎ আয়তনমাত্রিক সম্পর্ক জানা যায়।
2H2 + O2 → 2H2O সমীকরণটি থেকে কী কী বিষয় জানা যায়?
প্রদত্ত সমীকরণটি থেকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি জানা যায় –
গুণগত তথ্য – হাইড্রোজেন ও অক্সিজেনের রাসায়নিক বিক্রিয়ায় জল উৎপন্ন হয়।
পরিমাণগত তথ্য –
- 2 মোল হাইড্রোজেন অণু, 1 মোল অক্সিজেন অণুর সঙ্গে বিক্রিয়া করে 2 মোল জলের অণু বিক্রিয়াজাত পদার্থরূপে উৎপন্ন করে।
- এক্ষেত্রে 2 × (2 × 1) বা 4 গ্রাম ভরের হাইড্রোজেন, (2 × 16) বা 32 গ্রাম ভরের অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে 2 × (2 × 1 + 16) বা 36 গ্রাম ভরের জল উৎপন্ন করে।
- একই চাপ ও উষ্ণতায় 2 আয়তন হাইড্রোজেন, 1 আয়তন অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে 2 আয়তন জল উৎপন্ন করে।
- STP -তে (2 × 22.4) বা 44.8 লিটার হাইড্রোজেন, 22.4 লিটার অক্সিজেনের সঙ্গে বিক্রিয়া করে (2 × 22.4) বা 44.8 লিটার স্টিম উৎপন্ন করে।
রাসায়নিক সমীকরণের কয়েকটি সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করো।
রাসায়নিক সমীকরণ থেকে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি জানা যায় না –
- বিক্রিয়ক ও বিক্রিয়াজাত পদার্থগুলির গাঢ়ত্ব সম্পর্কে জানা যায় না।
- বিক্রিয়াটির গতিবেগ সম্বন্ধে বা বিক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হতে কত সময়ের প্রয়োজন তা রাসায়নিক সমীকরণ থেকে জানা যায় না।
- বিক্রিয়াটির সম্পূর্ণতা সম্বন্ধে অর্থাৎ বিক্রিয়াটি সম্পূর্ণ হয়েছে কি না তা জানা যায় না।
রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ভরের সংরক্ষণ হয় কিনা তা একটি পরীক্ষার সাহায্যে বর্ণনা করো।
লোহায় মরচে পড়ার পরীক্ষার মাধ্যমে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ভরের সংরক্ষণ সূত্রটি ব্যাখ্যা করা হল।
উপকরণ – একটি হার্ডগ্লাস টেস্টটিউব, কয়েকটি চকচকে লোহার পেরেক, জল, রবার কর্ক, তুলাযন্ত্র।
পরীক্ষা পদ্ধতি – হার্ডগ্লাস টেস্টটিউবের মধ্যে সামান্য জল নিয়ে ওর মধ্যে কয়েকটি চকচকে লোহার পেরেক আংশিক ডুবিয়ে রাখা হল। রবারের কর্ক দিয়ে টেস্টটিউবের মুখটি বায়ুনিরুদ্ধ করে বন্ধ করে দেওয়া হল। এই অবস্থায় তুলাযন্ত্রে জল ও পেরেকসমেত টেস্টটিউবটির ভর মেপে কয়েকদিন রেখে দেওয়া হল।
পর্যবেক্ষণ – কয়েকদিন পর দেখা গেল যে, লোহার পেরেকের গায়ে বাদামি রং -এর মরচে পড়েছে। এখন টেস্টটিউবের ভর আবার মাপা হলে দেখা যাবে আগের ভর ও পরের ভর একই আছে।
সিদ্ধান্ত – লোহার পেরেক, টেস্টটিউবের ভেতরে থাকা বায়ুর অক্সিজেন এবং জলীয় বাষ্পের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মরচে উৎপন্ন করে। Fe + O2 + জলীয় বাষ্প → Fe2O3⋅xH2O (মরচে), x = জল অণুর সংখ্যা। টেস্টটিউবের মধ্যে যেটুকু অক্সিজেন এবং জলীয় বাষ্প কমে যায়, সেইটুকু অক্সিজেন এবং জলীয় বাষ্প লোহার সঙ্গে যুক্ত হয়ে মরচে উৎপন্ন করে। এই পরীক্ষায় রাসায়নিক বিক্রিয়ায় ভরের সংরক্ষণ প্রমাণিত হল।
কোনো গ্যাসীয় পদার্থের প্রমাণ ঘনত্ব ও আপেক্ষিক ঘনত্ব বা বাষ্পঘনত্বের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করো।
কোনো গ্যাসীয় পদার্থের আপেক্ষিক ঘনত্ব বা বাষ্পঘনত্ব
∴ গ্যাসীয় পদার্থের প্রমাণ ঘনত্ব = গ্যাসের আপেক্ষিক ঘনত্ব বা বাষ্পঘনত্ব × 0.089 gL-1
কোনো গ্যাসের আণবিক গুরুত্ব (M) ও বাষ্পঘনত্বের (D) মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করো।
গ্যাসের বাষ্পঘনত্ব =
অ্যাভোগাড়ো সূত্রানুসারে নির্দিষ্ট উষ্ণতা ও চাপে V আয়তন কোনো গ্যাসের n সংখ্যক অণু থাকলে, ওই একই উষ্ণতা ও চাপে V আয়তন H2 গ্যাসে n সংখ্যক হাইড্রোজেন অণু থাকবে।
∴ গ্যাসের বাষ্পঘনত্ব (D) =
[∵ হাইড্রোজেন দ্বি-পরমাণুক]
)
কোনো মৌল বা যৌগের একটি অণু একটি হাইড্রোজেন পরমাণুর তুলনায় যতগুণ ভারী, সেই তুলনামূলক সংখ্যাকে ওই মৌল বা যৌগের আণবিক গুরুত্ব বলে।
∴ গ্যাসের বাষ্পঘনত্ব (D)
গ্যাসের আণবিক গুরুত্ব (M)
∴
বা, M = 2D
সুতরাং, কোনো গ্যাসের আণবিক গুরুত্ব = 2 × হাইড্রোজেনের সাপেক্ষে গ্যাসটির বাষ্পঘনত্ব।
বায়ুতে আয়তনগতভাবে 74% N2, 24% O2 এবং 2% CO2 উপস্থিত। প্রদত্ত গ্যাসগুলির মধ্যে কোনগুলি বায়ু অপেক্ষা হালকা এবং কোনগুলি বায়ু অপেক্ষা ভারী হবে – CO2, NH3, CH4, Cl2?
বায়ুর গড় আণবিক গুরুত্ব∴ বায়ুর বাষ্পঘনত্ব
এখন, CO₂ -এর বাষ্পঘনত্ব -এর বাষ্পঘনত্ব -এর বাষ্পঘনত্ব এবং -এর বাষ্পঘনত্ব
সুতরাং, বায়ুর সাপেক্ষে হালকা গ্যাসগুলি হল NH3 ও CH4, এবং বায়ুর সাপেক্ষে ভারী গ্যাসগুলি হল CO2 ও Cl2
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক ভৌতবিজ্ঞান বইয়ের তৃতীয় অধ্যায়, “রাসায়নিক গণনা,” নিয়ে দীর্ঘ প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নোত্তরগুলো দশম শ্রেণীর পরীক্ষার প্রস্তুতি ও বিভিন্ন প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য বিশেষভাবে সহায়ক হবে, কারণ এ ধরনের প্রশ্ন প্রায়ই পরীক্ষায় আসে। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনার প্রস্তুতির জন্য সহায়ক হয়েছে। যদি কোনো প্রশ্ন বা মতামত থাকে, তাহলে টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আপনাদের প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি সর্বদা প্রস্তুত। ধন্যবাদ!