আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের সপ্তম অধ্যায় ‘ভারতের সম্পদ (সম্পদের ধারণা শ্রেণীবিভাগ ও সংরক্ষণ)’ এর ভৌগোলিক কারণ ব্যাখ্যা প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

‘খনিজ তেল সম্পদ নয়, খনিজ তেলের কার্যকারিতাই সম্পদ’।
হাজার হাজার বছর ধরে খনিজ তেল ভারতের গুজরাটের কালোল, আঙ্কেলেশ্বর ও খাম্বাত বা কাম্বে উপসাগরীয় অঞ্চলে সঞ্চিত থাকলেও পরাধীন ভারতের মানুষ তার খোঁজ না পাওয়ায় ওই খনিজ তেল ভারতীয়দের কোনো কাজে আসেনি। স্বাধীনতার পর ভারত সরকারের তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস কমিশনের প্রচেষ্টা ও রাশিয়া সরকারের সহযোগিতায় গুজরাটের ওই অঞ্চলে খনিজ তেল আবিষ্কৃত হয় এবং তা উত্তোলন করে মানুষের বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করার ফলে ওই খনিজ তেল সম্পদে পরিণত হয়েছে। অর্থাৎ, “খনিজ তেল সম্পদ নয়, খনিজ তেলের কার্যকারিতাই সম্পদ।”
অপুনর্ভব সম্পদের অধিক ব্যবহার পরিবেশের ক্ষতির কারণ হয়।
অপুনর্ভব সম্পদ হল কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস প্রভৃতি। এই সম্পদ অধিক ব্যবহার করলে পরিবেশের ক্ষতি হয়। যেমন –
- ক্ষতিকারক গ্যাসের উদ্ভব – কয়লা উত্তোলন কেন্দ্র থেকে কয়লা তোলার সময়, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে কয়লা পোড়ানোর সময় প্রচুর ছাই বাতাসে মিশছে। ফলে বাতাসে ভাসমান বস্তুকণা (SPM) বাড়ছে ও বায়ুদূষণের সঙ্গে সঙ্গে পরিবেশের অবনমন ঘটছে। পেট্রোলিয়াম, ডিজেল প্রভৃতি জ্বালানি খনিজের দহনের ফলে বিভিন্ন ক্ষতিকারক গ্যাসের উদ্ভব হয়, যেমন – কার্বন ডাইঅক্সাইড, সালফার ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন ডাইঅক্সাইড প্রভৃতি। ফলে বায়ুমণ্ডল দূষিত হয়।
- বনভূমি ও কৃষিক্ষেত্র ধ্বংস – অবৈজ্ঞানিকভাবে কয়লা উত্তোলনের সময় প্রচুর বনভূমি কেটে ফেলা হচ্ছে ও কৃষিক্ষেত্র ধ্বংস করা হচ্ছে, ফলে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।
- গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধি – অপুনর্ভব সম্পদের মাত্রাতিরিক্ত জ্বালানির জন্য প্রচুর পরিমাণে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গত হচ্ছে। বাতাসের গ্রিনহাউস গ্যাস বাড়ার ফলে বিশ্বউষ্ণায়ন, বন্যা, খরা প্রভৃতির প্রাদুর্ভাব বাড়ছে ও পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে।
সম্পদের কার্যকারিতা সর্বদা গতিশীল।
সম্পদের কার্যকারিতা সর্বদা গতিশীল – অধ্যাপক জিম্যারম্যান বলেন যে, ‘সম্পদের কার্যকারিতা বহুমুখী ও গতিশীল’, কারণ স্থান ও কালের পরিপ্রেক্ষিতে সম্পদের কার্যকরী ক্ষমতার পরিবর্তন ঘটে। এক সময় যে বস্তু নিরপেক্ষ সামগ্রী ছিল এখন তা সম্পদ, আবার বর্তমানে নিরপেক্ষ সামগ্রী ভবিষ্যতে সম্পদ হতে পারে। মানুষের শিক্ষা, জ্ঞান, বুদ্ধি, প্রযুক্তি প্রভৃতি উপাদান সম্পদের কার্যকারিতা বাড়ায়। অন্যদিকে চাহিদা, প্রযুক্তি, সময়, স্থান সম্পদের কার্যকারিতাকে নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন –
- মৃত্তিকা – মরুভূমির সিরোজেম মাটি জলসেচের অভাবে অনুর্বর হয়ে অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে, কিন্তু জলসেচের প্রয়োগ ঘটিয়ে তাকে উর্বর কার্যকরী মাটিতে পরিণত করা যায়।
- খনিজ তেল – প্রাচীনকালে খনিজ তেল সম্পদ ছিল না। এখন এর বহুমুখী ব্যবহারের জন্য একে ‘তরল সোনা’ বলা হয়।
- সমুদ্র স্রোত থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন – পূর্বে সমুদ্রস্রোতকে ব্যবহার করা না হলেও বর্তমানে এর থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়।
সুতরাং, সম্পদের কার্যকারিতা ধারণাটি গতিশীল। বস্তু ও অবস্তুগত উভয় প্রকার সম্পদের ক্ষেত্রে একথাটি প্রযোজ্য।

‘অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সাংস্কৃতিক সম্পদের সম্পর্ক জড়িত’ – ভৌগোলিক কারণ ব্যাখ্যা করো।
সাংস্কৃতিক সম্পদ বলতে মানুষের শিক্ষা, জ্ঞান, প্রযুক্তিবিদ্যা প্রভৃতিকে বোঝায়।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সাংস্কৃতিক সম্পদের একটা নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। পশুস্তর থেকে বিবর্তনের পথ ধরে মানুষ যতই উন্নততর জীবনের দিকে এগিয়েছে, মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান ততই সমৃদ্ধ হয়েছে এবং সাংস্কৃতিক সম্পদের শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছে।
আবার, সাংস্কৃতিক সম্পদের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে মানুষ নতুন নতুন সম্পদ সৃষ্টি করেছে এবং মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়নে জোয়ার এসেছে।
উন্নত সাংস্কৃতিক সম্পদের জন্য জাপান অর্থনৈতিক দিকে ভীষণ উন্নত। অন্যদিকে ব্রাজিল, মায়ানমার, ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলিতে সাংস্কৃতিক সম্পদ আশানুরূপ না হওয়ায় অর্থনৈতিক উন্নয়নের দিক থেকে পিছিয়ে আছে।

আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের সপ্তম অধ্যায় ‘ভারতের সম্পদ (সম্পদের ধারণা শ্রেণীবিভাগ ও সংরক্ষণ)’ এর ভৌগোলিক কারণ ব্যাখ্যা প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য বা চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি নবম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।