আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের সপ্তম অধ্যায় ‘ভারতের সম্পদ (খনিজ সম্পদ)’ এর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

খনিজ কাকে বলে? উদাহরণসহ খনিজের শ্রেণিবিভাগ করো।
খনিজ – শিলার মধ্যে অবস্থিত নির্দিষ্ট রাসায়নিক সংযোগবিশিষ্ট, নির্দিষ্ট পারমাণবিক গঠনযুক্ত, কেলাসিত মৌলিক বা যৌগিক পদার্থকে খনিজ বলে। যেমন – মৌলিক খনিজ হল হিরে এবং যৌগিক খনিজ হল লৌহ। এই সকল খনিজ যখন মানুষের নানান চাহিদা পূরণ করে, তখন তাকে বলা হয় খনিজ সম্পদ।
শ্রেণিবিভাগ – খনিজ বা খনিজ সম্পদের শ্রেণিবিভাগ ছকের মাধ্যমে দেখানো হল –
বিভাগ | উপবিভাগ | উদাহরণ |
---|---|---|
ধাতব খনিজ | 1. লৌহবর্গীয় খনিজ | আকরিক লোহা (হেমাটাইট, ম্যাগনেটাইট) |
2. লৌহ-সংকর খনিজ | ম্যাঙ্গানিজ, নিকেল, ক্রোমিয়াম, টাংস্টেন, কোবাল্ট | |
3. অ-লৌহবর্গীয় খনিজ | তামা, দস্তা, সিসা, টিন, বক্সাইট (অ্যালুমিনিয়ামের আকরিক) | |
4. মূল্যবান খনিজ | সোনা, রুপা, প্ল্যাটিনাম, হীরা | |
অধাতব খনিজ | 1. নির্মাণ সামগ্রী | চুনাপাথর, মার্বেল, জিপসাম, স্লেট, অ্যাসবেস্টস |
2. রাসায়নিক খনিজ | লবণ (হ্যালাইট), গন্ধক (সালফার), পটাশ, নাইট্রেট, ফসফেট | |
3. শিল্প/অন্যান্য | অভ্র, গ্রাফাইট, চিনামাটি (কাওলিন) | |
জ্বালানি খনিজ | 1. কঠিন জ্বালানি | কয়লা (বিটুমিনাস, অ্যানথ্রাসাইট), লিগনাইট |
2. তরল জ্বালানি | পেট্রোলিয়াম (খনিজ তেল) | |
3. গ্যাসীয় জ্বালানি | প্রাকৃতিক গ্যাস (মিথেন为主) | |
4. পারমাণবিক খনিজ | ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম (বিকিরণশীল খনিজ) |
আকরিক লোহার শ্রেণিবিভাগ করো।
বিশুদ্ধ লোহার পরিমাণ ও উৎকৃষ্টতা অনুসারে আকরিক লোহাকে প্রধান চারটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা –
বিভাগ | লোহার পরিমাণ | রং | বিশেষত্ব |
---|---|---|---|
ম্যাগনেটাইট (Fe3O4) | 72.4% -এর বেশি | কালো |
|
হেমাটাইট (Fe2O3) | 70% | লাল ও গাঢ় বাদামি |
|
লিমোনাইট (2Fe2O3, 3H2O) | 60% | হলুদ ও বাদামি |
|
সিডেরাইট (FeCO3) | 48% | ধূসর-বাদামি |
|
এছাড়া, আরও দুই শ্রেণির আকরিক লোহা আছে। যথা –
- বগ আয়রন – এটি অতি নিকৃষ্ট মানের অপরিণত আকরিক। এর অপর নাম টাইটেনিয়াম। লোহার পরিমাণ 33% এবং ধূসর রঙের হয়।
- পাইরাইট (FeS2) – সর্বাধিক নিকৃষ্ট আকরিক লোহা। এটির উত্তোলন অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক নয়।
কয়লার শ্রেণিবিভাগ করো।
অথবা, কার্বনের পরিমাণ অনুযায়ী ও যুগ অনুযায়ী কয়লার শ্রেণিবিভাগ করো।
প্রধানত দুটি ভিত্তিতে কয়লার শ্রেণিবিভাগ করা হয়। যথা – কয়লা সৃষ্টির ভূতাত্ত্বিক যুগ অনুসারে কয়লা দুপ্রকার – গন্ডোয়ানা যুগের কয়লা এবং টার্শিয়ারি যুগের কয়লা। উপাদানের (কার্বন, উদবায়ী পদার্থ) তারতম্য অনুসারে কয়লা প্রধানত পাঁচ প্রকার। যথা –
অ্যানথ্রাসাইট –
- কার্বনের পরিমাণ – 85%-95%
- উদবায়ী পদার্থের পরিমাণ – 3%-5%
- তাপ উৎপাদন ক্ষমতা (ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) – 14000-15000
- রং – উজ্জ্বল কালো রঙের
- বিশেষত্ব –
- এটি সর্বোৎকৃষ্ট কয়লা।
- জলীয়বাষ্প খুব কম, সহজে জ্বলে না।
- পোড়ালে ধোঁয়া ও ছাই খুব কম হয়।
- পৃথিবীর মোট উৎপাদিত কয়লার মাত্র 5% এই শ্রেণির।
বিটুমিনাস –
- কার্বনের পরিমাণ – 50%-85%
- উদবায়ী পদার্থের পরিমাণ – 5% -10%
- তাপ উৎপাদন ক্ষমতা (ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) – 7500-14000
- রং – ধূসর কালো রঙের
- বিশেষত্ব –
- উন্নতমানের এই কয়লা পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি (80%) পাওয়া যায়।
- এর ব্যবহার সর্বাধিক।
- অত্যধিক চাপে এই কয়লা সৃষ্টি হয়।
লিগনাইট –
- কার্বনের পরিমাণ – 30%-50%
- উদবায়ী পদার্থের পরিমাণ – 15%-20%
- তাপ উৎপাদন ক্ষমতা (ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) – 5000-7500
- রং – বাদামি রঙের
- বিশেষত্ব –
- মাঝারি থেকে নিকৃষ্ট মানের কয়লা।
- পোড়ালে ধোঁয়া ও ছাই খুব বেশি হয়।
- পৃথিবীর মোট উৎপাদিত কয়লার মাত্র 15% এই শ্রেণির।
পিট –
- কার্বনের পরিমাণ – 30% -এর কম
- উদবায়ী পদার্থের পরিমাণ – 20%-30%
- তাপ উৎপাদন ক্ষমতা (ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট) – 1300 -এর কম
- রং – উদ্ভিদের আঁশযুক্ত বাদামি রঙের
- বিশেষত্ব –
- সর্বনিম্ন মানের কয়লা।
- ব্যবহার অত্যন্ত কম।
- জলীয়বাষ্পের পরিমাণ খুব বেশি।
- পোড়ালে প্রচুর ধোঁয়া ও ছাই উৎপন্ন হয়।
গ্রাফাইট –
- কার্বনের পরিমাণ – 97%
- উদবায়ী পদার্থের পরিমাণ – 3% -এর কম
- রং – উজ্জ্বল কালো রঙের
- বিশেষত্ব –
- জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় না।
- পেনসিলের সিস, ধাতু গলানোর পাত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
কয়লার বিভিন্ন উপজাত দ্রব্যগুলির নাম লেখো এবং তাদের ব্যবহার উল্লেখ করো।
কয়লার বিভিন্ন উপজাত দ্রব্য ও তাদের ব্যবহার নিম্নে ছকের মাধ্যমে দেখানো হল –
উপজাত দ্রব্য | ব্যবহার |
ন্যাপথলিন | কীটনাশক দ্রব্য এবং বার্নিশ তৈরির কাঁচামাল টেট্রালিন উৎপাদন করা হয়। |
বেনজিন | ডিডিটি, গ্যামাকশিন প্রভৃতি কীটনাশক দ্রব্য, জ্বালানি তেল উৎপাদন করা হয়। |
পাইরিডিন | রং উৎপাদন ও রাবার ভালকানাইজ করার কাজে লাগে। |
ফেনল, ক্রিসোল | ঔষধ ও অ্যান্টিসেপটিক সামগ্রী উৎপাদন করা হয়। |
টোলুয়েন | বিস্ফোরক দ্রব্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। |
প্যারাজাইলিন | কৃত্রিম তন্তু উৎপাদন করা যায়। |
অ্যানথ্রাসিন | রং উৎপাদনের কাজে লাগে। |
পিচ | রাস্তা তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। |
আলকাতরা | রং করতে কাজে লাগে। |
স্যাকারিন | এই মিষ্টি দ্রব্যটি চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা হয়। |
বেনজল | রঞ্জক দ্রব্য উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়। |
অ্যামোনিয়াম সালফেট | সার উৎপাদনে ও হিমায়িত করার কাজে ব্যবহার করা হয়। |
ভারতের টার্শিয়ারি যুগের কয়লার বণ্টন লেখো।
ভারতের মাত্র 2 শতাংশ কয়লা টার্শিয়ারি যুগের। প্রায় 6-7 কোটি বছর আগে ইয়োসিন থেকে মায়োসিন উপযুগে ভারতে এই কয়লাক্ষেত্র গড়ে ওঠে। এই কয়লার বেশিরভাগই লিগনাইট জাতীয় এবং নিকৃষ্ট মানের। ভারতের নিম্নলিখিত স্থানগুলিতে টার্শিয়ারি যুগের কয়লা পাওয়া যায়। যথা –
- অসম – মাকুম, নাজিরা, জেপুর, নামবিক প্রভৃতি।
- মেঘালয় – বালফাকরাম, লোঙ্গাই, চেরাপুঞ্জি, মলং, কোলা প্রভৃতি।
- অরুণাচল প্রদেশ – মিয়াওবুম, মারি, আকাপাহাড় প্রভৃতি।
- জম্মু ও কাশ্মীর – চাকরা, কালাহাট, চীনতা, লজ্জা, মেটকাট প্রভৃতি।
- তামিলনাড়ু – নেভেলি (ভারতের বৃহত্তম লিগনাইট খনি)।
- কেরালা – ওয়ারকালা, পরাভর প্রভৃতি।
- রাজস্থান – পালানা, খারি প্রভৃতি।
- গুজরাট – উমরসর, বারান্দা, ঝুলরাই প্রভৃতি টার্শিয়ারি যুগের অন্যতম কয়লাক্ষেত্র।
খনিজ তেল (Petroleum) কাকে বলে? খনিজ তেলের শ্রেণিবিভাগ করো।
খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়াম (Petroleum) একপ্রকার জীবাশ্ম জ্বালানি। পেট্রোলিয়াম একটি ল্যাটিন শব্দ, যার ‘পেট্রা’ (Petra) কথার অর্থ ‘শিলা’ (Rock) এবং ‘ওলিয়াম’ (Olium) কথার অর্থ ‘তেল’ (Oil)। অর্থাৎ, শিলার মধ্যে যে তেল পাওয়া যায়, তাকে পেট্রোলিয়াম বলে। ভূবিজ্ঞানীদের মতে, সামুদ্রিক উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহরস থেকে এই তরল জ্বালানির উৎপত্তি ঘটেছে। এর প্রধান উপাদান হাইড্রোজেন ও কার্বন। তাই একে হাইড্রোকার্বনও বলা হয়।
শ্রেণিবিভাগ –
জটিল রাসায়নিক ধর্ম অনুসারে অপরিশোধিত খনিজ তেলকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। যথা –
প্যারাফিনযুক্ত তেল –
- এতে অত্যন্ত বেশি মাত্রায় হালকা হাইড্রোকার্বন থাকে।
- এই তেলের রং সবুজ।
- এর থেকে মূল্যবান দ্রব্য, যেমন – পেট্রোল, ডিজেল, প্যারাফিন, উন্নত মানের পিচ্ছিলকারক পদার্থ উৎপন্ন হয়।
অ্যাসফল্টযুক্ত তেল –
- এই তেল ভারী হাইড্রোকার্বন নিয়ে গঠিত।
- এই তেল আঠালো, চটচটে ও কালো রঙের হয়।
- এটি সান্দ্র ও অ্যাসফল্টবিশিষ্ট।
- পরিশোধনের সময় এর থেকে খুব কম পরিমাণ মোটর তেল, পিচ, ন্যাপথা সংগ্রহ করা যায়।
মিশ্র তেল –
- এতে আধাআধি পরিমাণ প্যারাফিন ও অ্যাসফল্টের মিশ্রণ থাকে।
- জ্বালানিরূপে ও পিচ্ছিলকারক পদার্থ তৈরিতে এই তেল ব্যবহৃত হয়।
জীবাশ্ম জ্বালানি (Fossil Fuel) কাকে বলে? এটি কীভাবে সৃষ্টি হয়?
জীবাশ্ম জ্বালানি বহুবছর আগে প্রবল ভূ-আলোড়নের ফলে উদ্ভিদ ও জীবজন্তু মাটির নীচে চাপা পড়ে ভূগর্ভস্থ তাপ ও চাপের ফলে জীবাশ্মে পরিণত হয়। ওই জীবাশ্ম থেকে উদ্ভূত জ্বালানিকে জীবাশ্ম জ্বালানি বলে।
উদাহরণ – কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস।
সৃষ্টির প্রক্রিয়া – কার্বোনিফেরাস যুগে ভূ-আলোড়নে পৃথিবীর বনভূমি মাটির নীচে চাপা পড়ে যায়। ভূগর্ভের তাপ ও চাপের ফলে ওই চাপা পড়া গাছপালায় সঞ্চিত কার্বন বহু বছর ধরে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটিয়ে কয়লায় রূপান্তরিত হয়। আবার, জৈব ও অজৈব পদ্ধতিতে (যেখানে জলের উপস্থিতি ছিল) বিয়োজন ও রাসায়নিক বিবর্তনের মাধ্যমে খনিজ তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাস সৃষ্টি হয়েছে।
ভারতে আকরিক লোহার সঞ্চয় সম্পর্কে লেখো।
সমগ্র পৃথিবীর মোট সঞ্চিত লৌহ আকরিকের প্রায় 20% ভারতে সঞ্চিত রয়েছে, যার আনুমানিক পরিমাণ প্রায় 1200 কোটি টন। ভারতে সঞ্চিত মোট লৌহ আকরিকের প্রায় 75% -ই হল হেমাটাইট জাতীয়। ভারতের ছটি রাজ্য ঝাড়খণ্ড (25.7%), ওড়িশা (21.6%), কর্নাটক (20.7%), মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড় (18.5%) এবং গোয়া (10.5%) -তেই সঞ্চিত লোহার 97% রয়েছে।
ভারতের আকরিক লোহা উৎপাদন একটি ছকের মাধ্যমে দেখাও।
1950 সালের পর থেকে ভারতে আকরিক লোহার উত্তোলন ক্রমশ বেড়েই চলেছে। বর্তমানে কয়লা উত্তোলনে ভারতের স্থান পৃথিবীতে চতুর্থ।
ভারতে আকরিক লোহার উৎপাদন (1950-2012) –
সাল | উৎপাদন (কোটি মেট্রিক টন) |
1950 | 0.3 |
1960 | 1.1 |
1970 | 3.3 |
1980 | 4.2 |
1990 | 5.4 |
2000 | 8.1 |
2012 | 24.5 |
ভারতে বিভিন্ন রাজ্যভিত্তিক আকরিক লোহা উত্তোলন (2011-2012) –
সাল | ওড়িশা | গোয়া | ছত্তিশগড় | ঝাড়খণ্ড | কর্নাটক |
উত্তোলন | 0.90 | 3.33 | 3.04 | 1.89 | 1.31 |
ভারতে কয়লার সঞ্চয় সম্পর্কে লেখো।
জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী ভারতে মোট সঞ্চিত কয়লার পরিমাণ প্রায় 2140 কোটি টন। ভারতে সঞ্চিত কোক কয়লার (Coaking Coal) পরিমাণ মাত্র 300 কোটি টন। ভারতে সঞ্চিত মোট কয়লার 90% -ই পাওয়া যায় ঝাড়খণ্ড, ওড়িশা, ছত্তিশগড়, মধ্যপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং বিহার রাজ্যে। ভারতের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কয়লা খনিটি হল ঝরিয়া (ঝাড়খণ্ড) এবং রানিগঞ্জ (পশ্চিমবঙ্গ)।
ভারতে সঞ্চিত লিগনাইট জাতীয় কয়লার পরিমাণ 300 কোটি টন, যার 90% -এর বেশি সঞ্চিত আছে তামিলনাড়ুতে। বাকি অংশ সঞ্চিত আছে গুজরাট, রাজস্থান, জম্মু ও কাশ্মীর, কেরালা এবং পশ্চিমবঙ্গে। ভারতে টার্শিয়ারি যুগের কয়লা সঞ্চিত আছে প্রায় 10 কোটি টন।
ভারতে খনিজ তেলের সঞ্চয় সম্পর্কে লেখো।
ভারতের মোট ক্ষেত্রমানের 40% -ই পাল লিক শিলা দ্বারা গঠিত যার মধ্যে খনিজ তৈল সঞ্চিত থাকে। এই পাললিক শিলাস্তর উত্তরের গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র উপত্যকা, উপকূলভাগসহ মহীসোপান অঞ্চল, গুজরাট সমভূমি, থর মরুভূমি এবং আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের চারপাশে অবস্থিত।
সাম্প্রতিক কালের আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী ভারতে সঞ্চিত মোট ক্রুড অয়েল বা অপরিশোধিত খনিজ তেলের পরিমাণ প্রায় 500 কোটি টন যা স্থলভাগ ও মহীসোপান অঞ্চলে সঞ্চিত রয়েছে। ভারতে প্রধান তিনটি খনিজ তেল সঞ্চয়ের স্থানগুলি হল –
- হিমালয় পর্বতের পাদদেশে সমান্তরালভাবে জম্মু-কাশ্মীর থেকে অসম পর্যন্ত বিস্তৃত তরাই অঞ্চল।
- গঙ্গা, শতদ্রু, ব্রহ্মপুত্র, মহানদী, গোদাবরী, কৃষ্ণা ও কাবেরী নদী অববাহিকা অঞ্চল।
- পশ্চিম উপকূল, কাম্বে উপসাগর সংলগ্ন মহীসোপান অঞ্চল এবং আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগরের দ্বীপ সংলগ্ন স্থান।
কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং ইউরেনিয়াম -এর তুলনায় কার শক্তি বেশি।
সমীক্ষা থেকে জানা যায়, কয়লা, খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস এবং ইউরেনিয়াম -এর একত্রিত পরিমাণ -এর তুলনায় ভূ-তাপশক্তির পরিমাণ অনেক বেশি।
রাজ্যভিত্তিক কয়লার বণ্টন একটি ছকের মাধ্যমে দেখাও।
রাজ্যভিত্তিক কয়লার বণ্টন –
রাজ্য | মোট কয়লা সঞ্চয় (মিলিয়ন মেট্রিক টন -এ) | কয়লাক্ষেত্রের ধরন |
ঝাড়খণ্ড | 80,356.20 | গন্ডোয়ানা |
ওড়িশা | 71,447.41 | গন্ডোয়ানা |
ছত্তিশগড় | 50,846.15 | গন্ডোয়ানা |
পশ্চিমবঙ্গ | 30,615.72 | গন্ডোয়ানা |
মধ্যপ্রদেশ | 24,376.26 | গন্ডোয়ানা |
তেলেঙ্গানা | 22,154.86 | গন্ডোয়ানা |
মহারাষ্ট্র | 10,882.09 | গন্ডোয়ানা |
উত্তরপ্রদেশ | 1061.80 | গন্ডোয়ানা |
মেঘালয় | 576.48 | টার্শিয়ারি |
আসাম | 510.52 | টার্শিয়ারি |
নাগাল্যান্ড | 315.41 | টার্শিয়ারি |
বিহার | 160.00 | গন্ডোয়ানা |
সিকিম | 101.23 | গন্ডোয়ানা |
অরুণাচলপ্রদেশ | 90.23 | টার্শিয়ারি |
অন্যান্য | 2.79 | গন্ডোয়ানা |
সূত্র – Inventory of Coal Resources of India – Ministry of Coal.
খনিজ তেল সংরক্ষণের জন্য কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা প্রয়োজন?
খনিজ তেল একটি অপুনর্ভব সম্পদ। বর্তমানে এর ব্যবহার বৃদ্ধির ফলে প্রকৃতি থেকে এটি দ্রুত নিঃশেষিত হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বাড়ছে। তাই খনিজ তেল সংরক্ষণ করা দরকার। দুভাবে এটি করা যায়। যথা –
খনিজ তেলের অপচয় রোধ ও যথাযথ ব্যবহার –
- যেসব ক্ষেত্রে খনিজ তেল ছাড়া অন্য সম্পদ ব্যবহার করা যাবে না শুধুমাত্র সেখানেই এর ব্যবহার করা উচিত।
- তৈল উত্তোলন ও তার শোধন যথাযথভাবে করতে হবে।
- তেল সাশ্রয়কারী উন্নত যানবাহন ব্যবহার করতে হবে।
- জাহাজ বা ট্যাঙ্কার থেকে যাতে তেল নষ্ট না হয়, সেদিকে নজর দিতে হবে।
- কারখানায় জ্বালানি সাশ্রয়কারী যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হবে।
- রেল ইঞ্জিন চালাতে, তাপবিদ্যুৎ উৎপাদনে ডিজেলের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।
- ট্রাফিক সিগন্যালে গাড়ি 15 সেকেন্ডের বেশি আটকে থাকলে গাড়ির ইঞ্জিন বন্ধ রাখতে হবে।
বিকল্প দ্রব্যের ব্যবহার –
- অপ্রচলিত শক্তির (বায়ুশক্তি, জলপ্রবাহ শক্তি, সৌরশক্তি, বায়োগ্যাস) ব্যবহার বাড়াতে হবে।
- পেট্রোল ও ডিজেলের পরিবর্তে LPG (Liquified Petro leum Gas) ও CNG (Compressed Natural Gas) চালিত যানবাহন ব্যবহার করতে হবে।
বর্তমানে কয়লার গুরুত্ব হ্রাস পাচ্ছে কেন?
বর্তমানে নানা কারণে কয়লার গুরুত্ব হ্রাস পাচ্ছে। যেমন –
- অপেক্ষাকৃত কম তাপ উৎপাদন ক্ষমতা – পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাসের তুলনায় কয়লার তাপ উৎপাদন ক্ষমতা অনেক কম। তাই বর্তমানে এর ব্যবহার হ্রাস পেয়েছে।
- পরিবহণে অসুবিধা – কঠিন পদার্থ কয়লার পরিবহণ ব্যয় অনেক বেশি। অন্যদিকে পাইপলাইনের মাধ্যমে স্বল্প ব্যয়ে খনিজ তেল, প্রাকৃতিক গ্যাস পরিবহণ করা যায়।
- শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণে অসুবিধা – শিল্পে কয়লা ব্যবহারের পর ওজনে হ্রাস পায় ও বর্জ্যপদার্থ বেশি থাকে। ফলে শিল্পের স্থানান্তর ঘটাতে গেলে কয়লার ব্যবহার খরচ বাড়বে। তাই এর ব্যবহার হ্রাস পাচ্ছে শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণের ক্ষেত্রে।
- অধিক উৎপাদন ব্যয় – কয়লার উৎপাদন ব্যয় দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার উপর কয়লা উত্তোলনের পর ফাঁকা জমি, খাদ ভরাট করার ব্যয়ও বৃদ্ধি পাচ্ছে।
- দূষণ সৃষ্টিকারী – কয়লা থেকে ধুলো, ছাই, বস্তু কণা, কার্বনজাতীয় গ্যাস, সালফার জাতীয় গ্যাস বাতাসে মিশে বায়ুদূষণ ঘটায়। কয়লার ছাই বায়ু, ভূমি, জলদূষণ ঘটায়। তাই বর্তমানে এর ব্যবহার কমছে।
- বিকল্প শক্তির ব্যবহার – অপুনর্ভব সম্পদ কয়লার পরিমাণ প্রকৃতিতে কমে আসছে তাই এর বিকল্প অচিরাচরিত শক্তির ব্যবহারের ওপর মানুষের আগ্রহ বাড়ছে।
খনিজ তেলের উপজাত দ্রব্যগুলি কী কী?
অথবা, খনিজ তেলের উপজাত দ্রব্যগুলির নাম লেখো এবং এগুলি কী কাজে ব্যবহৃত হয় তা আলোচনা করো।
খনিজ তেলের উপজাত দ্রব্যগুলি হল –
- পিচ বা অ্যাসফল্ট
- ভেসলিন
- ন্যাপথা
- প্যারাফিন
- মোম
- মিথেন
- কার্বন ব্ল্যাক
- ইথিলিন
- প্রোপাইলিন
- প্রোপেইন
- বিটুমেন
খনিজ তেলের বিভিন্ন উপজাত দ্রব্যগুলি মানুষ বিভিন্ন কাজে লাগায়। যেমন –
- প্যারাফিন – মোম থেকে সৃষ্ট প্যারাফিন মোমবাতি তৈরি ও পালিশের কাজে ব্যবহৃত হয়।
- অ্যাসফল্ট – বিটুমেন অ্যাসফল্ট রাস্তাঘাট তৈরির ক্ষেত্রে প্রয়োজন।
- বিটুমেন – থেকে বিভিন্ন ধরনের সুগন্ধি দ্রব্য, ভেসলিন, ক্রিম, কীটনাশক ঔষুধ, প্লাস্টিক, ফোম, পলিমার, রাসায়নিক সার, কৃত্রিম তন্তু, ডিটারজেন্ট, সাবান, রং, কৃত্রিম রবার, পি ভি সি ইত্যাদি বিভিন্ন দ্রব্য তৈরি হয়।
পুল কাকে বলে?
পাললিক শিলাস্তরে ঊর্ধ্বভাঁজের উপরিস্তরে খনিজ তেল থাকে আর নিম্নস্তরে জলকাদাযুক্ত পলির মিশ্রণ থাকে। ঊর্ধ্বাংশে যেখানে খনিজ তেলের অবস্থান থাকে সেই স্থানকে পুল বলা হয়।
ভারতের উল্লেখযোগ্য তৈল শোধনাগারগুলির নাম লেখো।
অঞ্চল | তৈল শোধনাগার |
---|---|
পূর্বাঞ্চল | পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া অসমের ডিগবয়, নুনমাটি বিহারের বারাউনি ওড়িশার দৈতারি প্রভৃতি |
পশ্চিমাঞ্চল | মহারাষ্ট্রের ট্রম্বে গুজরাটের জামনগর (ভারতের বৃহত্তম), কয়ালি পাঞ্জাবের ভাতিন্দা প্রভৃতি |
উত্তরাঞ্চল | উত্তরপ্রদেশের মথুরা হরিয়ানার পানিপথ প্রভৃতি |
দক্ষিণাঞ্চল | অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম তামিলনাড়ুর মানালি কর্ণাটকের বেঙ্গালুরু কেরলের কোচি প্রভৃতি |
বিশ্বব্যাপী খনিজ তেলের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে কেন?
পৃথিবীতে খনিজ তেলের চাহিদা দ্রুত বেড়ে চলেছে। অপরদিকে এই সম্পদ আর বেশি দিন সহজপ্রাপ্য থাকবে না। পৃথিবীতে উন্নত এবং উন্নয়নশীল দেশগুলির খনিজ তেলের চাহিদা সব থেকে বেশি। অন্যদিকে এই দেশগুলিতে খনিজ তেলের সঞ্চয় খুবই কম (যেমন – আমেরিকা, এশিয়ার ভারত, চিন, কোরিয়া, জাপান এবং ইউরোপের প্রায় সকল দেশ)। অপরদিকে খনিজ তেল উত্তোলনকারী দেশগুলির অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে উন্নত দেশগুলির সঙ্গে এদের প্রায়ই বিবাদ ঘটে।
খনিজ তেলের উৎপত্তি কীভাবে ঘটেছে?
খনিজ তেলের উৎপত্তি – খনিজ তেল বা পেট্রোলিয়াম একপ্রকার জীবাশ্ম জ্বালানি। ‘Petroleum’ দুটি ল্যাটিন শব্দ ‘Petra’ ও ‘Olium’ যুক্ত হয়ে সৃষ্টি হয়েছে। ‘Petra’ শব্দের অর্থ ‘শিলা’ এবং (শিলা) শব্দের ‘তেল’ অর্থ ‘তেল’ (Oil) অর্থাৎ শিলার মধ্যে যে তেল পাওয়া যায় তাকে পেট্রোলিয়াম বা শিলা তেল বলে।

উৎপত্তি পদ্ধতি – খনিজ তেলের উৎপত্তিকে ভূবিজ্ঞানীরা দুটি পদ্ধতিতে ভাগ করেছেন, যথা –
জৈব পদ্ধতি – টার্শিয়ারি যুগে অসংখ্য অতি সূক্ষ্ম সামুদ্রিক ব্যাকটেরিয়া, উদ্ভিদ ও প্রাণীকোশ (ফোরামিনিফেরা), মৃত জীবদেহে সামুদ্রিক অবক্ষেপের সঙ্গে অগভীর সমুদ্র, নদী মোহানা, প্রাচীন জলাভূমির তলদেশে পাললিক শিলাস্তরে চাপা পড়ে। চাপা পড়া জীবদেহকে অবায়ুজীবী ব্যাকটেরিয়া বিয়োজিত করে অক্সিজেন (O₂) এবং নাইট্রোজেন (N₂) -কে অপসারিত করে খনিজ তেল গঠন করে।
অজৈব পদ্ধতি – রুশ বিজ্ঞানী শামনিনের মতে, পাললিক শিলাস্থিত কার্বাইড ও জলের রাসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে খনিজ। তেলের উৎপত্তি ঘটেছে।
Senece Oil কী?
Senece Oil – স্যামুলেল এম. কির 1848 সালে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়ার অ্যালেখনি নদী তীরবর্তী স্থানে। সর্বপ্রথম খনিজ তেলের সন্ধান পান। তিনি এই তেলকে Senece Oil নাম দেন।
ভারতের সম্ভাবনাময় তৈলখনি অঞ্চল কী?
ভারতে ONGC ও OIL যৌথভাবে খনিজ তেলের ভাণ্ডার আবিষ্কারের জন্য অনুসন্ধান চালাচ্ছে। এই সংস্থা দুটি ভারতের যে-সমস্ত অঞ্চলকে সম্ভাবনাময় তৈলক্ষেত্র রূপে চিহ্নিত করেছে সেগুলি হল –
- গোদাবরী, কৃষ্ণা, কাবেরী নদীর ব-দ্বীপ ও মহীসোপান অঞ্চল
- কাংড়া উপত্যকা
- রাজস্থান
- সৌরাষ্ট্র ও কচ্ছ উপদ্বীপ
- সুন্দরবন অঞ্চল
- আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের মহিসোপান অঞ্চল
- ত্রিপুরা ও অসম অঞ্চল
- গঙ্গা সমভূমি অঞ্চল প্রভৃতি।
সমুদ্রগর্ভের তৈলখনি বলতে কী বোঝায়? উদাহরণ দাও।
খনিজ তেলের উৎপত্তি সংক্রান্ত যে দুটি তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত তার মধ্যে জৈবতত্ত্বের গ্রহণযোগ্যতা সবচেয়ে বেশি। জৈবতত্ত্ব অনুযায়ী টার্শিয়ারি যুগে (7–10) কোটি বছর আগে অসংখ্য মৃত সামুদ্রিক ব্যাকটেরিয়া, ফোরামিনিফেরা মৃত জীবদেহ সমুদ্রের মহীসোপান এবং অগভীর সমুদ্রে সঞ্চিত হয়ে অভ্যন্তরীণ তাপ, চাপ ও রাসায়নিক বিক্রিয়ায় হাইড্রোজেন ও কার্বনের দ্রবণে পরিণত হয়ে খনিজ তেলের সৃষ্টি হয়। পৃথিবীর সর্বাধিক খনিজ তেলের সঞ্চয় মধ্য-প্রাচ্য বলয়ের অন্তর্গত পারস্য উপসাগরের তীরবর্তী অঞ্চলের দেশসমূহ যেমন – সৌদি আরব, ইরান, ইরাক, কুয়েত, কাতার, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী (U.A.E.), ওমান, বাহরিন ইত্যাদি দেশে দেখা যায়। এখানে পৃথিবীর মোট খনিজ তেল সঞ্চয়ের 55-58 শতাংশ সঞ্চিত আছে। এছাড়াও আমেরিকান বলয়ের অন্তর্গত আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের ও মেক্সিকোর উপসাগরীয় অঞ্চল খনিজ তেল উত্তোলন ও সঞ্চয়ে অগ্রগণ্য। একইভাবে ভারতের আরবসাগর, কাম্বে উপসাগর এবং বঙ্গোপসাগরের করমণ্ডল উপকূলেও প্রচুর খনিজ তেলের সঞ্চয় লক্ষ করা যায়। তাই পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে সাগর, উপসাগরের অগভীর সমুদ্রে অথবা মহীসোপান অঞ্চলে যে সমস্ত তৈলখনি আবিষ্কৃত হয়েছে, সেগুলিকেই সমুদ্রগর্ভের তৈলখনি বলে। উদাহরণ হিসেবে পারস্য উপসাগরের অন্তর্গত ‘সাফানিয়া’ সৌদি আরব তথা পৃথিবীর বৃহত্তম তৈলক্ষেত্র। এছাড়াও ‘মনিফা’ ও ‘আবুশাখা’ অপর দুটি উল্লেখযোগ্য সমুদ্রগর্ভের তৈলখনি। অপরদিকে আরব সাগরের তলদেশে অবস্থিত মুম্বাই শহর থেকে 176 কিমি দূরে অবস্থিত ‘বোম্বে-হাই’ ভারতের বৃহত্তম তৈলক্ষেত্র যার আয়তন প্রায় 2000 বর্গ কিমি। এখানে ‘সাগর সম্রাট’ ও ‘সাগর বিকাশ’ নামে দুটি ভাসমান তৈল উত্তোলক প্লাটফর্মের সাহায্যে তৈল উত্তোলন করা হয়। এখান থেকেই ভারতের মোট খনিজ তেলের প্রায় 60% উত্তোলন করা হয়। এছাড়াও খাম্বাত উপসাগরের ‘আলিয়াবেত’ ও বোম্বে-হাই -এর দক্ষিণ-পশ্চিমে ‘বাসিন’ অঞ্চলেও প্রচুর খনিজ তেল পাওয়া যায়।
লোহাকে আধুনিক সভ্যতার শিল্প সহায়ক বলা হয় কেন?
আধুনিক সভ্যতার সকল শিল্পের মূল শিল্প বলা হয় লৌহ ইস্পাত শিল্পকে এবং এই শিল্পের অন্যতম প্রধান কাঁচামাল হল লৌহ আকরিক। বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর বহুমুখী ব্যবহার ও গুরুত্বের জন্য বর্তমান যুগকে লৌহ যুগও বলে। কারণ –
- লৌহ আকরিক লৌহ ইস্পাত শিল্পের প্রধান কাঁচামাল যা থেকে লৌহ পিন্ড ও ইস্পাত তৈরি হয়।
- কাঁচা লোহার সঙ্গে ম্যাঙ্গানিজ, নিকেল, ক্রোমিয়াম প্রভৃতি ধাতুর মিশ্রণ ঘটিয়ে সংকর ইস্পাত তৈরি করা হয়। যার সাহায্যে অন্যান্য সকল শিল্পের যন্ত্রাংশ তৈরি করা হয়।
- অতি সূক্ষ্ম পিন থেকে শুরু করে রেল ইঞ্জিন, বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি ও যন্ত্রাংশ, বিভিন্ন ধরনের যানবাহন, গৃহ-নির্মাণের রড, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি সব কিছুই লোহা এবং ইস্পাতের সাহায্যে করা হয়।
- ভারী ও বৃহদায়তন শিল্প কলকারখানা গড়ে তুলতে লৌহ-ইস্পাত ব্যবহার করা হয়।
- রং ও বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক দ্রব্য প্রস্তুতিতে লোহা ব্যবহার করা হয়। এই সমস্ত কারণে আধুনিক শিল্পযুগে এর অবদান অনস্বীকার্য। লোহা ছাড়া কোনো শিল্প স্থাপন করা সম্ভব নয়, তাই লোহাকে আধুনিক শিল্প সভ্যতার সহায়ক বলা হয়।
ভারতের পশ্চিমাঞ্চলে খনিজ তৈলের বন্টন উল্লেখ করো।
তৈলক্ষেত্র –
- গুজরাটের আঙ্কেলেশ্বর, খাম্বাত, সানন্দ, আমেদাবাদ, মহেসানা, ধোলকা, লুনেজ প্রভৃতি।
- রাজস্থানের মঙ্গলা, ভাগ্যম, রাগেশ্বরী।
বিশেষত্ব –
- গুজরাট খনিজ তেল উত্তোলনে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে।
- আঙ্কেলেশ্বর ভারতের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈলক্ষেত্র।
আমরা আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের সপ্তম অধ্যায় ‘ভারতের সম্পদ (খনিজ সম্পদ)’ এর সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য বা চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি নবম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।