এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।
আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলের ষষ্ঠ অধ্যায় ‘দুর্যোগ ও বিপর্যয়’ এর পার্থক্যধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য ও প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ।
দুর্যোগ (Hazard) ও বিপর্যয় (Disaster) -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
বিষয়
দুর্যোগ (Hazard)
বিপর্যয় (Disaster)
অর্থ
‘Hazard’ শব্দটি প্রাচীন আরবি শব্দ ‘az-zhar’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘Chance’ বা ‘Luck’। অর্থাৎ, ‘দৈবঘটনা’ বা ‘অদৃষ্ট’। সুতরাং, প্রাচীন মতে দুর্যোগ হল দৈব ঘটনা বা অদৃষ্ট।
‘Disaster’ শব্দটি ফরাসি শব্দ ‘Desastre’ থেকে এসেছে।, যেখানে, ‘Des’ -এর অর্থ ‘bad’ বা evil (মন্দ বা শয়তান) এবং ‘astre’ -এর অর্থ ‘star’ (তারা)। অর্থাৎ, বিপর্যয়ের অর্থ হল ‘শয়তানের তারা’ বা ‘মন্দ তারা’।
সংজ্ঞা
প্রাকৃতিক ও মানবিক কারণে সংঘটিত যে-সকল ঘটনা মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বিঘ্ন ঘটায় ও পরিবেশের ক্ষতি করে, তাকে দুর্যোগ বলে।
প্রাকৃতিক ও মানবিক কারণে সংঘটিত যে-সকল দুর্যোগ ব্যাপক হারে জীবন ও সম্পত্তিহানি ঘটায়, তাকে বিপর্যয় বলে।
কারণ ও ফল
বিপর্যয়ের পূর্বে দুর্যোগ ঘটে। অর্থাৎ, দুর্যোগ হল বিপর্যয়ের কারণ।
দুর্যোগের পথ ধরে বিপর্যয় আসে। অর্থাৎ, দুর্যোগের ফলাফল হল বিপর্যয়।
আবশ্যিকতা
সব দুর্যোগ বিপর্যয়ে পরিণত হয় না। যেমন – সমুদ্রের মাঝে ঘূর্ণিঝড়।
বিপর্যয় ঘটার পূর্বে দুর্যোগ ঘটা আবশ্যিক। যেমন – সমুদ্রের মাঝের ঘূর্ণিঝড় উপকূলে আছড়ে পড়ে ব্যাপক জীবন ও সম্পত্তিহানি করলে তা বিপর্যয়ে পরিণত হয়।
জনজীবনে প্রভাব
দুর্যোগের ফলে জনজীবনে সাময়িক প্রতিকূল অবস্থার সৃষ্টি হয়।
বিপর্যয় জনজীবনে দীর্ঘমেয়াদি প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
ক্ষয়ক্ষতি
দুর্যোগের ফলে ক্ষয়ক্ষতি ঘটে। তবে তা সামান্য পরিমাণে।
বিপর্যয়ের ফলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ব্যাপক হারে ঘটে।
ব্যাপকতা
দুর্যোগ ক্ষুদ্র স্কেলে, অল্প অঞ্চল জুড়ে সংঘটিত হয়।
বিপর্যয় বৃহৎ স্কেলে অর্থাৎ, ব্যাপক হারে বিশাল অঞ্চল জুড়ে সংঘটিত হয়।
উদাহরণ
বন্যা, খরা প্রভৃতি হল দুর্যোগ।
বন্যা বা খরার ফলে কৃষিজ ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি, মানুষের খাদ্যাভাব প্রভৃতি হল বিপর্যয়।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ (Natural Hazard) ও মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ (Man-made Hazard) -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
বিষয়
প্রাকৃতিক দুর্যোগ (Natural Hazard)
মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ (Man-made Hazard)
সংজ্ঞা
প্রাকৃতিক কারণে পরিবেশে যে-সব দুর্যোগ সৃষ্টি হয়, তাকে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলে।
মানুষের অবিবেচক কার্যাবলির দ্বারা পরিবেশে যে-সব দুর্যোগ সৃষ্টি হয়, তাকে মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ বলে।
শ্রেণিবিভাগ
প্রাকৃতিক দুর্যোগকে মূলত দুভাগে ভাগ করা হয়। যথা – ভূগাঠনিক ও ভূমিরূপগত দুর্যোগ (অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিধস, ভূমিকম্প) এবং জলবায়ুগত দুর্যোগ (খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়)।
মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগকে মূলত তিনভাগে ভাগ করা হয়। যথা – তেজস্ক্রিয় দুর্যোগ (পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ), রাসায়নিক দুর্যোগ (বিষাক্ত গ্যাস নির্গমন) এবং জৈব দুর্যোগ (জনসংখ্যা বিস্ফোরণ)।
সৃষ্টির প্রকৃতি
প্রাকৃতিক দুর্যোগের সৃষ্টির প্রকৃতি আকস্মিক অর্থাৎ, হঠাৎ করে সৃষ্টি হয়।
মানুষের অবিবেচক কার্যাবলির প্রভাব দীর্ঘদিন ধরে পুঞ্জীভূত হতে হতে একদিন তা ব্যাপক আকার ধারণ করে মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ সৃষ্টি করে।
সৃষ্টির স্থান
প্রাকৃতিক দুর্যোগ পৃথিবীর মধ্যে (অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিকম্প) এবং পৃথিবীর বাইরে (উল্কাপাত) উভয় স্থানেই সৃষ্টি হতে পারে।
মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ কেবলমাত্র পৃথিবীর মধ্যেই সৃষ্টি হয়।
প্রভাব
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ভূভাগ বা বায়ুমণ্ডল যেখানেই ঘটুক না কেন, এর প্রভাব পড়ে ভূপৃষ্ঠে।
মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ ভূপৃষ্ঠে সৃষ্টি হয় এবং এর প্রভাব ভূপৃষ্ঠেই দেখা যায়।
উদাহরণ
ভূমিকম্প, অগ্ন্যুৎপাত, ঘূর্ণিঝড়, খরা, বন্যা, ভূমিধস ইত্যাদি হল প্রাকৃতিক দুর্যোগের উদাহরণ।
জনসংখ্যা বিস্ফোরণ, যুদ্ধ, পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণ ইত্যাদি হল মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ।
বন্যা (Flood) ও খরা (Drought) -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
বিষয়
বন্যা (Flood)
খরা (Drought)
সংজ্ঞা
প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে স্থলভাগের বিস্তীর্ণ অঞ্চল জলমগ্ন হয়ে পড়লে, তাকে বন্যা বলে।
কোনো অঞ্চলে স্বাভাবিকের তুলনায় 25% -এর কম বৃষ্টিপাত হলে উদ্ভূত শুষ্ক অবস্থাকে খরা বলে।
সংঘটন অঞ্চল
সাধারণত নদী তীরবর্তী ও উপকূলবর্তী অঞ্চলে বন্যার সৃষ্টি হতে দেখা যায়।
যে-কোনো অঞ্চলে খরা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
কারণ
প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট উভয় কারণেই ঘটে।
মূলত প্রাকৃতিক কারণে ঘটে।
প্রভাব
জল দূষণ ঘটে; পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ক্ষতি হয়; জলে ডুবে, জলে ভেসে গিয়ে, ঘরবাড়ি, গাছপালা চাপা পড়ে, জলবাহিত রোগে আক্রান্ত হয়ে বহু মানুষের মৃত্যু ঘটে।
জলের সংকট দেখা দেয়; পরিবহণ ও যোগাযোগ ব্যবস্থার ওপর কোনো প্রভাব পড়ে না; তাপপ্রবাহে, ক্ষুধা, অপুষ্টিজনিত কারণে বহু মানুষের মৃত্যু ঘটে।
স্থায়িত্ব
বন্যার স্থায়িত্ব তুলনামূলকভাবে কম।
খরার স্থায়িত্ব তুলনামূলকভাবে বেশি।
ধস (Land slide) ও হিমানী সম্প্রপাত (Avalanche) -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
বিষয়
ধস (Land slide)
হিমানী সম্প্রপাত (Avalanche)
সংজ্ঞা
পাহাড় বা পার্বত্য অঞ্চলে খাড়া ঢাল বরাবর অভিকর্ষজ টানে শিলাস্তূপের আকস্মিক নিম্নগমনকে ধস বলে।
সুউচ্চ পর্বতের খাড়া ঢাল বরাবর বিপুল পরিমাণ হিমরাশি মাধ্যাকর্ষণের টানে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে নেমে এলে তাকে হিমানী সম্প্রপাত বলে।
সংঘটন অঞ্চল
সাধারণত পাহাড় বা পার্বত্য খাড়া ঢাল। এছাড়া অনেক সময় চুনাপাথর ও খনি অঞ্চলেও ধসের ঘটনা ঘটতে দেখা যায়।
তুষারাবৃত পার্বত্য অঞ্চলে ঘটে থাকে।
কারণ
অতিবর্ষণ; দুর্বল মাটি ও শিলাস্খলন; ঢালে অবৈজ্ঞানিক প্রথায় নির্মাণ কার্য; বৃক্ষচ্ছেদন।
অতিরিক্ত তুষারপাত; তাপমাত্রা বৃদ্ধি; প্রবল বায়ুপ্রবাহ।
দীর্ঘদিন খরার কবলে পড়ে থাকা উদ্ভিদের শুকনো ডালপালায় ঘষা লাগা; বিদ্যুতের ঝলকানি; অগ্ন্যুৎপাত; অরণ্য সংলগ্ন এলাকায় বসবাসকারী মানুষের অসতর্কতায় অগ্নিসংযোগ।
প্রভাব
জীবনহানি ও সম্পত্তির ক্ষতি হয়; বায়ুর উষ্ণতা বৃদ্ধি পায়; আগ্নেয়গিরি সংলগ্ন অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়।
অরণ্য পুড়ে ধ্বংস হয়; বনজ বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি হয়; বায়ুদূষণ ঘটে।
ভূবিপর্যয় (Diastrophism) ও ভূমিকম্প (Earthquake) -এর মধ্যে পার্থক্য লেখো।
বিষয়
ভূবিপর্যয় (Diastrophism)
ভূমিকম্প (Earthquake)
সংজ্ঞা
ভূ-অভ্যন্তরে সর্বদা ঘটে চলা বিভিন্ন ধরনের ভৌত ও রাসায়নিক প্রক্রিয়ার ফলে উদ্ভুত শক্তি বা বলের প্রভাবে সৃষ্ট আলোড়নকে ভূবিপর্যয় বলে।
ভূ-আলোড়নের ফলে ভূপৃষ্ঠের কোনো অংশের হঠাৎ কেঁপে ওঠাকে ভূমিকম্প বলে।
অংশ
মহাদেশ, পর্বতের উৎপত্তি, অগ্ন্যুৎপাত, ভূমিকম্প, পাতের চলন, শিলার রূপান্তর প্রভৃতি ঘটনার সম্মিলিত রূপ হল ভূবিপর্যয়।
ভূবিপর্যয়ের একটি অংশ হল ভূমিকম্প।
ব্যাপকতা
ভূবিপর্যয়ের প্রভাব ব্যাপক হারে বিশাল অঞ্চল জুড়ে সংঘটিত হয়।
ভূমিকম্পের প্রভাব তুলনামূলকভাবে অল্প অঞ্চল জুড়ে সংঘটিত হয়।
আমাদের আর্টিকেলে নবম শ্রেণীর ভূগোলেরষষ্ঠ অধ্যায় ‘দুর্যোগ ও বিপর্যয়’ এর পার্থক্যধর্মী প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো নবম শ্রেণীর ভূগোল পরীক্ষার জন্য বা চাকরির পরীক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এই প্রশ্নগুলি নবম শ্রেণীর পরীক্ষা বা চাকরির পরীক্ষায় প্রায় দেখা যায়। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। আপনাদের কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা হলে, আপনারা আমাদের সাথে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমরা উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। তাছাড়া নিচে আমাদের এই পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সাথে শেয়ার করুন, যাদের এটি প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।