আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলা ষষ্ঠ পাঠের দ্বিতীয় বিভাগ ‘অদল বদল’ – এর উপর কিছু সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলি প্রায়শই পরীক্ষায় আসতে দেখা যায়। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।
অদল বদল গল্পে হোলির পড়ন্ত বিকেলে কী ঘটনা ঘটেছিল তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।
- শুরুর কথা – পান্নালাল প্যাটেল রচিত ‘অদল বদল’ গল্পে হোলির পড়ন্ত বিকেলে দুই বন্ধু অমৃত আর ইসাব একই রকম জামা পরে ফুটপাথের শান-বাঁধানো রাস্তায় বসে ছেলেদের ধুলো ছোড়াছুড়ির খেলা দেখছিল।
- কুস্তির ডাক – ঠিক সেই সময়, তাদের দুজনের একই রকম পোশাক দেখে ছেলেদের দঙ্গল থেকে একটি ছেলে এসে অমৃতকে কুস্তি লড়তে বলল। অমৃত কুস্তি লড়তে চায়নি, কারণ সে নতুন জামা পরেছিল এবং এই জামা সে অনেক কষ্টে, অনেক জেদ করে বাড়ি থেকে আদায় করেছিল। তার মা তাকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন, যেন জামা নোংরা না করে।
- কুস্তি লড়াই – কিন্তু অমৃতের অনিচ্ছা সত্ত্বেও কালিয়া তাকে বাধ্য করে কুস্তি লড়তে, এবং লড়াইয়ের সময় তাকে মাটিতে ফেলে দেয়। এই ঘটনা দেখে ইসাব রেগে গিয়ে কালিয়ার সঙ্গে কুস্তি লড়ে এবং তাকে হারিয়ে দেয়। কুস্তি লড়তে গিয়ে ইসাবের নতুন জামা ছিঁড়ে যায়।
- অদল বদল নামকরণ – বাবার কাছে এই জামা ছেঁড়ার জন্য মার খেতে হবে ভেবে ইসাব যখন ভয় পায়, তখন অমৃত তাকে জামা অদল বদলের পরামর্শ দেয়। এই জামা অদল বদলের ঘটনার পর থেকে সারা গ্রামে তাদের ‘অদল বদল’ নামে পরিচিত হয়ে যায়।
অদল বদল গল্পটিতে অমৃত-ইসাবের মধ্যে যে ভালোবাসা ও প্রকৃত বন্ধুত্ব প্রকাশিত হয়েছে তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।
অমৃত ও ইসমতের ভালোবাসার গল্প – পান্নালাল প্যাটেল রচিত ‘অদল বদল’ গল্পটিতে অমৃত আর ইসমত বেশিরভাগ সময় একসঙ্গেই থাকত। তাদের বাড়িও ছিল মুখোমুখি। গল্পে দেখা যায়, অমৃতের অনিচ্ছা সত্ত্বেও কালিয়া তাকে কুস্তি লড়তে বাধ্য করে এবং তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়। এটি দেখে ইসমত রেগে গিয়ে কালিয়ার সঙ্গে কুস্তি লড়ে এবং তাকে হারিয়ে দেয়। কালিয়া যখন অমৃতকে আঘাত করে, ইসমত সেটা সহ্য করতে পারেনি। কিন্তু এই লড়াইয়ের ফলে ইসমতের নতুন জামা ছিঁড়ে যায়, আর তাতে সে ভীষণ ভয় পেয়ে যায়। সে ভাবে, জামা ছেঁড়ার জন্য বাবার কাছে মার খেতে হবে। এই সময় অমৃত ইসমতকে জামা অদলবদলের বুদ্ধি দেয়। ইসমত প্রথমে আপত্তি জানালেও, অমৃত তাকে বোঝায় যে, সে মার খেলেও তার মা তাকে বাঁচানোর জন্য আছে, কিন্তু ইসমতের কেবল বাবা আছেন। তাই বাবার হাতে মার খেলে তাকে বাঁচানোর কেউ থাকবে না। এইসব ঘটনা থেকেই বোঝা যায়, তারা দুজন একে অপরকে কতটা ভালোবাসত এবং তাদের বন্ধুত্ব কতটা গভীর ছিল।
ওরা ভয়ে কাঠ হয়ে গেল। – কারা কেন ভয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল? কীভাবে এই ভয় থেকে তাদের মুক্তি ঘটেছিল?
ভয় পাওয়ার কারণ – পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল-বদল’ গল্পে অমৃত আর ইসাব ভয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল। নতুন জামা পরে ঘর থেকে বেরোনো অমৃতকে কালিয়া কুস্তি লড়ার জন্য জোর করে খোলা মাঠে নিয়ে যায় এবং তাকে ছুঁড়ে মাটিতে ফেলে দেয়। ইসাব বন্ধুর এই অপমান সহ্য করতে না পেরে কালিয়ার হাত ধরে তার সাথে লড়ার জন্য আহ্বান জানায় এবং কালিয়াকে হারিয়েও দেয়। কিন্তু এসবের মধ্যেই ইসাবের নতুন জামার পকেটটা অনেকটা ছিঁড়ে যায়। নতুন জামা ছিঁড়ে যাওয়ায় ইসাবকে তার বাবার কাছে ভয়ানক মার খেতে হবে—এই কথা ভেবেই দুই বন্ধু তখন ভয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছিল।
ভয় থেকে মুক্তি – এই ভয় এবং ইসাবকে মার খাওয়া থেকে বাঁচাতে অমৃত নিজের জামাটা খুলে ইসাবকে পরতে দেয়, নিজে ইসাবেরটা পরে। এভাবে তারা তখনকার মতো দুশ্চিন্তা ও ভয় থেকে মুক্তি পেয়েছিল। বাড়ি ফেরার পরে অমৃতের মা ছেঁড়া জামা দেখে বিব্রত হলেও সেভাবে কিছু বলেননি, ছুঁচ-সুতো দিয়ে জামাটা রিফু করে দিয়েছিলেন। এতে দুজনের ভয় আরও কেটে গিয়েছিল। গল্পের শেষে যখন ইসাবের বাবা জামা বদলের কাহিনিটি অমৃতের মাকে জানান এবং অমৃতের কাজে ও বন্ধুত্বে খুশি হয়ে নিজের উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন, তখন যাবতীয় ভয় এক অনাবিল আনন্দে বদলে গিয়েছিল।
অদল বদল গল্পে হিন্দু-মুসলিম পারস্পরিক সম্প্রীতির যে পরিচয় পাওয়া যায় তা নিজের ভাষায় বর্ণনা করো।
অথবা, ‘অদল বদল’ গল্পের মাধ্যমে চিরন্তন সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা দেওয়া হয়েছে-আলোচনা করো।
- শুরুর কথা – পান্নালাল প্যাটেল রচিত ‘অদল বদল’ গল্পে আমরা অমৃত ও ইসাব—এই দুই বন্ধুর কথা জানতে পারি।
- সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি – এই দুই বন্ধুর প্রায় সব কিছুই ছিল একরকম। তবে তাদের ধর্ম ছিল আলাদা। অমৃত ছিল হিন্দু পরিবারের ছেলে, আর ইসাব মুসলিম পরিবারের। কিন্তু ধর্মের পার্থক্য তাদের বন্ধুত্বের মধ্যে কোনো বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। এমনকি তাদের পরিবারের মধ্যেও ছিল সুসম্পর্ক।
- পরিপূরক বন্ধুত্ব – অমৃত আর ইসাব বিপদের দিনে সবসময় একে অপরের পাশে দাঁড়াত। অমৃত যখন কালিয়ার দ্বারা জোরপূর্বক কুস্তি লড়তে বাধ্য হয় এবং কালিয়া তাকে ছুঁড়ে ফেলে দেয়, তখন ইসাব প্রতিবাদ করে।
- বন্ধুত্বের পরিচয় – বন্ধুর অপমানের শোধ নিতে ইসাব কালিয়াকে কুস্তি লড়ার আহ্বান জানায় এবং তাকে পরাজিত করে। এই লড়াইয়ে ইসাবের জামা ছিঁড়ে যায়, যা দেখে ইসাব ভয় পেয়ে যায়। তখন অমৃত নিজের নতুন জামাটি দিয়ে ইসাবকে তার বাবার মারের হাত থেকে রক্ষা করে।
- ইতিকথা – এই ঘটনাগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে তাদের ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব সমস্ত ধর্মীয় ভেদাভেদকে অতিক্রম করেছে। তাদের বন্ধুত্ব মানবিকতার একটি উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে চিরস্থায়ী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা বহন করে।
অদল বদল গল্পের নামকরণ কতদূর সার্থক হয়েছে তা বিচার করো।
যে-কোনো সাহিত্য রচনার মূলভাব বা বিষয় পাঠকের কাছে ফুটে ওঠে রচনার নামকরণের মাধ্যমে। নামকরণ প্রতিটি সাহিত্যকর্মের ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নামকরণ সাধারণত বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক, চরিত্রকেন্দ্রিক, ভাব অনুযায়ী, আবার কখনও-বা ব্যঞ্জনাধর্মী হয়ে থাকে। পান্নালাল প্যাটেলের লেখা ‘অদল বদল’ গল্পটির নামকরণ করা হয়েছে মূলত গল্পের বিষয়বস্তুকে কেন্দ্র করে। এই গল্পে আমরা দুই বন্ধুর কাহিনি পাই, যাদের সবকিছুই প্রায় একরকম ছিল। এমনকি তারা একই ধরনের জামাও পরত। একজনের বিপদে অন্যজন সবসময় এগিয়ে আসত। ইসাব আর অমৃত দুজনেই হোলি উপলক্ষে পেয়েছিল নতুন জামা, আর সেই জামা যাতে না ছেঁড়ে সে বিষয়ে দুজনেই সচেতন ছিল। কারণ তারা জানত, জামা ছিঁড়লে, আর সেটা বাড়ির লোকেরা জানতে পারলে তাদের কপালে দুর্ভোগ আছে।
হোলির দিন বিকেলে কালিয়া অমৃতকে কুস্তি লড়ার নাম করে মাটিতে ফেলে দেয়। সেই ঘটনা দেখে ইসাবের মেজাজ চড়ে যায়। সে অমৃতের হেনস্থার প্রতিশোধ নিতে কালিয়ার সঙ্গে কুস্তি লড়ে এবং তাকে হারিয়ে দেয়। কিন্তু কুস্তি লড়তে গিয়ে তার নতুন জামা ছিঁড়ে যায়। ইসাব জানত, জামা ছেঁড়ার কথা তার বাবা জানতে পারলে তাকে বাড়ি ফিরে নিশ্চিত মার খেতে হবে। অমৃত, ইসাবকে তার বাবার মারের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য নিজেদের জামা অদলবদল করার পরামর্শ দেয়। তাদের এই জামা অদলবদলের কাহিনি সারা গ্রামে ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি গ্রামপ্রধানও তাদের নাম ‘অদল’ এবং ‘বদল’ বলে ঘোষণা করেন। গ্রামবাসীদেরও তাদের সেই নামে ডাকতে বলেন। অমৃত ও ইসাবের এই জামা অদলবদল এবং তাদের নতুন নামকরণ ‘অদল’ আর ‘বদল’ — এইসব বিষয়কে কেন্দ্র করেই গল্পের কাহিনি আবর্তিত হয়েছে। তাই বলা যায়, গল্পের বিষয়বস্তুর অনুসরণে রচিত এই ‘অদল বদল’ নামকরণটি সার্থক হয়েছে।
অদল বদল গল্প অবলম্বনে ইসাবের বাবা হাসানের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।
- কথামুখ – পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল বদল’ গল্পে ইসাবের বাবা হাসান পাঠান একটি গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র। তিনি গল্পের প্রধান চরিত্রদের মধ্যে অন্যতম এবং মানবতার প্রতিনিধিত্বকারী একজন ব্যক্তি।
- দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই – হাসানের আর্থিক অবস্থা ভালো নয়। বাড়ির সদস্য বলতে তিনি ও তাঁর ছেলে ইসাব, এই দু’জন। কিন্তু ইসাবকে লেখাপড়া শেখাতে হিমশিম খেতে হয় হাসানকে। সাময়িক বিপদ-আপদে সুদে টাকা ধারও নিতে হয় তাঁকে। সামান্য জমির আয়ে কোনোমতে তাদের দিন চলে। ইসাবের জন্য হাসান মহাজনের কাছ থেকে টাকা ধার করে জামা কিনে দেন, যা তার আর্থিক অবস্থার সংকটের পরিচায়ক।
- পিতৃসত্তার বিকাশ – কুস্তির সময় ইসাবের জামা ছিঁড়ে যায়। সহপাঠী অমৃত ইসাবের ছেঁড়া জামাটি নিয়ে তাকে তার ভালো জামাটি দেয়, যাতে ইসাব বাবার হাতে মার খাওয়া থেকে রক্ষা পায়। এ কথা আড়াল থেকে শুনে হাসানের সংকীর্ণ ধর্মীয় চিন্তাধারার কালো মেঘ কেটে যায়। তার মনে হয়, অমৃত যেন তাঁরও ছেলে। মুসলমান হাসান এক মুহূর্তেই হয়ে ওঠেন শাশ্বত পিতা, যাঁর জন্য মনুষ্যত্বই একমাত্র ধর্ম।
- মানবতা – দেশকালের সীমা অতিক্রম করে যে মানবতা, গল্পে তার স্বীকৃতি দিয়েছেন হাসান। ধর্ম বা জামা অদলবদল নয়, বরং হৃদয়ের নিখাদ ভালোবাসার বিনিময়ে সমাজে মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটতে পারে। এই ভাবনাই গল্পের কেন্দ্রীয় বার্তা।
- ইতিকথা – এই চিরন্তন সত্যটি হাসান চরিত্রের মাধ্যমে গল্পে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তাঁর মধ্য দিয়ে গল্পটি মানবতার শ্রেষ্ঠত্বকে তুলে ধরে, যেখানে ধর্ম বা জাত নয়, বরং ভালোবাসা এবং মনুষ্যত্বই প্রধান।
অদল বদল গল্প অবলম্বনে অমৃতের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।
- কথামুখ – ‘অদল বদল’ গল্পে দেশ-কাল-ধর্মের সীমানা অতিক্রম করে বন্ধুত্বের এক অনবদ্য রূপ ফুটে উঠেছে। সেই চিরন্তন বন্ধুত্ব আসলে মানবতার প্রসার ঘটায়। আর সেখানে সর্বাধিক সক্রিয় চরিত্র হল অমৃত।
- অকৃত্রিম বন্ধুপ্রীতি – অমৃত দরিদ্র কৃষক পরিবারের ছেলে। ইসাব তার বন্ধু। একই স্কুলে, একই ক্লাসে পড়ে তারা। দুজনের জামার মাপ, কাপড়, রঙ — এসবই ছিল এক ধরনের। অন্তরেও তারা দুজন এক। এই অকৃত্রিম বন্ধুত্বের চূড়ান্ত প্রকাশ ঘটে যখন অমৃত তার ভালো জামাটি দিয়ে ইসাবের ছেঁড়া জামাটি নিজের গায়ে পরে নেয়।
- বাস্তব বুদ্ধি – অমৃত ইসাবকে বলে, “তোকে তোর বাবা পিটোবে। কিন্তু আমাকে বাঁচানোর জন্য তো আমার মা আছে।” অমৃতের এই উক্তি তার বুদ্ধিমত্তা এবং বাস্তব জ্ঞানের পরিচয় দেয়। পাশাপাশি মা-হারা ইসাবের প্রতি তার এই অতিরিক্ত ভালোবাসা পাঠককে মুগ্ধ করে।
- মানবতা – বন্ধুত্ব কখনও ধর্ম-বর্ণ-আর্থিক পরিস্থিতির বাধা মানে না, তার যথার্থ প্রমাণ অমৃত। ইসাবের প্রতি নিঃস্বার্থ ভালোবাসায় তা আরও উজ্জ্বল হয়েছে।
অমৃত বয়সে নিতান্তই ছোটো। তবুও তার আচার-আচরণ ও মানসিকতায় সহৃদয়তার প্রকাশ দেখা যায়। এভাবেই অমৃত এক অনবদ্য চরিত্র হয়ে উঠেছে।
অদল বদল গল্প অবলম্বনে ইসাবের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।
- কথামুখ – লেখক পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল বদল’ গল্পটি বন্ধুত্বের এক জীবন্ত উদাহরণ। অমৃত আর ইসাব — এই দুজনের আন্তরিক সম্পর্কের স্বরূপই হলো গল্পের মুখ্য বিষয়।
- পরিচয় – ইসাব দরিদ্র কৃষক পরিবারের ছেলে। তাদের আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। সাময়িক বিপদ-আপদে তার বাবা হাসানকে সুদে টাকা ধার নিতে হয়। তবে তার মা নেই। বাবা-ই তাদের সংসারের একমাত্র কর্তা। ইসাবকে ক্ষেতেও কাজ করতে হয়।
- অকৃত্রিম বন্ধুত্ব – অমৃতের সঙ্গে ইসাবের অকৃত্রিম বন্ধুত্ব। তাদের সব কিছুই একই রকমের। একই স্কুলে একই শ্রেণিতে পড়ে তারা। হোলির দিন কালিয়া নামের একটা ছেলে কুস্তি লড়ার সময় অমৃতকে ছুঁড়ে মাটিতে ফেলে দিলে ইসাব স্থির থাকতে পারেনি। সে কালিয়াকে ল্যাং মেরে মাটিতে ফেলে কালিয়ার ঔদ্ধত্য চূর্ণ করে দেয়।
- সহমর্মিতা – কালিয়ার সঙ্গে লড়াইয়ের সময় ইসাবের নতুন জামাটার পকেট এবং কিছুটা অংশ ছিঁড়ে গিয়েছিল। অমৃত তার ভালো জামাটা ইসাবকে পরে নিতে বললে, ইসাব স্বার্থপরের মতো তা করতে চায়নি। সে বলেছিল — “তোর কী হবে, তুই কী পরবি?” কোনোভাবেই ইসাব অমৃত থেকে আলাদা হতে চায়নি।
- ইতিকথা – বন্ধুত্বের যে নিষ্পাপ ও পবিত্র প্রকাশ এই গল্পে মানবতাকে ফুটিয়ে তুলেছে, তার একদিকে যেমন অমৃত, অন্যদিকে তেমনই রয়েছে ইসাবেরও উজ্জ্বল উপস্থিতি।
অদল বদল গল্প অবলম্বনে অমৃতের মায়ের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।
- কথামুখ – পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল বদল’ গল্পটি মূলত অমৃত-ইসাবের বন্ধুত্বের কাহিনি। এই গল্পের খুব স্বল্প অংশজুড়ে থাকলেও অমৃতের মায়ের চরিত্রটিও যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
- স্নেহময়ী – খুব সাধারণ পরিবারের গৃহবধূ অমৃতের মা। অমৃতের দুরন্তপনা তাঁকেই সামলাতে হয়। গল্পে আমরা দেখি, ইসাবের মতো নতুন জামা নেবে বলে অমৃত বায়না ধরে। নাছোড়বান্দা ছেলেকে বুঝিয়ে কাজ না হলেও, অমৃতের মা কিন্তু তার এই একগুঁয়ে স্বভাব দেখে রাগ করেননি। বরং, তিনি তাঁর স্বামীকে বুঝিয়ে ইসাবের মতো একটা নতুন জামা অমৃতকে কিনে দিতে রাজি করিয়েছেন। মায়ের স্নেহ ও ভালোবাসার প্রকাশ এখানে অত্যন্ত মূর্ত হয়ে উঠেছে।
- আদর্শময়ী – অমৃতের মা আদর্শ গৃহবধূ। সন্তানের দুরন্তপনায় যেমন তাঁকে বিচলিত হতে দেখা যায় না, তেমনই বাবার পিটুনির হাত থেকে অমৃতকে বাঁচানোর দায়িত্বও তিনিই নেন। ইসাবের ছেঁড়া জামাটা নিজের গায়ে পরে নিয়ে অমৃত বাড়ি ফেরার সাহস পেয়েছে কেবল তার মায়ের আশ্বাসেই।
- উদারমনা – অন্য ধর্মের হলেও তিনি কখনোই অমৃতকে ইসাবের সঙ্গে মিশতে বারণ করেননি। বরং, ইসাবের বাবাকে ‘হাসান ভাই’ সম্বোধন করে তিনি পারস্পরিক সামাজিক বন্ধনের একটি উদার মানসিকতার পরিচয় দিয়েছেন, যা গল্পের সামাজিক মেলবন্ধনের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরে।
- ইতিকথা – গল্পের শেষপর্যন্ত মাতৃত্বের এক আদর্শ মূর্তিতেই ভাস্বর হয়ে উঠেছেন অমৃতের মা। তাঁর স্নেহময়ী, আদর্শময়ী এবং উদার চরিত্রের মাধ্যমে তিনি শুধুমাত্র একজন মা হিসেবেই নয়, বরং একটি সমাজের অভ্যন্তরীণ বন্ধনের প্রতীক হিসেবেও প্রতিফলিত হয়েছেন।
ছোটোগল্প হিসেবে অদল বদল কতদূর সার্থক বিচার করো।
পান্নালাল প্যাটেলের ‘অদল বদল’ হল ধর্ম এবং জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে দুই কিশোরের নির্মল বন্ধুত্বের গল্প। আয়তনে ছোটো হওয়া যদি ছোটোগল্পের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হয়, তাহলে ‘অদল বদল’-এ সেই শর্ত অবশ্যই মানা হয়েছে। কাহিনির শুরু হয়েছে আকস্মিকতা দিয়ে — হোলির দিনের পড়ন্ত বিকেল। ছোটোগল্পের কাহিনিতে শাখাপ্রশাখার বিস্তার ঘটে না। একটি মাত্র ঘটনা তার আশ্রয় হয়। এই গল্পেও দুই বন্ধুর জামা বদল এবং তাদের বাড়ি ও চারপাশে তার প্রতিক্রিয়াই কাহিনির বিষয়। চরিত্রের সংখ্যাও স্বাভাবিকভাবেই খুব কম। এখানে প্রধান দুই চরিত্র অমৃত ও ইসাব ছাড়া, অমৃতের মা বাহালি এবং ইসাবের বাবা পাঠানকে পাওয়া যায়। ছেলের দল এবং কালিয়ার উপস্থিতিও অমৃত-ইসাবের বন্ধুত্বের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছে। তাই বলা যায়, প্রথাগতভাবে ‘অদল বদল’ তার ছোটোগল্পের আঙ্গিক বজায় রেখেছে।
অমৃতকে অপমানিত হতে দেখে ইসাব কুস্তি লড়ে, আবার কুস্তির মাঠে ইসাবের জামা ছিঁড়ে গেলে অমৃত নিজের নতুন জামাটা ইসাবকে দিয়ে দেয়। সব মিলিয়ে যে বন্ধুত্বের পরিবেশ তৈরি হয়, সেখানে ধর্ম নেই, আছে সহমর্মিতা আর ভালোবাসা। এভাবে বিষয়গত আবেদনেও ‘অদল বদল’ অসামান্য হয়ে উঠেছে। ছোটোগল্প হিসেবে এভাবেই ‘অদল বদল’ সার্থক হয়ে উঠেছে।
আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার ষষ্ঠ পাঠের দ্বিতীয় বিভাগ ‘অদল বদল’ নিয়ে কিছু সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষায় প্রায়ই দেখা যায়। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকে, তাহলে আপনি আমাকে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন। আমি উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করবো। এছাড়া, নিচে পোস্টটি আপনার প্রিয়জনের সঙ্গে শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাদের এই তথ্য প্রয়োজন হতে পারে। ধন্যবাদ।