আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার সপ্তম পাঠের তৃতীয় বিভাগ ‘নদীর বিদ্রোহ’ থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো প্রায়শই পরীক্ষায় আসতে পারে। আশা করি এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য সহায়ক হবে।
নদীর বিদ্রোহ গল্প অবলম্বনে নদীর প্রতি নদেরচাঁদের অকৃত্রিম ভালোবাসার পরিচয় দাও।
অথবা, নদীর বিদ্রোহ গল্পে নদেরচাঁদের নদীর প্রতি যে ভালোবাসা ও বন্ধুত্ব চিত্রিত হয়েছে তা আলোচনা করো।
- জীবনের সঙ্গে সম্পর্কিত – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পে স্টেশনমাস্টার নদেরচাঁদের জন্ম থেকেই নদী তার জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিল। তাই বর্ষার সময় পাঁচ দিন নদীকে দেখতে না পেলে তার মন ছটফট করত, ছেলেমানুষের মতো উৎসুক হয়ে উঠত সে নদীর দেখা পাওয়ার জন্য।
- জীবনের অতিবাহক ও পরমাত্মীয় – নদীর তীরেই তার শৈশব, কৈশোর এবং যৌবন কেটেছে। স্টেশনমাস্টারের কাজ নিয়ে এসে তার পরিচয় হয় এক প্রশস্ত ও জলপূর্ণ নদীর সঙ্গে। নদীটিকে সে যেমন ভালোবেসেছিল, তেমনই সে তার দেশের ক্ষীণস্রোতা নির্জীব নদীটিকেও পরমাত্মীয়ারূপে ভালোবেসেছিল। অনাবৃষ্টিতে শুকিয়ে যাওয়া নদীর জন্য ছেলেবেলায় সে এমনভাবে কেঁদেছিল, যেন কোনো কঠিন রোগে তার কোনো পরমাত্মীয়া মৃত্যুমুখে পড়েছে।
- খেলায় মেতে ওঠা – বর্ষার জলে তার কর্মস্থলের কাছে অবস্থিত পরিপুষ্ট নদীটির উচ্ছল আনন্দের ছোঁয়া নদেরচাঁদের মনেও লেগেছিল। সেই নদীর পঙ্কিল জলস্রোতের আবর্তে সে তার স্ত্রীকে লেখা চিঠি ছিঁড়ে ছিঁড়ে ফেলে এক অদ্ভুত খেলায় মেতে উঠেছিল। তার মনে হয়েছিল, নদী যেন সেই চিঠি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের স্রোতের গভীরে তা লুকিয়ে ফেলছে।
- বন্দিদশা থেকে মুক্তি কামনা – বাঁধ আর ব্রিজের মধ্যে বন্দি থাকা নদীর মুক্তিলাভের কামনা করেছিল নদেরচাঁদ। নদীর এই বন্দিদশা নদেরচাঁদকেও নিদারুণ কষ্ট দিয়েছিল।
- উপসংহার – এইভাবে নদী কখনও নদেরচাঁদের পরমাত্মীয়া, কখনও বা বন্ধু হয়ে উঠেছিল। কিন্তু নদীর কথা ভাবতে ভাবতে এক সময় অজান্তেই চলন্ত ট্রেনের নিচে পড়ে মারা যায় নদেরচাঁদ। নদেরচাঁদ মৃত্যুর মধ্য দিয়ে নদীর প্রতি তার ভালোবাসার মূল্য চুকিয়ে দিয়েছিল।
নদেরচাঁদ নদীকে ভালোবাসার প্রতিদান কীভাবে পেয়েছিল গল্পের প্রেক্ষিতে তা নিজের ভাষায় আলোচনা করো।
- প্রাককথন – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত ‘নদীর বিদ্রোহ’ ছোটোগল্পের প্রধান চরিত্র নদেরচাঁদের জীবনে ছেলেবেলা থেকেই নদী গভীরভাবে জড়িয়ে আছে।
- নদীর প্রতি টান অনুভব – স্টেশনমাস্টার হিসেবে কর্মসূত্রে সে যেখানে এসেছে, সেখানেও ব্রিজ ও বাঁধ দিয়ে ঘেরা একটি নদী রয়েছে, এবং সেই নদীর প্রতি সে এক প্রগাঢ় টান অনুভব করেছে। ব্রিজের মাঝামাঝি ইট, সুরকি, ও সিমেন্ট দিয়ে গাঁথা ধারক স্তম্ভের শেষপ্রান্তে বসে প্রতিদিন সে নদীকে গভীরভাবে দেখেছে এবং অনুভব করেছে।
- নদীর বিদ্রোহ অনুভব – বর্ষার কারণে পাঁচ দিন নদীকে দেখতে না পেয়ে সে এক শিশুর মতো অস্থির হয়েছে।
- নদীর মুক্তি কামনা – বাঁধে ঘেরা নদীর জলোচ্ছ্বাস দেখে তার মনে হয়েছে নদী যেন বন্দি হয়ে বিদ্রোহ করছে। নদীর এই যন্ত্রণা সে নিজেও মন থেকে অনুভব করেছে। সেই কারণে সে নদীর মুক্তি কামনা করেছে। যে রং করা ব্রিজের জন্য সে একদিন গর্ব অনুভব করেছিল, সেই ব্রিজকেই পরে নদীর বন্দিদশার কারণ মনে করে অপ্রয়োজনীয় ভেবেছে।
- নদীকে ভালোবাসার প্রতিদান – এসব ভাবতে ভাবতে নদেরচাঁদ যখন রেললাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে স্টেশনের দিকে এগোচ্ছিল, ঠিক তখনই একটি প্যাসেঞ্জার ট্রেন এসে তাকে পিষে দিয়ে চলে যায়। যন্ত্রসভ্যতার বিরুদ্ধে গিয়ে নদেরচাঁদ নদীর পক্ষে দাঁড়িয়েছিল। তাই গল্পের শেষে নদীকে ভালোবাসার প্রতিদান হিসেবে তার জীবনে নেমে এসেছে করুণ পরিণতি। এভাবেই নদেরচাঁদ নদীকে ভালোবাসার প্রতিদান পেয়েছে।
নদীর বিদ্রোহ গল্পের নামকরণের সার্থকতা বিচার করো।
যেকোনো সাহিত্যের ক্ষেত্রেই নামকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নামকরণের মাধ্যমেই কোনো সাহিত্যের বিষয়বস্তু বা ভাব পাঠকের কাছে স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সাধারণত সাহিত্যের নামকরণ হয় তার বিষয়বস্তুকেন্দ্রিক, চরিত্রধর্মী বা ভাবের উপর নির্ভর করে। আবার কখনো তা হয় ব্যঞ্জনাধর্মী।
নদীর বিদ্রোহ নামকরণটি ব্যঞ্জনাধর্মী। এখানে মানুষ এবং নদীর মধ্যে এক অদ্ভুত সখ্যের বর্ণনা পাই। গল্পে দুটি নদীর কথা উল্লেখ আছে। একটি হলো নদেরচাঁদের দেশের ক্ষীণস্রোতা নদী আর অন্যটি হলো সেই নদী যার সঙ্গে স্টেশনমাস্টারি করতে এসে নদেরচাঁদের পরিচয় হয়। ওই নদীটি ছিল বাঁধ দিয়ে বন্দি করা। ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পে নদী এক জীবন্ত সত্তা হিসেবে প্রতিভাত হয়েছে। বর্ষার জলে নদীর পঙ্কিল স্রোতে দেখা দিয়েছে উন্মাদনা, চঞ্চল হয়ে উঠেছে তার স্রোত।
মানুষ নিজেদের সুবিধার জন্য বাঁধ দিয়ে এই নদীকে বন্দি করেছে, তৈরি করেছে ব্রিজ। সবকিছুই মানুষ করেছে যন্ত্রসভ্যতার সাহায্যে, নিজেদের প্রয়োজনে। নিজেদের প্রয়োজনে তারা নদীর স্বাভাবিক গতিকে আটকে রেখেছে। এই কারণেই গল্পে নদী যেন বিদ্রোহী হয়ে উঠেছে। সে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে যন্ত্রসভ্যতার বিরুদ্ধে। যারা তাকে বন্দি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে উঠেছে। এই ব্রিজ আর বাঁধ ভেঙে ফেলে, সে যেন তার স্বাভাবিক গতি ফিরে পেতে চেয়েছে। তার উন্মত্ত জলস্রোতের মধ্যে দিয়েই সে সেই বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে। তখন ‘বাঁধ ভেঙে দাও’ মন্ত্রে উজ্জীবিত হয়ে উঠেছে নদীটি। তাই গল্পের প্রেক্ষাপটে বিচার করলে ‘নদীর বিদ্রোহ’ নামকরণটি যথার্থ এবং সার্থক হয়েছে বলা যায়।
নদীর বিদ্রোহ গল্পে নদেরচাঁদের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে লেখক পাঠকের উদ্দেশে যে বার্তা দিতে চেয়েছেন তা নিজের ভাষায় লেখো।
- নদীপ্রীতি – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পে জন্মভূমির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটির মাধ্যমেই নদেরচাঁদের নদীপ্রীতির সূচনা। কর্মস্থলের নদীটি তার সেই আবেগের পরবর্তী পর্যায়। রবীন্দ্রনাথের বলাই যেমন গাছের কথা ভাবতে ভাবতে নিজেই মনেপ্রাণে একটা গাছ হয়ে উঠেছিল, এই গল্পে নদেরচাঁদও নদীর কথা ভাবতে ভাবতে যেন নিজে নদী হয়ে গিয়েছিল।
- নদী নিয়ে ভাবনা – নদীর শুষ্কতা, জলোচ্ছ্বাস যেন নদেরচাঁদেরই জীবনের জোয়ারভাটা। তার কাছে নদীকে বাঁধ দেওয়ার অর্থ জীবনের গতি রুদ্ধ করা। নদীর ওপর নির্মিত সেতু দেখতে সুন্দর, কিন্তু তাতে নদীর স্বাভাবিক গতি রুদ্ধ হয়ে যায়। নদেরচাঁদের কাছে নদীর ব্রিজ বা সেতু আগ্রাসী মানুষের ঔদ্ধত্যের প্রতীক। বর্ষায় নদীর জলোচ্ছ্বাস যেন সেই যন্ত্রসভ্যতার বিরুদ্ধেই নদীর বিদ্রোহের প্রকাশ। নদেরচাঁদ সেটাই অনুভব করে। ফলস্বরূপ, নদীর ওপরের ব্রিজটি তখন নদেরচাঁদের কাছে অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয়।
- যন্ত্রসভ্যতার প্রতিশোধ – গল্পের উপসংহারে এসব কথা ভাবতে ভাবতেই নদেরচাঁদ রেললাইনের উপর দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে ট্রেনের চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা যায়। নদেরচাঁদের মৃত্যুর ঘটনাটি যন্ত্রসভ্যতার দ্বারা প্রকৃতির প্রতি তার ভালোবাসা এবং পক্ষপাতের মধুর প্রতিশোধ হিসেবে দেখা যায়।
নদীর বিদ্রোহ গল্পে নদীর সঙ্গে নদেরচাঁদের যে সম্পর্ক প্রকাশিত হয়েছে, তার রূপটি বর্ণনা করো।
- কথামুখ – ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পে নদীর সঙ্গে নদেরচাঁদের সম্পর্কের রূপটি গল্পের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রবলভাবে ফুটে উঠেছে।
- সমর্পিত ভালোবাসা – নদেরচাঁদ তার স্ত্রীকে একটি বেদনাময় চিঠি লিখেছিল, এ কথা যেমন সত্য, তেমনভাবেই আরও বড়ো সত্য হলো, শুধু নদীর সঙ্গে খেলার তুচ্ছ ছেলেমানুষি নেশায় পড়ে সে সেই চিঠিটি ছিঁড়ে টুকরো টুকরো করে নদীতে ভাসিয়ে দিয়েছিল। এভাবে স্ত্রীর প্রতি তার ভালোবাসাকে সে যেন নদীর ভালোবাসার মধ্যে সমর্পণ করেছিল।
- হৃদয়যন্ত্রণার প্রকাশ – প্রিয় নদীটিকে একবার চোখের দেখা না দেখলে সে শান্তি পেত না। নদীর কুলুকুলু শব্দ আর বৃষ্টির ঝমঝম আওয়াজ সংগীতের ঐকতান হয়ে নদেরচাঁদের দেহ-মনকে অবসন্ন করে, বিভোর করে তুলত। নদীর ওপর ব্রিজ তৈরি করে নদীর স্বাভাবিক গতিকে রুদ্ধ করে রাখার প্রতিবাদে নদেরচাঁদের হৃদয়ও যন্ত্রণায় ফেটে পড়তে চাইত।
- ভালোবাসার প্রতিশোধ – কিন্তু ভাগ্যের এমনই পরিহাস, তাকেও মরতে হয় যন্ত্রসভ্যতার কাছেই। চলন্ত রেলগাড়ি যন্ত্রদানবের মতোই মুহূর্তে নদেরচাঁদকে পিষে দিয়ে চলে যায় — প্রকৃতির প্রতি তার ভালোবাসার চরম প্রতিশোধ যেন নেয় যন্ত্রসভ্যতা।
নদীর বিদ্রোহ গল্পের নদেরচাঁদ চরিত্রটি আলোচনা করো।
- কথামুখ – নদীর বিদ্রোহ গল্পটির কেন্দ্রীয় চরিত্র নদেরচাঁদ। তার চরিত্রকে কেন্দ্র করেই কাহিনির বিকাশ ঘটেছে। সেখান থেকেই নদেরচাঁদের বৈশিষ্ট্য ও নিজস্বতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
- পরিচয় – নদেরচাঁদের বয়স তিরিশ বছর, এবং সে স্টেশন মাস্টারের পদে চাকরি করে। দিনরাত মেল, প্যাসেঞ্জার এবং মালগাড়ির চলাচল নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তার ওপর ন্যস্ত।
- প্রকৃতি প্রেমিক – পেশাগত দায়িত্বের বাইরে নদেরচাঁদ একজন প্রকৃতি ও নদীপ্রেমিক। নদীর প্রতি তার ভালোবাসার শুরু শৈশব-কৈশোরে দেশের ক্ষীণস্রোতা নদীটিকে ঘিরে। পরবর্তীতে এই ভালোবাসার বিকাশ ঘটে কর্মক্ষেত্রের বড়ো নদীকে ঘিরে।
- রোমান্টিকতা – নদীর প্রতি নদেরচাঁদের ভালোবাসা এক পর্যায়ে প্রায় অস্বাভাবিক রূপ নেয়। তার এই ভালোবাসার প্রকাশ দেখা যায় ছোটবেলা থেকেই। দেশের নদী যখন শুকিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়, তখন নদেরচাঁদ প্রায় কেঁদে ফেলেছিল – যেমন দুরারোগ্য ব্যাধিতে প্রিয়জনের মৃত্যুর শঙ্কায় মানুষ কাঁদে। পরবর্তীতে কর্মক্ষেত্রে প্রবল বৃষ্টির কারণে পাঁচ দিন নদীর সঙ্গে সাক্ষাৎ না হলে নদেরচাঁদ পাগলের মতো আচরণ করতে থাকে। বৃষ্টি থামলে সে নদীর কাছে ছুটে যায়। এমনকি, স্ত্রীকে লেখা চিঠির পৃষ্ঠাগুলো জলে ভাসিয়ে সে নদীর সঙ্গে খেলা করে।
- নিজস্বতা – নদী নিয়ে নদেরচাঁদের ভাবনা একান্তই তার নিজস্ব। বর্ষায় উন্মত্ত নদীকে দেখে তার মনে হয়, নদী মানুষের তৈরি বাঁধ ভেঙে নিজের বয়ে যাওয়ার পথ করে নিতে চায়। সভ্যতার সঙ্গে এই লড়াইয়ে নদীর জয়লাভ নিয়ে সে চিন্তিত হয়। ব্রিজের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও তার মনে প্রশ্ন জাগে।
- ভাবুক – নদীর কথা ভাবতে ভাবতে নদেরচাঁদ ট্রেনের চাকায় পিষে যায়। প্রকৃতির পক্ষ নেওয়ার কারণে যন্ত্রসভ্যতা যেন তার ওপর প্রতিশোধ নেয়। এ যেন প্রমাণ করে দেয় যে নদেরচাঁদের মতো মানুষ এই যান্ত্রিক সভ্যতায় টিকে থাকতে পারে না।
ছোটোগল্প হিসেবে নদীর বিদ্রোহ কতদূর সার্থক বিচার করো।
ছোটোগল্পের মূলকথা – ছোটোগল্পে লুকিয়ে থাকে বৃহত্তর জীবনের ব্যঞ্জনা। ‘ছোটো প্রাণ, ছোটো ব্যথা/ছোটো ছোটো দুঃখকথা’ হলেও, ছোটোগল্প ছোটো পরিসরে সমগ্র জীবনের ঘটনাকে তুলে ধরে। এর গতি হয় সরল ও একমুখী। গল্পের শেষে মনে হয় – শেষ হয়েও হলো না শেষ। এই সংক্ষিপ্ত বৈশিষ্ট্যের আলোকে ‘নদীর বিদ্রোহ’ গল্পটি বিচার করা যেতে পারে।
ছোটোগল্প হিসেবে নদীর বিদ্রোহ – এর সার্থকতা – নদেরচাঁদের নদীপ্রীতিই গল্পের মূল বিষয়। আর গল্পের ব্যঞ্জনায় উঠে এসেছে নদীর বিদ্রোহ। মানুষ নদীকে বাঁধ দিয়ে বন্দি করে, নদীর উপর তৈরি করে কংক্রিটের সেতু। যন্ত্রসভ্যতার প্রবল পেষণে পিষ্ট হয়ে, নদীর স্বাভাবিক গতি থেমে যায়। নদেরচাঁদের মনে হয়েছে, এটাই নদীর শিকল। বর্ষায় নদী প্রাণ ফিরে পায়, আর সেই প্রবল স্রোতই তার বিদ্রোহের প্রকাশ। নদীর জলের ঘূর্ণিপাক তার বন্দিদশার যন্ত্রণার বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করেছে। নদেরচাঁদের কাছে পরিপূর্ণ নদী প্রাণশক্তির প্রতীক। সে মনে করেছে, নদী ইচ্ছা করলে এই সব কিছু চূর্ণবিচূর্ণ করে দিতে পারে, ভেঙে ফেলতে পারে কংক্রিটের সেতু। নদীর দুরন্ত প্রবাহের মধ্যে নদেরচাঁদ নদীর মুক্তির চেষ্টা দেখতে পেয়েছে। একটিমাত্র চরিত্রের ভাবনা ও অভিজ্ঞতাকে কেন্দ্র করে পুরো গল্পটি আবর্তিত হয়েছে। গল্পের শেষে নদেরচাঁদের করুণ পরিণতি পাঠককে অতৃপ্তির বেদনায় অভিভূত করে। এভাবেই ছোটোগল্প হিসেবে ‘নদীর বিদ্রোহ’ স্বতন্ত্র ও ব্যতিক্রমী।
আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার সপ্তম পাঠের তৃতীয় বিভাগ “নদীর বিদ্রোহ” থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর নিয়ে আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারে এসেছে। যদি কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকে, তাহলে টেলিগ্রামে যোগাযোগ করতে পারেন, আমি সাহায্য করার চেষ্টা করবো। এছাড়া, পোস্টটি আপনার পরিচিতদের মধ্যে শেয়ার করতে ভুলবেন না, যাদের এটি কাজে লাগতে পারে। ধন্যবাদ!