এখনই আমাদের Telegram Community গ্রুপে যোগ দিন।। এখানে WBBSE বোর্ডের পঞ্চম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণির যেকোনো বিষয়ভিত্তিক সমস্যা শেয়ার করতে পারেন এবং একে অপরের সাহায্য করতে পারবেন। এছাড়া, কোনও সমস্যা হলে আমাদের শিক্ষকরা তা সমাধান করে দেবেন।

Telegram Logo Join Our Telegram Community

দশম শ্রেণি – বাংলা – সিরাজদ্দৌলা – সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

আজকের আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার পঞ্চম পাঠের দ্বিতীয় অংশ ‘সিরাজদ্দৌলা’ নিয়ে কিছু সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর আলোচনা করবো। এই প্রশ্নগুলো মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এগুলো পরীক্ষায় প্রায়শই দেখা যায়। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের জন্য উপকারী হবে।

সিরাজদ্দৌলা – সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর
সিরাজদ্দৌলা – সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর

সিরাজদ্দৌলা নাট্যাংশ অবলম্বনে সিরাজদ্দৌলার চরিত্র বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।

  • কথামুখ — ‘সিরাজদ্দৌলা’ নাটকে সিরাজের চরিত্রে একাধিক বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। যেমন —
  • জাতীয়তাবাদী ও দেশপ্রেমী — নবাব সিরাজ বাংলার স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন। বাংলার দুর্দিনে তাঁর চরম শত্রু মীরজাফর প্রমুখের প্রতি তিনি একত্রে থাকার অনুরোধ জানিয়েছিলেন।
  • অসাম্প্রদায়িক — সিরাজের দেশাত্মবোধ ছিল অসাম্প্রদায়িক। তাঁর মতে, বাংলা শুধু হিন্দুদের নয়, বাংলা শুধু মুসলমানদেরও নয়। এটি মিলিতভাবে হিন্দু-মুসলমান সকলের মাতৃভূমি। তাঁর এই অসাম্প্রদায়িক দেশপ্রেমই ছিল তাঁর ব্যক্তিত্বের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য।
  • জাতীয়তাবাদী — সিরাজদ্দৌলা বাংলার মর্যাদা ও সম্মান রক্ষার অতন্দ্র প্রহরী ছিলেন। তাঁর সাম্প্রদায়িকতামুক্ত জাতীয়তাবোধ তাঁকে ইতিহাসের এক বীর নায়ক করে তুলেছে।
  • উদার ও আদর্শবাদী — সিরাজের চরিত্রে একদিকে উদারতা, অন্যদিকে আদর্শের এক অপূর্ব সমন্বয় ছিল। মাতৃভূমির স্বাধীনতার জন্য ব্যক্তিগত শত্রুদের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করতে পেরেছিলেন। এমনকি ইংরেজদের সঙ্গে যুদ্ধে জয়লাভের পর তিনি বিচারের মুখোমুখি হওয়া বা সিংহাসন ত্যাগ করার প্রস্তাবও গ্রহণ করেছিলেন।
  • যন্ত্রণাদীর্ণ ও হতাশাগ্রস্ত — সিরাজের আদর্শের আড়ালে এক যন্ত্রণাদীর্ণ ব্যক্তিত্বও লুকিয়ে ছিল। সমালোচনা ও ষড়যন্ত্রের ফলে তিনি মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিলেন। বেগম লুৎফাকে তিনি বলেছেন, “মানুষের নির্মমতার পরিচয় পেয়ে এখন আর কোনো মানুষকে শ্রদ্ধা করতে পারি না, ভালোও বাসতে পারি না।” আদর্শের বলিষ্ঠতা ও ব্যক্তিগত যন্ত্রণার দ্বন্দ্বে এভাবেই হতাশায় ভুগেছেন সিরাজদ্দৌলা।

সিরাজদ্দৌলা নাট্যদৃশ্য অবলম্বনে মীরজাফরের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

  • কথামুখ – নাট্যকার শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্ত তাঁর ‘সিরাজদ্দৌলা’ নামক নাট্যদৃশ্যে ইতিহাসকে অনুসরণ করেই মীরজাফরের স্বার্থপর চরিত্রটি তুলে ধরেছেন।
  • অসহিষ্ণু ও উগ্র – সিরাজ দরবারকক্ষে হোসেনকুলি খাঁর প্রাণদানের প্রসঙ্গ তুললে মীরজাফর মুখ খুলেন। নবাবের বিশ্বস্ত কর্মচারী মীরমদন তাঁকে নবাবের প্রতি বিশ্বস্ততার কথা মনে করালে, তিনি তাঁর পক্ষের সভাসদদের সঙ্গে নিয়ে দরবার ত্যাগ করতে উদ্যত হন। এই আচরণের মধ্যে মীরজাফরের অসহিষ্ণুতা এবং উগ্রতা ধরা পড়েছে।
  • আত্মকেন্দ্রিক ও অহংকারী – মোহনলালকে মীরজাফর বলেছেন – নিম্নপদস্থ কর্মচারীদের উচ্চপদস্থ কর্মচারীদের কাজের সমালোচনা করা উচিত নয়। এই উক্তিতে নিজের পদমর্যাদা নিয়ে মীরজাফরের অহংকার প্রকাশিত হয়েছে।
  • ষড়যন্ত্রকারী – বাংলার ঘোর সংকটের সময়ে মীরজাফর নবাবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছেন। ওয়াটস তাঁকে যে পত্র লিখেছেন, তার প্রসঙ্গ যখন নবাব তোলেন, তখন মীরজাফরকে লজ্জিত হতে দেখা যায় না। এ থেকে বোঝা যায় মীরজাফরই নবাবের বিরুদ্ধে প্রধান ষড়যন্ত্রকারী এবং বিরূপ মনোভাবাপন্ন।
  • ইতিকথা – নাট্যকার এখানে মীরজাফর চরিত্রটিকে প্রচলিত ইতিহাসের ধারা মেনেই জীবন্ত করে তুলেছেন।

সিরাজদ্দৌলা নাট্যদৃশ্য অবলম্বনে ঘসেটি বেগমের চরিত্রটি বিশ্লেষণ করো।

  • কথামুখ – সিরাজদ্দৌলা নাটকে ঘসেটি বেগম চরিত্র অনেকটাই ইতিহাসের যথাযথ রূপায়ণ।
  • ষড়যন্ত্রকারী – ঘসেটি বেগম সিরাজের মাসি। তিনি চেয়েছিলেন পিতা আলীবর্দির মৃত্যুর পর তাঁর স্বামী বাংলার মসনদে বসুন। কিন্তু তাঁর স্বামীর আকস্মিক মৃত্যু হলে সিরাজের সিংহাসনলাভ নিশ্চিত হয়ে ওঠে। নিজের মনোবাসনা পূর্ণ না হওয়ায় ঘসেটি সিরাজের প্রতি ঈর্ষা থেকেই ইংরেজদের সঙ্গে মিলিত হয়ে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন।
  • প্রতিহিংসাপরায়ণা – ঘসেটি বেগমের প্রথম সংলাপ – “ওখানে কী দেখছ মূর্খ, বিবেকের দিকে চেয়ে দ্যাখো!” সন্তানসম সিরাজের প্রতি ঘসেটির এই উক্তি কখনোই যথাযথ বলে মনে হয় না। ঘসেটির উক্তিতে প্রতিহিংসাপরায়ণতা স্পষ্ট – “আমার রাজ্য নাই, তাই আমার কাছে রাজনীতিও নাই – আছে শুধু প্রতিহিংসা।” নিরীহ বেগম লুৎফাকেও দুর্বিনীত ঘসেটি অকারণে শ্লেষপূর্ণ বাক্য শুনিয়েছেন।
  • ইতিকথা – তাঁর সম্পর্কে লুৎফার মূল্যায়ন – “ওর নিশ্বাসে বিষ, ওর দৃষ্টিতে আগুন, ওর অঙ্গ-সঞ্চালনে ভূমিকম্প!” – বুঝিয়ে দেয় নেতিবাচক চরিত্র হিসেবে ঘসেটি সার্থক।

সিরাজদ্দৌলা নাটকে সংলাপসৃষ্টিতে নাট্যকারের কৃতিত্বের পরিচয় দাও।

  • ভূমিকা – অ্যারিস্টটল নাটকের যে ৬টি উপাদানের কথা বলেছেন, তার মধ্যে চতুর্থ উপাদান হল সংলাপ। নাট্যকাহিনির সার্থক রূপায়ণে সংলাপের বিশেষ ভূমিকা আছে।
  • সংলাপ রচনার যথার্থতা – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের কালজয়ী নাটক সিরাজদ্দৌলা-র এই পাঠ্যাংশে সংকলিত অংশে সিরাজ ও ওয়াটসের সংলাপ দিয়ে নাট্যদৃশ্যের সূচনা হয়েছে। ওয়াটস ইংরেজ চরিত্র। তাই তাঁর সংলাপ ইংরেজি ভাষায় রচিত হয়েছে। তিনি যে বাংলা ভাষা ব্যবহার করেছেন, তা অন্বয়গত দিক থেকে ত্রুটিযুক্ত। এই ত্রুটিযুক্ত ভাষা একজন ইংরেজ চরিত্রের পক্ষে উপযুক্ত হয়েছে বলা যায়। অন্যদিকে, মঁসিয়ে লা পুরোপুরি ইংরেজিতে কথা বলেছেন। নাহলে তাঁর চরিত্রটি বাস্তবতা হারাত। নাট্যদৃশ্যে সিরাজের সংলাপগুলি সম্রাটসুলভ গাম্ভীর্য এবং ব্যক্তিত্বের পরিচয় বহন করে। আবার মীরজাফর ও ঘসেটি বেগমের সঙ্গে কথোপকথনে সিরাজ চরিত্রের অন্তর্দ্বন্দ্ব ও ক্ষোভ ধরা পড়েছে। অপ্রধান চরিত্রগুলিও উপযুক্ত সংলাপের গুণে স্বমহিমায় ফুটে উঠেছে। বলা যায়, ঐতিহাসিক নাটকের গাম্ভীর্য বজায় রাখতে নাট্যকার সংলাপ রচনার ক্ষেত্রে বিশেষ শিল্পকৌশলের পরিচয় দিয়েছেন।

শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের মূল নাটকটির নাম সিরাজদ্দৌলা। তাঁর দ্বিতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যটিও সিরাজদ্দৌলা নামে সংকলিত। বিশেষ দৃশ্যের এরূপ নামকরণ সার্থক হয়েছে কি না বিচার করো।

  • ভূমিকা – শচীন্দ্রনাথ সেনগুপ্তের সিরাজদ্দৌলা নাটকের দ্বিতীয় অঙ্কের প্রথম দৃশ্যটি পাঠ্যাংশে সংকলিত হয়েছে। সংকলকগণ মূল নাটকের শিরোনামটিই এখানে বজায় রেখেছেন। দৃশ্যটির ঘটনাক্রম বিশ্লেষণ করলে নামকরণটিকে অপরিবর্তিত রাখার যৌক্তিকতা ও সার্থকতা বোঝা যাবে।
  • নামকরণের যৌক্তিকতা ও সার্থকতা – নাট্যদৃশ্যটিতে উপস্থাপনার মূল বিষয় হল নবাব সিরাজদ্দৌলার বিরুদ্ধে সংগঠিত ষড়যন্ত্র এবং তার জন্য নবাবের মানসিক উদ্বেগ। বাইরে ইংরেজ আর ঘরে প্রধান সেনাপতি মীরজাফর এবং নিজের মাসি ঘসেটি বেগমের যৌথ ষড়যন্ত্র সিরাজকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করে তুলেছে। নিজের যাবতীয় অপরাধ স্বীকার করে নিয়ে বাংলাকে রক্ষার জন্য কর্মচারীদের কাছে তিনি নতজানু হয়েছেন। মাত্র 15 মাসের রাজত্বকালে দরবারি ষড়যন্ত্রে, মানুষের নির্মমতায়, আপনজনদের প্রতিহিংসায় সিরাজ মর্মপীড়া অনুভব করেছেন। নাট্যদৃশ্যের উপসংহারে তার উক্তির মধ্যে ধরা পড়েছে অন্তহীন ব্যর্থতা – পলাশি! লাখে লাখে পলাশ-ফুলের অগ্নি-বরণে কোনোদিন হয়তো পলাশির প্রান্তর রাঙা হয়ে থাকত, তাই আজও তার বুকে রক্তের তৃষ্ণা। সিরাজের উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, হতাশা, দেশপ্রেম নাট্যাংশটির মুখ্য অবলম্বন বলেই সিরাজদ্দৌলা নামকরণটিই যথাযথ বলে মনে হয়েছে।

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা মাধ্যমিক বাংলার পঞ্চম পাঠের দ্বিতীয় অংশ “সিরাজদ্দৌলা” নিয়ে সামগ্রিক বিষয়ভিত্তিক প্রশ্নোত্তর আলোচনা করেছি। এই প্রশ্নগুলি মাধ্যমিক পরীক্ষা এবং চাকরির পরীক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ প্রায়ই এগুলো পরীক্ষায় আসতে দেখা যায়। আশা করি, এই আর্টিকেলটি আপনাদের উপকারী হয়েছে। যদি আপনার কোনো প্রশ্ন বা অসুবিধা থাকে, টেলিগ্রামে আমার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন এবং আমি যথাসম্ভব সহায়তা করার চেষ্টা করবো। এছাড়া, যদি পোস্টটি আপনার পরিচিত কারও উপকারে আসে বলে মনে হয়, তবে তাদের সাথে শেয়ার করতে ভুলবেন না। ধন্যবাদ!

Share via:

মন্তব্য করুন