দশম শ্রেণি – বাংলা – অসুখী একজন – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

পাবলো নেরুদার অসুখী একজন কবিতাটি একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত পৃথিবীর প্রতিচ্ছবি। কবিতাটিতে একজন অসুখী মানুষের কথা বলা হয়েছে, যার জীবনে আনন্দ নেই, সুখ নেই। তার চারপাশের পৃথিবী ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। সে তার প্রিয়জনদের হারিয়ে ফেলেছে। তার মনে শুধুই শূন্যতা ও বিষাদ।

Table of Contents

দশম শ্রেণি – বাংলা – অসুখী একজন – বিশ্লেষণধর্মী ও রচনাধর্মী প্রশ্ন ও উত্তর

আমি তাকে ছেড়ে দিলাম — কে কাকে ছেড়ে দিয়েছিলেন? কীভাবে তাকে রেখে যাওয়া হয়েছিল? এই ছেড়ে যাওয়ার বিশেষত্ব কী ছিল?

উদ্দিষ্ট ব্যক্তিরা – পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি তাঁর প্রিয়তমা মানুষটিকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।

যেভাবে রেখে যাওয়া হয়েছিল – কবি তাঁর প্রিয়তমাকে অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে পাড়ি দিয়েছিলেন বহুদূরে।

কবির চলে যাওয়ার বিশেষত্ব – বিপ্লব কিংবা স্বদেশের মুক্তি সংগ্রামের লক্ষ্যেই কবির এই চলে যাওয়া। এই চলে যাওয়ার পরে বহু সময় অতিবাহিত হয়, কবির স্মৃতিও ঝাপসা হতে হতে হারিয়ে যায়।

  • ধ্বংসলীলা – অবশেষে ‘রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো’ যুদ্ধ আসে। শিশুমৃত্যুর ঘটনা ঘটে। ধ্বংসলীলা চলে। সমস্ত সমতলভূমিতে আগুন ধরে যায়। যে দেবতারা হাজার বছর ধরে ধ্যানমগ্ন ছিল, তারা মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। কবির স্মৃতি বিজড়িত বাড়ি, বারান্দা, গোলাপি গাছ। প্রাচীন জলতরঙ্গ-সহ সব কিছুই চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে যায়, জ্বলে যায় আগুনে।
  • ধ্বংসস্তূপ – ধ্বংসের চিহ্ন হিসেবে পড়ে থাকল কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা, পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা ইত্যাদি।
  • প্রিয়তমার প্রতীক্ষা – কিন্তু এই ধ্বংসস্তূপের মধ্যেও সেই মেয়েটি জেগে থাকল কবির অপেক্ষায়। মেয়েটি জানত না, যুদ্ধ কতটা সর্বনাশা। তাই সে ভাবতেও পারেনি, যুদ্ধক্ষেত্র থেকে কবি আর কোনোদিনই ফিরে আসবেন না। সে অপেক্ষায় থাকল। অন্যদিকে বৃহত্তর জীবনক্ষেত্র ছেড়ে কবিরও আর ফেরা হল না প্রিয়তমা মেয়েটির কাছে।

অপেক্ষায় দাঁড় করিয়ে রেখে দরজায়/আমি চলে গেলাম দূর – দূরে। — বক্তা চলে যাওয়ার পরে কী কী ঘটেছিল?

  • কবির চলে যাওয়া – পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি তাঁর প্রিয়তমাকে দরজায় অপেক্ষারত রেখে নিজের পথে এগিয়ে যান। সে পথ বিপ্লবের বা মুক্তিসংগ্রামের।
  • প্রিয়তমা – মেয়েটি কিন্তু জানত না যে কর্তব্যের সুকঠিন পথ পেরিয়ে কবির পক্ষে আর ফিরে আসা সম্ভব ছিল না। তার অপেক্ষার সময় এগিয়ে চলে। বৃষ্টিতে ধুয়ে যায় চলে যাওয়া মানুষটির পায়ের দাগ, রাস্তায় ঘাস জন্মায়।
  • যুদ্ধের বীভৎসতা – তারপর যুদ্ধ আসে রক্তের আগ্নেয় পাহাড়ের মতো। শিশুহত্যা ঘটে, মানুষের বাড়িঘর ধ্বংস হয়। যুদ্ধের তাণ্ডবে দেবতারা মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে ধুলোয় ছড়িয়ে পড়ে। ধ্বংসের এই উন্মত্ততায় বিপ্লবীর স্মৃতির স্মারকগুলোও চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। তাঁর সুন্দর বাড়ি, তার বারান্দা, প্রিয় গোলাপি গাছ, ‘ছড়ানো করতলের মতো পাতা চিমনি’, প্রাচীন জলতরঙ্গ—সবকিছুই চূর্ণ হয়ে যায়, জ্বলে যায় আগুনে।
  • ধ্বংসস্তূপ – শহর জুড়ে ছড়িয়ে থাকে কিছু কাঠকয়লা। রক্তের কালো দাগের সঙ্গে দোমড়ানো লোহা আর পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা যেন পড়ে থাকে ধ্বংসস্তূপের স্মৃতিচিহ্ন হয়ে।
  • তবুও – এই ধ্বংস আর রক্তাক্ততার মধ্যে বিপ্লবীর প্রিয়তমা মেয়েটির অপেক্ষা একইরকমভাবে জেগে থাকে।

সে জানত না আমি আর কখনো ফিরে আসব না। — কার কথা বলা হয়েছে? কোথা থেকে কেন এই না ফেরার কথা বলা হয়েছে? না ফেরার কথা জানা না থাকায় কোন্ প্রতিক্রিয়া হয়েছিল?

উদ্দিষ্ট ব্যক্তি – পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতার প্রশ্নোদ্ধৃত অংশে কবি তাঁর প্রিয়তমার কথা বলেছেন।

কেন এই না-ফেরা – কবি এখানে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে তাঁর না ফেরার কথা জানিয়েছেন। পরাধীনতা থেকে মুক্তির জন্য নিজেকে নিয়োজিত করেছে যে মানুষ, স্বাধীনতা কিংবা শোষণমুক্তিই তার লক্ষ্য। এই লড়াইয়ের পথ কখনোই মসৃণ নয়। তাই বিরুদ্ধ শক্তির প্রবল বাধা এবং প্রত্যাঘাতে মৃত্যুকেই সেখানে স্বাভাবিক বলে গ্রহণ করতে হয়। এই কারণেই কবি ফিরে না আসার কথা বলেছেন।

প্রতিক্রিয়া – মানুষের ব্যক্তিগত সম্পর্ক সবসময় সামাজিক কর্তব্যকে বুঝতে সক্ষম হয় না। আবেগের সঙ্গে বাস্তবের দূরত্ব তৈরি হয়। কবি বিপ্লবের যে সুকঠিন পথে যাত্রা করেছেন, তার স্বরূপ কবির প্রিয়তমার কাছে তাই স্পষ্ট হয় না। ফলে দরজায় প্রিয় মানুষটির জন্য তার অপেক্ষা চলতেই থাকে। সপ্তাহের পরে সপ্তাহ, বছরের পর বছর কেটে যায়। সময়ের গতিতে কবির পায়ের ছাপ একদিন বৃষ্টিতে ধুয়ে যায়, রাস্তা ঢেকে যায় ঘাসে, আরও অনেক বছর কেটে যায়। কিন্তু মেয়েটির অপেক্ষার শেষ হয় না।

একটা সপ্তাহ আর একটা বছর কেটে গেল। — কোন্ প্রসঙ্গে এ কথা বলা হয়েছে? বিষয়টি উল্লেখের কারণ আলোচনা করো।

প্রসঙ্গ – পাবলো নেরুদা-র ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি তাঁর প্রিয়তমা মানুষটিকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন বিপ্লবের পথে অথবা স্বদেশের মুক্তি সংগ্রামে। পরিচিত সংসারজীবন থেকে এই চলে যাওয়া বহুদূরে। কিন্তু প্রিয়তমা মানুষটি জানত না যে, বিপ্লব বা যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব। তাই দরজায় দাঁড়িয়ে তার অপেক্ষা চলতেই থাকে। সে অপেক্ষা ক্রমশ সীমাহীন হয়ে যায়। সপ্তাহ আর বছরের কেটে যাওয়া সেদিকেই ইঙ্গিত করে।

বিষয় উল্লেখের কারণ – কবি চলে যান যুদ্ধক্ষেত্রে। অপেক্ষায় জেগে থাকেন তাঁর প্রিয়তমা নারীটি।

  • বিচিত্র আয়োজন – কিন্তু সময় থেমে থাকে না। রাস্তায় চলে যায় কুকুর, হেঁটে যায় গির্জার নান। অর্থাৎ জীবন তার বিচিত্র আয়োজন নিয়ে এগিয়ে চলে স্বাভাবিক ছন্দে।
  • বিবর্ণ স্মৃতি – এরই মধ্যে বৃষ্টি এসে ধুয়ে দেয় কবির পায়ের চিহ্ন। স্মৃতি ক্রমশ বিবর্ণ হতে থাকে। রাস্তায় ঘাস জন্মায়। কবির পায়ের দাগ চিরকালের জন্য হারিয়ে যায়।
  • ভালোবাসার অপেক্ষা – ভালোবাসার মানুষের অপেক্ষা চলতেই থাকে। একটার পরে একটা বছর যেন পাথরের মতো মেয়েটির মাথার ওপরে নেমে আসতে থাকে। কিন্তু প্রতীক্ষার অবসান ঘটে না। অপেক্ষার সেই অসীম বিস্তারই যেন উল্লিখিত মন্তব্যে প্রকাশ পেয়েছে।

তারপর যুদ্ধ এল — ‘তারপর’ কথাটির দ্বারা কবি কোন সময়ের কথা বলেছেন? যুদ্ধের কোন্ প্রভাব কবি প্রত্যক্ষ করেছিলেন?

তারপর কথাটির অর্থ – পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি বিপ্লবের আহ্বানে ঘর ছেড়েছিলেন। কবির প্রিয়তমা অপেক্ষা করেছিলেন যে, একদিন কবি ফিরে আসবেন। কিন্তু অপেক্ষার প্রহর শেষ হয় না। বৃষ্টির জলে একসময় ধুয়ে যায় কবির পায়ের ছাপ। রাস্তা ঢেকে যায় ঘাসে। বছরের পর বছর এভাবে কেটে যাওয়ার পরে একসময় যুদ্ধ শুরু হয়। ‘তারপর’ কথাটির দ্বারা এই যুদ্ধ শুরুর সময়টিকেই বোঝানো হয়েছে।

যুদ্ধের প্রভাব – যখন যুদ্ধ শুরু হয় সে যুদ্ধ আসে রক্তের এক’ আগ্নেয় পাহাড়ের মতো। শিশুরাও সে হত্যালীলা থেকে রেহাই পায় না, মানুষের বসতি ধ্বংস হয়। আগুন লেগে যায় সমতলে। যেসব দেবতারা মন্দিরে ধ্যানমগ্ন ছিল হাজার বছর ধরে, তারা উলটে গিয়ে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। অর্থাৎ ধ্বংস আর বিশ্বাসের ফাটল ঘটে একইসঙ্গে। কবির ফেলে আসা প্রিয় বাড়ি, বারান্দা, গোলাপি গাছ, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ ইত্যাদি যাবতীয় স্মৃতিই যুদ্ধের তাণ্ডবে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। শহর রূপান্তরিত হয় ধ্বংসস্তূপে। কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা, মৃত পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা যেন ধ্বংসের প্রতীক হয়ে উকি দেয়। আর রক্তের কালো দাগ হল সেই হত্যালীলা ও ধ্বংসস্তূপের প্রমাণস্বরুপ। এভাবেই যুদ্ধ আসে সর্বগ্রাসী চরিত্র নিয়ে।

সেই মেয়েটির মৃত্যু হলো না। — কোন্ মেয়েটির? কীসে তার মৃত্যু হল না? কীভাবে তা সম্ভব হল?

উদ্দিষ্ট মেয়েটির পরিচয় – পাবলো নেরুদার লেখা ‘অসুখী একজন’ কবিতায় যে মেয়েটিকে কবি বিপ্লব অথবা যুদ্ধক্ষেত্রের উদ্দেশ্যে যাওয়ার সময়ে দরজায় দাঁড় করিয়ে রেখে গিয়েছিলেন, সেই মেয়েটির কথা বলা হয়েছে।

মৃত্যুহীন – যুদ্ধেও তার মৃত্যু হল না।

প্রিয়তমার অপেক্ষা – কবি যখন যুদ্ধক্ষেত্রে যান তখন থেকেই কবির প্রিয়তমা মেয়েটির অপেক্ষার শুরু। সে জানত না যে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে ফিরে আসা প্রায় অসম্ভব। ফলে তার অপেক্ষা চলতেই থাকে। সপ্তাহ আর বছর কেটে যায়।

  • যুদ্ধের তাণ্ডব – বছরগুলো পাথরের মতো তার মাথার উপরে নেমে আসে। এরপরে যুদ্ধ আসে। ‘রক্তের এক আগ্নেয় পাহাড়ের মতো’ সেই যুদ্ধে মানুষের বাসভূমি আগুনে জ্বলে যায়। দেবতারা চূর্ণ হয়ে মন্দির থেকে বাইরে নিক্ষিপ্ত হয়।
  • স্মৃতিচিহ্ন – কবির ফেলে আসা প্রিয় বাড়ি, বারান্দা, গোলাপি গাছ চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ ইত্যাদি যাবতীয় স্মৃতিই আগুনে জ্বলে যায়। শহরের স্মৃতিচিহ্ন হয়ে পড়ে থাকে কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা, পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা।
  • অনন্ত অপেক্ষা – তার মধ্যেও যখন মেয়েটির অপেক্ষায় জেগে থাকার কথা বলা হয় তা আসলে প্রতীকী। কবি বোঝাতে চান যে ধ্বংসস্তূপের মধ্যে জেগে থাকে ভালোবাসা। যুদ্ধ কোনোদিন জীবনকে পরাজিত করতে পারে না। এভাবেই মেয়েটি বেঁচে থাকে অনন্ত অপেক্ষার মধ্যে দিয়ে।

সব চূর্ণ হয়ে গেল, জ্বলে গেল আগুনে — ‘অসুখী একজন’ কবিতা অবলম্বনে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ করো।

  • শুরুর কথা – পাবলো নেরুদার Extravagaria গ্রন্থ থেকে গৃহীত একটি কবিতা ‘অসুখী একজন’ নামে তরজমা করেছেন নবারুণ ভট্টাচার্য। সেই কবিতায় যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে চিরজীবী ভালোবাসার কথা বলা হয়েছে।
  • যুদ্ধের তাণ্ডব – যুদ্ধ কবির কাছে ‘রক্তের এক আগ্নেয়পাহাড়ের মতো’। শিশুহত্যা, নিরাশ্রয়তা যুদ্ধের ভয়াবহ রূপকে স্পষ্ট করে দেয়। মারণ যুদ্ধের স্পর্শে ছারখার হয়ে যায় পৃথিবী।
  • ধ্বংসস্তূপ – প্রলয়ের মুখে দাঁড়িয়ে ধ্বংস হয়ে যায় সব কিছু। যুদ্ধের আগুনে নিঃশেষ হয়ে যায় চারপাশ। মন্দিরের ভিতরে প্রতিমার সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বরের ঈশ্বরত্বও ধ্বংস হয়। যুদ্ধের ধ্বংসলীলায় লুপ্ত হয়ে যায় কবির সমস্ত স্মৃতি। তাঁর ফেলে আসা সুন্দর বাড়ি, বারান্দা, ঝুলন্ত বিছানা, গোলাপি গাছ, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ ইত্যাদি যাবতীয় স্মৃতিচিহ্ন, সবই চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়।
  • মানবিক বিপর্যয় – যুদ্ধ শুধু আর্থিক ক্ষতি বা জীবনহানি নয়, যুদ্ধ ডেকে আনে মানবিক বিপর্যয়ও। মানুষের স্মৃতির সঞ্চয়কে সে শূন্য করে দেয়। যেসব জিনিসকে আশ্রয় করে অনুভূতির বিস্তার ঘটে সেগুলি যুদ্ধের তাণ্ডবে বিপর্যস্ত হয়।
  • আবেগ – ঘরছাড়া একজন বিপ্লবীর মধ্যেও ফেলে আসা দিনের জন্য যে আবেগ কাজ করে, তা এই গোপন দীর্ঘশ্বাসের মধ্যে স্পষ্ট হয়ে যায়।

সব চূর্ণ হয়ে গেল, জ্বলে গেল আগুনে। — ‘সব’ বলতে কী বোঝানো হয়েছে? তা কীভাবে আগুনে জ্বলে যায় আলোচনা করো।

সব-এর অর্থ – ‘অসুখী একজন’ কবিতা কবি তাঁর প্রিয় যে বাড়িটিতে থাকতেন সেটি চূর্ণ হয়ে গেল। সেই বারান্দা যার ঝুলন্ত বিছানায় তিনি ঘুমিয়ে থাকতেন সেটিও ধ্বংস হয়ে গেল। চূর্ণ হয়ে গেল প্রিয় গোলাপি গাছ, যার পাতা ছড়ানো করতলের মতো, চিমনি, প্রাচীন জলতরঙ্গ। ‘সব’ শব্দটির দ্বারা এইসব কিছু চূর্ণ হয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়েছে।

আগুনে যেভাবে জ্বলে যায় – বিপ্লবীর পথ-চলা সংগ্রামের দুর্গম পথে। তাই যুদ্ধ সেখানে অনিবার্য। যুদ্ধ আসে রক্তের আগ্নেয়পাহাড়ের মতো। অর্থাৎ ধ্বংস আর রক্তাক্ততাই যুদ্ধের একমাত্র ফল। কবির মতে সমস্ত সমতলভূমিতে ধরে যায় আগুন। সে আগুন অনেক কিছুকেই ধ্বংস করে। ধ্যানমগ্ন দেবতারা চূর্ণ হন। মানুষের আশ্রয় আর অবলম্বন হিসেবে সেটি আর গ্রাহ্য হয় না। অর্থাৎ আগুন লাগে মানুষের দীর্ঘদিনের চিরাচরিত বিশ্বাসেও। তার ফলেই যুদ্ধের আগুনে ছাই হয়ে যায় সমস্ত স্মৃতিচিহ্ন। বিপ্লবীর যা কিছু প্রিয় এবং একান্তভাবেই নিজস্ব, সেসবই চূর্ণ হয়ে জ্বলে যায়। এই যুদ্ধ যেন এভাবেই ধ্বংসকে নিশ্চিত করে দিয়ে যায়। আগুনের সর্বগ্রাসী তাণ্ডবের চিহ্ন হিসেবে পড়ে থাকে কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা ইত্যাদি। এভাবেই সবকিছু আগুনে পুড়ে নিঃশেষ হয়ে যায়।

যেখানে ছিল শহর/সেখানে ছড়িয়ে রইল কাঠকয়লা। — ‘অসুখী একজন’ কবিতা অবলম্বনে শহরের এই পরিণতি কীভাবে হল লেখো।

  • কথামুখ – যুদ্ধ মানেই ধ্বংস আর রক্তাক্ততা। পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতাতেও শিশু আর বাড়িদের খুন হওয়ার ছবি যুদ্ধের ভয়াবহ চরিত্রকেই তুলে ধরে।
  • যুদ্ধের তাণ্ডব – যুদ্ধ এসেছিল রক্তের আগ্নেয় পাহাড়ের মতো। সমস্ত সমতল জুড়ে আগুন ধরে গেল। আর তার আগ্রাসনে পুড়ে গেল সবকিছু। শিশুমৃত্যু ঘটল, মানুষের বাসস্থান ধ্বংস হল, ছারখার হয়েগেল সাজানো পৃথিবী। মন্দির থেকে টুকরো টুকরো হয়ে ছিটকে পড়ল শান্ত হলুদ দেবতার মূর্তি। তারাও আর স্বপ্ন দেখতে পারল না। অর্থাৎ যুদ্ধের আগুনে যেন পুড়ে গেল মানুষের ঈশ্বরবিশ্বাসও। অথচ এরাই হাজার হাজার বছর ধরে শান্তির প্রতীক হয়ে মন্দিরে অধিষ্ঠিত হয়েছিল। যুদ্ধের আগুনে পুড়ে গেল কবির ফেলে আসা সাধের বাড়িঘর, বারান্দায় টাঙানো ঝুলন্ত বিছানা, বাগান, চিমনি আর প্রাচীন জলতরঙ্গ।
  • স্মৃতিচিহ্ন – যেখানে শহর ছিল সেখানে পড়ে থাকল শহরের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে কিছু কাঠকয়লা আর দোমড়ানো লোহা। ইতস্তত ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকল পাথরের মূর্তির বীভৎস মাথা।
  • সাক্ষী হয়ে থাকা – জমাট রক্তের কালো দাগ হত্যালীলা এবং ধ্বংসস্তূপের সাক্ষী হয়ে থেকে গেল।

আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়। — এই অপেক্ষার তাৎপর্য সমগ্র কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো।

অথবা, আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়। — অপেক্ষমান এই নারীর মধ্যে দিয়ে কবি মানবীর ভালোবাসার যে রূপটিকে ফুটিয়ে তুলেছেন তা পাঠ্য কবিতা অবলম্বনে আলোচনা করো।

  • কথামুখ – পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ভালোবাসার বিস্তারের কথা বলেছেন।
  • কবির চলে যাওয়া – মুক্তির আহ্বানে সাড়া দিয়ে একজন বিপ্লবীকে তার সংসার, পরিজনকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হয়।
  • প্রিয়তমা – কবির একান্ত প্রিয় মানুষ এই বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারে না। চলে তার অপেক্ষা। সপ্তাহ শেষ হয়ে বছর চলে যায়, প্রতীক্ষার অবসান হয় না।
  • যুদ্ধের তাণ্ডব – যুদ্ধ শুরু হয়। সাজানো শহর ধ্বংসস্তূপে রূপান্তরিত হয়। মানুষ নিরাশ্রয় হয়, শিশুহত্যার মতো নারকীয় ঘটনা ঘটে। ভেঙে পড়ে মন্দিরের প্রতিমা।
  • ধ্বংসস্তূপ – যে বিপ্লবী যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়েছিল তার স্মৃতিচিহ্নগুলিও ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংস হয়ে যায় কথকের সুন্দর বাড়ি, বারান্দার ঝুলন্ত বিছানা ইত্যাদি। শহর হয়ে ওঠে কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা আর পাথরের মূর্তির এক ধ্বংসস্তূপ। রক্তের কালো দাগ নিশ্চিত করে দেয় ধ্বংসের উন্মত্ত চেহারাকে।
  • অন্তহীন অপেক্ষা – কিন্তু পাথরের উপরে ফুলের মতোই ধ্বংসস্তূপের উপরে জেগে থাকে ভালোবাসা। কবির প্রিয়তমা মেয়েটির অপেক্ষার শেষ হয় না।
  • তবুও – কেন-না যুদ্ধ সম্পত্তি বিনষ্ট করতে পারে, জীবনহানি ঘটাতে পারে, কিন্তু ভালোবাসার অবসান ঘটাতে পারে না।

আর সেই মেয়েটি আমার অপেক্ষায়। — ‘কোন্’ মেয়েটি? তার অপেক্ষায় কার কীভাবে কেটেছে লেখো।

মেয়েটির পরিচয় – ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি যুদ্ধক্ষেত্রে যাওয়ার পরে যে মেয়েটি তাঁর জন্য অপেক্ষা করেছিল, এখানে সেই মেয়েটির কথাই বলা হয়েছে।

অপেক্ষায় কাটানো সময়-

  • কথামুখ – পাবলো নেরুদার ‘অসুখী একজন’ কবিতায় কবি যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ভালোবাসার বিস্তারের কথা বলেছেন।
  • কবির চলে যাওয়া – মুক্তির আহ্বানে সাড়া দিয়ে একজন বিপ্লবীকে তার সংসার, পরিজনকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হয়।
  • প্রিয়তমা – কবির একান্ত প্রিয় মানুষ এই বিচ্ছেদ মেনে নিতে পারে না। চলে তার অপেক্ষা। সপ্তাহ শেষ হয়ে বছর চলে যায়, প্রতীক্ষার অবসান হয় না।
  • যুদ্ধের তাণ্ডব – যুদ্ধ শুরু হয়। সাজানো শহর ধ্বংসস্তূপে রূপান্তরিত হয়। মানুষ নিরাশ্রয় হয়, শিশুহত্যার মতো নারকীয় ঘটনা ঘটে। ভেঙে পড়ে মন্দিরের প্রতিমা।
  • ধ্বংসস্তূপ – যে বিপ্লবী যুদ্ধক্ষেত্রে গিয়েছিল তার স্মৃতিচিহ্নগুলিও ধ্বংস হয়ে যায়। ধ্বংস হয়ে যায় কথকের সুন্দর বাড়ি, বারান্দার ঝুলন্ত বিছানা ইত্যাদি। শহর হয়ে ওঠে কাঠকয়লা, দোমড়ানো লোহা আর পাথরের মূর্তির এক ধ্বংসস্তূপ। রক্তের কালো দাগ নিশ্চিত করে দেয় ধ্বংসের উন্মত্ত চেহারাকে।
  • অন্তহীন অপেক্ষা – কিন্তু পাথরের উপরে ফুলের মতোই ধ্বংসস্তূপের উপরে জেগে থাকে ভালোবাসা। কবির প্রিয়তমা মেয়েটির অপেক্ষার শেষ হয় না।
  • তবুও – কেন-না যুদ্ধ সম্পত্তি বিনষ্ট করতে পারে, জীবনহানি ঘটাতে পারে, কিন্তু ভালোবাসার অবসান ঘটাতে পারে না।

কবিতাটি যুদ্ধের ভয়াবহতা ও তার প্রভাব সম্পর্কে আমাদের সচেতন করে তোলে। এটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, যুদ্ধ শুধুমাত্র ধ্বংসই বয়ে আনে। এটি মানুষের জীবনকে নিঃস্ব করে তোলে।

Share via:

মন্তব্য করুন