দশম শ্রেণি – বাংলা – পথের দাবী – অতিসংক্ষিপ্ত উত্তরভিত্তিক প্রশ্ন ও উত্তর

বর্মা অয়েল কোম্পানির তেলের খনির কারখানায় মিস্ত্রিরা কাজ করত। সেখানকার জল-হাওয়া তাদের সহ্য হচ্ছিল না। তাই তারা চাকরির সন্ধানে রেঙ্গুনে চলে এসেছিল।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে, জগদীশবাবু পুলিশ স্টেশনে বসে থাকা বাঙালিদের টিনের তোরঙ্গ এবং ছোট-বড় পুঁটুলি খুলে তদন্ত করছিলেন।

পথের দাবী রচনাংশে, পুলিশ স্টেশনের একটি ঘরে একজনকে রাজনৈতিক সন্দেহভাজন সব্যসাচী মল্লিক সন্দেহে আটক রাখা হয়েছিল। সে তার নাম বলেছিল গিরীশ মহাপাত্র।

রাজনৈতিক দিক থেকে সন্দেহভাজন এবং রাষ্ট্রের পক্ষে বিপজ্জনক ব্যক্তিকেই পলিটিকাল সাসপেক্ট বলা হয়। আলোচ্য ‘পথের দাবী’ রচনাংশে, বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিক ইংরেজ সরকারের চোখে পলিটিকাল সাসপেক্ট ছিলেন।

সব্যসাচীর গভীর জলাশয়ের মতো দৃষ্টির সামনে কোনো রকম খেলা বা চালাকি চলবে না। তার চোখের গভীরতায় এমন এক ক্ষীণ প্রাণশক্তি লুকানো ছিল যে, মৃত্যুও সেখানে প্রবেশ করতে ভয় পায়।

পথের দাবী রচনাংশে নিমাইবাবু গিরীশ মহাপাত্রের বেশভূষার বাহার ও পারিপাট্যের প্রতি অপূর্বর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন।

গিরীশ মহাপাত্রকে দেখে নিমাইবাবু বলেছিলেন, বেশভূষা দেখে মনে হচ্ছে, লোকটির স্বাস্থ্য গেলেও তার শখ ষোলো আনাই বজায় আছে।

পথের দাবী রচনাংশে নিমাইবাবু পলিটিকাল সাসপেক্ট ব্যক্তিটির নাম জিজ্ঞাসা করলে, সে তার নাম বলেছিল গিরীশ মহাপাত্র।

গিরীশ মহাপাত্রের ট্যাঁক থেকে ১টি টাকা আর গণ্ডা-ছয়েক পয়সা এবং পকেট থেকে ১টি লোহার কম্পাস, ১টি কাঠের ফুটরুল, কয়েকটি বিড়ি, ১টি দেশলাই ও গাঁজার ১টি কলকে বার হয়েছিল।

গিরীশ মহাপাত্রকে গাঁজা খাওয়ার প্রসঙ্গে জিজ্ঞাসা করা হলে সে বলে, সে নিজে গাঁজা খায় না। কারও কাজে লাগতে পারে এই ভেবে সে কুড়িয়ে পাওয়া কলকে নিজের কাছে রেখেছে।

গিরীশ মহাপাত্র কতটা সদাশয় ব্যক্তি যে অন্যের কাজে লাগবে এই ভাবনায় গাঁজার কলকে কুড়িয়ে পকেটে রেখেছেন — নিমাইবাবু হেসে এ কথাই বলতে চেয়েছিলেন।

পুলিশ স্টেশন থেকে বেরিয়ে অপূর্ব দেখল, গিরীশ মহাপাত্র ১টি ভাঙা টিনের তোরঙ্গ আর বিছানার বান্ডিল নিয়ে রাস্তা ধরে চলে যাচ্ছে।

গিরীশ মহাপাত্রের পকেট থেকে ১টি গাঁজার কলকে পাওয়া গিয়েছিল, তাই নিমাইবাবু তাকে এই প্রশ্নটি করেছিলেন।

বুড়ো মানুষ অর্থাৎ নিমাইবাবু গিরীশ মহাপাত্রকে বলেছিলেন যে, যদিও সে অস্বীকার করছে, তার মধ্যে গাঁজা খাওয়ার চিহ্ন স্পষ্ট। তবে তার জীর্ণ শরীরের কথা ভেবে গাঁজা খাওয়া উচিত নয়।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে ভারতের মুক্তিসংগ্রামের অন্যতম নেতা ও বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিকের বর্মায় আসার কথা বলা হয়েছে।

গিরীশ মহাপাত্র মাথায় লেবুর তেল মেখেছিল, যার গন্ধে থানার সমস্ত লোকের মাথা ধরার উপক্রম হয়। জগদীশবাবু বড়োবাবুকে এ-কথা বললে, বড়োবাবু হেসে ওঠেন।

বক্তা জগদীশবাবু আলোচ্য উক্তিটি করেছিলেন কারণ গিরীশ মহাপাত্রের মাথার চুলে লাগানো লেবুর তেলের গন্ধে থানাসুদ্ধ লোকের মাথা ধরার উপক্রম হয়েছিল। তাঁর ধারণায় এমন লোক সব্যসাচী মল্লিক হতে পারেন না।

গিরীশ মহাপাত্রের পকেটে যে ‘বস্তুটি’ ছিল তা হল গাঁজার কলকে।

নিজের বাসায় ফেরার পর অপূর্বর প্রতিদিনের নিয়ম মেনে যে কাজকর্ম তা বাধা পেল না ঠিকই, তবে সে অদেখা, অদৃষ্ট, অপরিচিত রাজবিদ্রোহীর চিন্তায় মগ্ন রইল।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্বকে অন্যমনস্ক থাকতে দেখেই তলওয়ারকর এ প্রশ্ন করেছিল।

অপূর্বকে বাড়ি ফিরে অত্যন্ত অন্যমনস্ক দেখে তলওয়ারকর জিজ্ঞাসা করেছিল সে তার বাড়ি থেকে কোনো চিঠি পেয়েছে কি না এবং তার বাড়ির সবাই ভালো আছে কি না।

অপূর্বর সঙ্গে তার মা বা কোনো আত্মীয়া না থাকায়, রামদাসের স্ত্রীর অনুরোধে অপূর্ব রামদাসদের সঙ্গেই জলযোগ করত।

যতদিন অপূর্বর মা বা কোনো আত্মীয় রেঙ্গুনে এসে উপযুক্ত ব্যবস্থা না করেন, ততদিন রামদাসের স্ত্রীর হাতে তৈরি সামান্য খাবার গ্রহণ করতে হবে — এই অনুরোধে অপূর্ব রাজি হয়েছিল।

রামদাসের স্ত্রীর হাতে তৈরি খাবার অফিসের একজন ব্রাহ্মণ পেয়াদা অপূর্বর জন্য নিয়ে আসত।

অফিসের ব্রাহ্মণ পেয়াদা অপূর্বর জন্য নিস্তব্ধ ঘরে খাবার সাজিয়ে রাখার পর, খেতে বসে অপূর্ব তার বাড়িতে চুরির ঘটনা রামদাসকে জানায়।

চুরির পর ক্রিশ্চান মেয়েটি অবশিষ্ট জিনিসপত্র গুছিয়ে দেয় এবং কী কী চুরি হয়েছে আর কী হয়নি তার একটি তালিকা তৈরি করে।

অপূর্বর ঘরে চুরির ঘটনায় অপূর্ব এবং ক্রিশ্চান মেয়েটি অনুমান করেছিল যে, তেওয়ারি হয়তো নিজেই এই কাজ করেছে, অথবা চুরিতে সাহায্য করেছে।

তেওয়ারি বর্মা নাচ দেখতে ফয়ারে গিয়েছিল, আর সেই সময় অপূর্বর ঘরে চুরি হয়েছিল।

থানায় অভিযোগ জানাতে গিয়ে অপূর্ব দেখল পুলিশরা পলিটিক্যাল সাসপেক্ট সব্যসাচী মল্লিক ভেবে একজনকে আটক করেছে, যার অদ্ভুত সাজপোশাক নিয়ে পুলিশ স্টেশনে হাসাহাসি চলছিল।

অপূর্বর প্রতিবাদের ফলে এক সাহেব স্টেশনমাস্টার তাকে অত্যন্ত খারাপভাবে ব্যবহার করে এবং স্টেশন থেকে কুকুরের মতো তাড়িয়ে দেয়।

অপূর্বর প্রতিবাদের ফলে এক সাহেব স্টেশনমাস্টার তাকে অত্যন্ত খারাপভাবে ব্যবহার করে এবং স্টেশন থেকে কুকুরের মতো তাড়িয়ে দেয়।

পরাধীন ভারতবর্ষে বিদেশি সাহেবদের হাতে দেশীয় মানুষদের অপমানিত ও অত্যাচারিত হওয়া প্রায় নিত্য ঘটনায় পরিণত হয়েছিল।

অপূর্বর মুখে ফিরিঙ্গিদের দ্বারা তাকে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দেওয়ার এবং স্টেশনমাস্টারের হাতে অপমানিত ও লাঞ্ছিত হওয়ার কথা শুনে রামদাসের মুখ রাগে আরক্ত হয়ে উঠল।

সাহেবদের কাছে অপূর্বর লাঞ্ছিত হওয়া সত্ত্বেও হিন্দুস্থানের লোকেরা কেউ কোনো প্রতিবাদ করেনি, বরং লাথির চোটে অপূর্বর হাড়-পাঁজরা ভাঙেনি শুনে খুশি হয়েছিল। এই কথায় রামদাসের চোখ ছলছল করে উঠল।

নিমাইবাবু ছিলেন অপূর্বর বাবার বন্ধু এবং এই সূত্রে তিনি ছিলেন অপূর্বর আত্মীয়। অপূর্বর বাবাই তাঁকে চাকরিটা করে দিয়েছিলেন।

পথের দাবী রচনাংশে যে ঘটনার কথা বলা হয়েছে, তা হলো — একটি স্টেশনে অপূর্বকে বিনাদোষে কিছু ফিরিঙ্গি ছেলে লাথি মেরে প্ল্যাটফর্ম থেকে বের করে দিয়েছিল। অপূর্ব তার প্রতিবাদ করলেও কোনো লাভ হয়নি।

শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ‘পথের দাবী’ রচনাংশে অপূর্বর ঘরে চুরি হয়েছিল। তাই অপূর্ব পুলিশকে খবর দিতে গিয়েছিল।

পথের দাবী রচনাংশে অপূর্ব অনুমান করেছিল যে তেওয়ারিই তার ঘরে চুরি করেছে বা চুরিতে সাহায্য করেছে।

অপূর্ব রেঙ্গুনে এসে ভারতীয় বিপ্লবী সব্যসাচী মল্লিকের প্রশংসা করেছিল। বক্তা রামদাস মনে করেছিল, সব্যসাচীর কথা বললে অপূর্ব ইংরেজদের রোষে পড়তে পারে।

প্ল্যাটফর্ম থেকে বিনা দোষে ফিরিঙ্গি যুবকরা অপূর্বকে লাথি মেরে বার করে দেয় আর সেখানে উপস্থিত দেশি লোকেরাও এই অন্যায়ের প্রতিবাদ করে না। এই কথা মনে করেই অপূর্বর এই মনোবেদনা।

বড়োসাহেব অপূর্বর কাছে এসে বলেছিলেন ভামোর অফিসে বিশৃঙ্খল অবস্থা। ম্যানডালে, শোএবো, মিকথিলা এবং প্রোম সব অফিসেই গোলযোগ হচ্ছে। তাই অপূর্ব যেন সব অফিসগুলো একবার নিজে গিয়ে দেখে আসে।

ভামো নগরের উদ্দেশে যাত্রায় অপূর্বর সঙ্গে ছিল আরদালি এবং অফিসের একজন হিন্দুস্থানি ব্রাহ্মণ পেয়াদা।

অপূর্ব গিরীশ মহাপাত্রকে দেখে জিজ্ঞাসা করল, সে তাকে চিনতে পারছে কি না এবং সে কোথায় যাচ্ছে।

পথের দাবী রচনাংশে গিরীশ মহাপাত্রের সঙ্গে অপূর্বর দ্বিতীয়বার দেখা হয়েছিল রেলস্টেশনে।

অপূর্ব যখন দ্বিতীয়বার গিরীশ মহাপাত্রকে দেখল, তখন তার বাহারি জামা থেকে শুরু করে পাম্পশু সবই একরকম ছিল। শুধু বাঘ-আঁকা রুমালটা বুকপকেটের বদলে গলায় জড়ানো ছিল।

অপূর্ব গিরীশ মহাপাত্রকে বলেছিল, সে পুলিশের লোক নয়। সেদিন শুধু তামাশা দেখার জন্য সে পুলিশ স্টেশনে গিয়েছিল।

রাতে অপূর্ব শোয়ার পরে তিনবার পুলিশের লোকেরা তার নাম-ঠিকানা লিখে নেওয়ার জন্য তাকে জাগিয়ে বিরক্ত করায় অপূর্বর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটেছিল।

ভামো যাত্রাপথে একাধিকবার পুলিশের লোক অপূর্বর ঘুম ভেঙে নাম-ঠিকানা লিখে নিতে আসায় অপূর্ব বিরক্ত হয়েছিল।

ট্রেনে বারবার ঘুম ভাঙিয়ে নাম-ঠিকানা জিজ্ঞাসা করায় অপূর্ব বিরক্ত হয়ে প্রতিবাদ করেছিল। তখন তাকে কটুকণ্ঠে বলা হয়েছিল, যেহেতু সে ইউরোপীয় নয়, তাই এসব তাকে সহ্য করতেই হবে।

গিরীশ মহাপাত্র বলেছিল ললাটের লেখা কখনও খণ্ডন করা যায় না। অপূর্বও এই কথা বিশ্বাস করে বলে জানায়।

অপূর্ব ভেবেছিল যে, প্রথম শ্রেণির যাত্রী বলে কেউ তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাবে না। কয়েকটি স্টেশন পরেই তার এই ভাবনা ভুল প্রমাণিত হয়।